ঢাকা ০৯:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গান স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৯:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮
  • ৩৪৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর। একাত্তরের এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সম্মিলিত বাহিনী চারদিক থেকে এগিয়ে চলছে। রণপদ্ধতিতে ব্যাপক সুফল পেতে থাকে মিত্র বাহিনী। আর ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেকশ বিভিন্ন ভাষায় হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের বাণী ও লিফলেট করে আকাশে ছড়িয়ে দেন। পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়ে এই আশ্বাস দেওয়া হয় যে, আত্মসমর্পণ করলে তাদের সঙ্গে জেনেভা কনভেনশনের রীতি অনুযায়ী সম্মানজনক ব্যবহার করা হবে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক শাসকেরা কিছুতেই আত্মসমর্পণের দিকে না গিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বাংলাদেশে অবস্থানরত সেনাসদস্যদের নির্দেশ দেয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকে। প্রতিটি ক্ষেত্রে হানাদার বাহিনীকে একের পর এক পরাজিত করতে থাকে মুক্তিবাহিনী। হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর মুক্তিসেনারা আর্টিলারি আক্রমণ চালিয়ে শেষ রাতের দিকে তাদের আত্মসমর্পণ করাতে সক্ষম হয়। রাতব্যাপী যুদ্ধে ২৬ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। হানাদার বাহিনীর কতিপয় সেনা বিমানবন্দরের ঘাঁটি ত্যাগ করে শেষ রাতে কুমিল্লার বরুড়ার দিকে এবং সেনানিবাসে ফিরে যায়। বিমানবন্দরের ঘাঁটিতে ধরা পড়া কতিপয় পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে।

১৯৭১ সালের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মিরসরাই। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মিরসরাই ছেড়ে পালিয়ে যায়। মিরসরাইয়ের বিজয় উল্লাসে সেদিন মাতোয়ারা হয়েছিল সর্বস্তরের মানুষ। মুক্তিযোদ্ধারা মিরসরাই পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ময়দানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে মিরসরাইয়ের বিজয় উদ্যাপন করেন সেদিন।

এদিন কুমিল্লা, চআদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া হানাদারমুক্ত হয়। রাস্তায় নেমে আসে জনতার ঢল। কুমিল্লার আপামর জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মুক্তির উল্লাসে বরণ করে নেয়। বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা মিত্র বাহিনী জনতার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায় কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ১৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গান স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের আগুনঝরা দিনগুলোর আজকের এই দিনে হানাদারমুক্ত হয় ময়মনসিংহের গৌরীপুর। পাকিস্তান বাহিনীর এই নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে, নিজ মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার প্রত্যয়ে গৌরীপুরের মুক্তিকামী মানুষ দলে দলে সংগঠিত হতে থাকে।

মুক্তিকামী মানুষেরা গৌরীপুর ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে হানাদার বাহিনীর ওপর একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে। গেরিলা হামলার মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড মেরে ধ্বংস করে গৌরীপুরের রেলপথ, সেতু, গৌরীপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর যোগাযোগব্যবস্থা চরম বাধাগ্রস্ত হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গান স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন

আপডেট টাইম : ১২:৫৯:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর। একাত্তরের এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সম্মিলিত বাহিনী চারদিক থেকে এগিয়ে চলছে। রণপদ্ধতিতে ব্যাপক সুফল পেতে থাকে মিত্র বাহিনী। আর ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেকশ বিভিন্ন ভাষায় হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের বাণী ও লিফলেট করে আকাশে ছড়িয়ে দেন। পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়ে এই আশ্বাস দেওয়া হয় যে, আত্মসমর্পণ করলে তাদের সঙ্গে জেনেভা কনভেনশনের রীতি অনুযায়ী সম্মানজনক ব্যবহার করা হবে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক শাসকেরা কিছুতেই আত্মসমর্পণের দিকে না গিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বাংলাদেশে অবস্থানরত সেনাসদস্যদের নির্দেশ দেয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকে। প্রতিটি ক্ষেত্রে হানাদার বাহিনীকে একের পর এক পরাজিত করতে থাকে মুক্তিবাহিনী। হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর মুক্তিসেনারা আর্টিলারি আক্রমণ চালিয়ে শেষ রাতের দিকে তাদের আত্মসমর্পণ করাতে সক্ষম হয়। রাতব্যাপী যুদ্ধে ২৬ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। হানাদার বাহিনীর কতিপয় সেনা বিমানবন্দরের ঘাঁটি ত্যাগ করে শেষ রাতে কুমিল্লার বরুড়ার দিকে এবং সেনানিবাসে ফিরে যায়। বিমানবন্দরের ঘাঁটিতে ধরা পড়া কতিপয় পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে।

১৯৭১ সালের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মিরসরাই। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মিরসরাই ছেড়ে পালিয়ে যায়। মিরসরাইয়ের বিজয় উল্লাসে সেদিন মাতোয়ারা হয়েছিল সর্বস্তরের মানুষ। মুক্তিযোদ্ধারা মিরসরাই পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ময়দানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে মিরসরাইয়ের বিজয় উদ্যাপন করেন সেদিন।

এদিন কুমিল্লা, চআদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া হানাদারমুক্ত হয়। রাস্তায় নেমে আসে জনতার ঢল। কুমিল্লার আপামর জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মুক্তির উল্লাসে বরণ করে নেয়। বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা মিত্র বাহিনী জনতার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায় কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ১৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গান স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের আগুনঝরা দিনগুলোর আজকের এই দিনে হানাদারমুক্ত হয় ময়মনসিংহের গৌরীপুর। পাকিস্তান বাহিনীর এই নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে, নিজ মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার প্রত্যয়ে গৌরীপুরের মুক্তিকামী মানুষ দলে দলে সংগঠিত হতে থাকে।

মুক্তিকামী মানুষেরা গৌরীপুর ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে হানাদার বাহিনীর ওপর একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে। গেরিলা হামলার মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড মেরে ধ্বংস করে গৌরীপুরের রেলপথ, সেতু, গৌরীপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর যোগাযোগব্যবস্থা চরম বাধাগ্রস্ত হয়।