ঢাকা ০৮:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবা-মায়ের প্রতি খেদমতের গুরুত্ব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৯:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮
  • ৩৩৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হিসেবে আমাদের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো আল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা এবং প্রিয়নবী (সা.) কে ভালোবাসা ও আনুগত্য করা। তার পরপরই আমাদের করণীয় হলো বাবা-মায়ের প্রতি সুন্দর ব্যবহার করা, তাদের অনুগত থাকা, কোনোভাবেই তাদের মনে কষ্ট না দেওয়া। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে শরিক করো না এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সূরা নিসা : ৩৬)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর আমি নির্দেশ দিয়েছি মানুষকে, তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার জন্য।’ (সূরা আহকাফ : ১৫)। আরও এরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি যে, তুমি আমার এবং তোমার বাবা-মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমার কাছেই তো ফিরে আসতে হবে।’ (সূরা লুকমান : ১৪)। হাদিসেও বাবা-মায়ের খেদমত করা এবং তাদের প্রতির গভীর আনুগত্য প্রকাশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বাবা-মা হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম। অর্থাৎ তুমি ইচ্ছা করলে তাদের খেদমত করে উত্তম আচরণের মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করতে পার; আবার ইচ্ছা করলে তাদের অবাধ্য হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করতে পার।’ (ইবনে মাজাহ)।

বাবা-মায়ের খেদমত না করার কারণে যারা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হলো, জাহান্নামের বেড়ি গলে পরল, প্রিয়নবী (সা.) তাদের লানত করেছেন। হাদিসে এসেছে ‘একদা জুমার দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বরের প্রথম ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! তারপর তৃতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! এরপর খুতবা দিলেন ও নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আজ যা দেখলাম তা এর আগে কখনও দেখিনি। আপনি একেক ধাপে পা রেখে, আমিন! আমিন! আমিন! বললেন; এর রহস্য কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, জিবরাইল (আ.) আমাকে বলেছেন, আমি তিনটি দোয়া করব আপনি আমিন বলুন। তাই আমি তার দোয়ার উত্তরে আমিন বলেছি। এ তিনটি দোয়ার মধ্যে একটি হলো, যে বাবা-মা একজনকে বা উভয়কে পেল; কিন্তু জাহান্নাম থেকে মুক্তি নিয়ে জান্নাত নিশ্চিত করতে পারল না তার জন্য ধ্বংস! (মুসলিম)।

বাবা-মায়ের অবাধ্যতার জন্য যেমন রয়েছে অভিসম্পাত, তেমনি তাদের আনুগত্যের জন্য রয়েছে পুরস্কারের ঘোষণা। শুধু তা-ই নয়, তাদের প্রতি নেক নজরে তাকালেও হজের সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যখন কোনো অনুগত সন্তান স্বীয় বাবা-মায়ের প্রতি অনুগ্রহের নজরে দৃষ্টিপাত করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন।’ (বায়হাকি)। বাবা-মায়ের জীবদ্দশায় যেভাবে তাদের সেবা করা জরুরি, তেমনি তাদের ইন্তেকালের পরও তাদের জন্য দোয়া করা দরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তুমি বলো, হে আমার প্রতিপালক! আপনি তাদের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৪)।

বনু সালিমা গোত্রের এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) কে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার বাবা-মায়ের ইন্তেকালের পরও কি তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের কোনো দায়িত্ব অবশিষ্ট আছে? তখন নবী করিম (সা.) বললেন, হ্যাঁ, আছে। তা হলো ১. তাদের জন্য দোয়া করা, ২. তাদের গোনাহ ক্ষমার জন্য তওবা ইস্তিগফার করা, ৩. তাদের শরিয়তসম্মত অসিয়তগুলো আদায় করা, ৪. তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, ৫. তাদের বন্ধুবান্ধবদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। এগুলো বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরও তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের শামিল। (আবু দাউদ)।

বাবা-মায়ের ইসলামি শরিয়তবিরোধী আদেশ ব্যতীত সবকিছু মানতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যদি বাবা-মা তোমাকে চাপ দেয় আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করার জন্য, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মানবে না। তবে পার্থিব জীবনে তাদের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলবে।’ (সূরা লোকমান : ১৫)। মুসআব বিন সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, আমার মা একদিন আমাকে কসম দিয়ে বলেন, আল্লাহ কি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দেননি? ‘অতএব আল্লাহর কসম! আমি কিছুই খাব না ও পান করব না, যতক্ষণ না মৃত্যুবরণ করব অথবা তুমি মুহাম্মদ (সা.) এর সঙ্গে কুফরি করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)।

এভাবে তিন দিন পর যখন মায়ের মৃত্যুর উপক্রম হলো, তখন সূরা আনকাবুতে এ আয়াত নাজিল হলো, ‘আর আমরা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি যেন তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে। তবে যদি তারা তোমাকে এমন কিছুর সঙ্গে শরিক করার জন্য চাপ দেয়, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে তুমি তাদের কথা মান্য করো না। আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর আমি তোমাদের জানিয়ে দেব যেসব কাজ তোমরা করতে।’ (সূরা আনকাবুত : ৮)।  বাবা-মা অসুস্থ হলে তাদের সেবা করা, তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা, তাদের মনে কষ্ট না দেওয়া, তাদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করা এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে বাবা-মায়ের বাধ্য, অনুগত সন্তান হিসেবে তাদের খেদমতে আমাদের কবুল করে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে দিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বাবা-মায়ের প্রতি খেদমতের গুরুত্ব

আপডেট টাইম : ১১:৪৯:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হিসেবে আমাদের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো আল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা এবং প্রিয়নবী (সা.) কে ভালোবাসা ও আনুগত্য করা। তার পরপরই আমাদের করণীয় হলো বাবা-মায়ের প্রতি সুন্দর ব্যবহার করা, তাদের অনুগত থাকা, কোনোভাবেই তাদের মনে কষ্ট না দেওয়া। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে শরিক করো না এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সূরা নিসা : ৩৬)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর আমি নির্দেশ দিয়েছি মানুষকে, তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার জন্য।’ (সূরা আহকাফ : ১৫)। আরও এরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি যে, তুমি আমার এবং তোমার বাবা-মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমার কাছেই তো ফিরে আসতে হবে।’ (সূরা লুকমান : ১৪)। হাদিসেও বাবা-মায়ের খেদমত করা এবং তাদের প্রতির গভীর আনুগত্য প্রকাশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বাবা-মা হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম। অর্থাৎ তুমি ইচ্ছা করলে তাদের খেদমত করে উত্তম আচরণের মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করতে পার; আবার ইচ্ছা করলে তাদের অবাধ্য হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করতে পার।’ (ইবনে মাজাহ)।

বাবা-মায়ের খেদমত না করার কারণে যারা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হলো, জাহান্নামের বেড়ি গলে পরল, প্রিয়নবী (সা.) তাদের লানত করেছেন। হাদিসে এসেছে ‘একদা জুমার দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বরের প্রথম ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! তারপর তৃতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! এরপর খুতবা দিলেন ও নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আজ যা দেখলাম তা এর আগে কখনও দেখিনি। আপনি একেক ধাপে পা রেখে, আমিন! আমিন! আমিন! বললেন; এর রহস্য কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, জিবরাইল (আ.) আমাকে বলেছেন, আমি তিনটি দোয়া করব আপনি আমিন বলুন। তাই আমি তার দোয়ার উত্তরে আমিন বলেছি। এ তিনটি দোয়ার মধ্যে একটি হলো, যে বাবা-মা একজনকে বা উভয়কে পেল; কিন্তু জাহান্নাম থেকে মুক্তি নিয়ে জান্নাত নিশ্চিত করতে পারল না তার জন্য ধ্বংস! (মুসলিম)।

বাবা-মায়ের অবাধ্যতার জন্য যেমন রয়েছে অভিসম্পাত, তেমনি তাদের আনুগত্যের জন্য রয়েছে পুরস্কারের ঘোষণা। শুধু তা-ই নয়, তাদের প্রতি নেক নজরে তাকালেও হজের সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যখন কোনো অনুগত সন্তান স্বীয় বাবা-মায়ের প্রতি অনুগ্রহের নজরে দৃষ্টিপাত করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন।’ (বায়হাকি)। বাবা-মায়ের জীবদ্দশায় যেভাবে তাদের সেবা করা জরুরি, তেমনি তাদের ইন্তেকালের পরও তাদের জন্য দোয়া করা দরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তুমি বলো, হে আমার প্রতিপালক! আপনি তাদের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৪)।

বনু সালিমা গোত্রের এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) কে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার বাবা-মায়ের ইন্তেকালের পরও কি তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের কোনো দায়িত্ব অবশিষ্ট আছে? তখন নবী করিম (সা.) বললেন, হ্যাঁ, আছে। তা হলো ১. তাদের জন্য দোয়া করা, ২. তাদের গোনাহ ক্ষমার জন্য তওবা ইস্তিগফার করা, ৩. তাদের শরিয়তসম্মত অসিয়তগুলো আদায় করা, ৪. তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, ৫. তাদের বন্ধুবান্ধবদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। এগুলো বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরও তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের শামিল। (আবু দাউদ)।

বাবা-মায়ের ইসলামি শরিয়তবিরোধী আদেশ ব্যতীত সবকিছু মানতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যদি বাবা-মা তোমাকে চাপ দেয় আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করার জন্য, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মানবে না। তবে পার্থিব জীবনে তাদের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলবে।’ (সূরা লোকমান : ১৫)। মুসআব বিন সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, আমার মা একদিন আমাকে কসম দিয়ে বলেন, আল্লাহ কি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দেননি? ‘অতএব আল্লাহর কসম! আমি কিছুই খাব না ও পান করব না, যতক্ষণ না মৃত্যুবরণ করব অথবা তুমি মুহাম্মদ (সা.) এর সঙ্গে কুফরি করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)।

এভাবে তিন দিন পর যখন মায়ের মৃত্যুর উপক্রম হলো, তখন সূরা আনকাবুতে এ আয়াত নাজিল হলো, ‘আর আমরা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি যেন তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে। তবে যদি তারা তোমাকে এমন কিছুর সঙ্গে শরিক করার জন্য চাপ দেয়, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে তুমি তাদের কথা মান্য করো না। আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর আমি তোমাদের জানিয়ে দেব যেসব কাজ তোমরা করতে।’ (সূরা আনকাবুত : ৮)।  বাবা-মা অসুস্থ হলে তাদের সেবা করা, তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা, তাদের মনে কষ্ট না দেওয়া, তাদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করা এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে বাবা-মায়ের বাধ্য, অনুগত সন্তান হিসেবে তাদের খেদমতে আমাদের কবুল করে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে দিন।