ঢাকা ০৩:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বনচর, পরিযায়ী পাখি নীল শুমচা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০৮:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮
  • ৩৭৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বনচর, পরিযায়ী পাখি। নজরকাড়া রূপ। ত্রিভুজাকৃতির গড়ন। তুলনামূলক লেজ খাটো। পা লম্বা। চিরসবুজ অরণ্যের বাসিন্দা। বাঁশঝাড় বা লতা গুল্মাদির ভেতর নরম মাটি ঠুকরিয়ে খাবার খোঁজে। ঝরাপাতা উল্টিয়ে পোকামাকড় খায়। বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায়। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। ওড়াওড়ির চেয়ে লাফায় বেশি। খুব ভোরে এবং গোধূলীলগ্নে কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। রাতেও খাবার খোঁজে।

তবে রাতে খুব বেশি চোখে দেখে না। সুর সুমধুর। ডাকে ‘পিউ-হুয়িট পিউ-হুয়িট’ সুরে। সমগ্র বিশ্বে ১০ লাখ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে এদের আবাস। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, মিয়ানমার, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া পর্যন্ত। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা স্থিতিশীল বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত।

পাখির বাংলা নাম: ‘নীল শুমচা’, ইংরেজি নাম: ‘ব্লু পিট্টা’ (Blue Pitta), বৈজ্ঞানিক নাম: Pitta cyanea। এরা ‘আসমানি শুমচা’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ২১-২৩ সেন্টিমিটার। লেজ ৬ সেন্টিমিটার। ওজন ১১০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির কপাল ও মাথার চাঁদির সামনের দিক সবজে-ধূসর। কপালে কালচে সরু ডোরা। মাথার তালু থেকে ঘাড়ের পেছনের দিক সিঁদুর লাল। পিঠ থেকে লেজ পর্যন্ত গাঢ় নীল। ঠোঁটের গোড়া থেকে শুরু করে চোখের ওপর দিয়ে ঘাড়ের পেছন পর্যন্ত চওড়া কালো রেখা চলে গেছে।

ডানার প্রান্ত পালক কালচে। গলায় অস্পষ্ট কালো দাগ। গলার নিচের অংশ হালকা হলুদের ওপর অসংখ্য কালো তিলা। বুকের নিচ থেকে বস্তি প্রদেশ পর্যন্ত নীল-সাদার মিশ্রণের ওপর অসংখ্য কালো তিলা। অপরদিকে স্ত্রী পাখির ঘাড়ের পেছনের পট্টি কালো রঙের। কাঁধ ঢাকনি কালচে-জলপাই রঙের। কোমর নীল। ডানা নীলাভ-জলপাই রঙের। উভয়ের ঠোঁট কালো। চোখ কালচে। পা ও পায়ের পাতা পাটকিলে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের পিঠ কালচে-বাদামি। দেহতলে ঘন ফিকে ডোরা।

প্রধান খাবার: ভূমিজকীট, কেঁচো ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুলাই। অঞ্চলভেদে প্রজনন সময়ের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে মাটিতে অথবা ফার্নে আবৃত গাছের কাণ্ডে। বাসা গোলাকার। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস বা বাঁশপাতা। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৬ দিন। শাবক উড়তে পারে ২০-২৫ দিনে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বনচর, পরিযায়ী পাখি নীল শুমচা

আপডেট টাইম : ০৫:০৮:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বনচর, পরিযায়ী পাখি। নজরকাড়া রূপ। ত্রিভুজাকৃতির গড়ন। তুলনামূলক লেজ খাটো। পা লম্বা। চিরসবুজ অরণ্যের বাসিন্দা। বাঁশঝাড় বা লতা গুল্মাদির ভেতর নরম মাটি ঠুকরিয়ে খাবার খোঁজে। ঝরাপাতা উল্টিয়ে পোকামাকড় খায়। বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায়। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। ওড়াওড়ির চেয়ে লাফায় বেশি। খুব ভোরে এবং গোধূলীলগ্নে কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। রাতেও খাবার খোঁজে।

তবে রাতে খুব বেশি চোখে দেখে না। সুর সুমধুর। ডাকে ‘পিউ-হুয়িট পিউ-হুয়িট’ সুরে। সমগ্র বিশ্বে ১০ লাখ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে এদের আবাস। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, মিয়ানমার, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া পর্যন্ত। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা স্থিতিশীল বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত।

পাখির বাংলা নাম: ‘নীল শুমচা’, ইংরেজি নাম: ‘ব্লু পিট্টা’ (Blue Pitta), বৈজ্ঞানিক নাম: Pitta cyanea। এরা ‘আসমানি শুমচা’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ২১-২৩ সেন্টিমিটার। লেজ ৬ সেন্টিমিটার। ওজন ১১০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির কপাল ও মাথার চাঁদির সামনের দিক সবজে-ধূসর। কপালে কালচে সরু ডোরা। মাথার তালু থেকে ঘাড়ের পেছনের দিক সিঁদুর লাল। পিঠ থেকে লেজ পর্যন্ত গাঢ় নীল। ঠোঁটের গোড়া থেকে শুরু করে চোখের ওপর দিয়ে ঘাড়ের পেছন পর্যন্ত চওড়া কালো রেখা চলে গেছে।

ডানার প্রান্ত পালক কালচে। গলায় অস্পষ্ট কালো দাগ। গলার নিচের অংশ হালকা হলুদের ওপর অসংখ্য কালো তিলা। বুকের নিচ থেকে বস্তি প্রদেশ পর্যন্ত নীল-সাদার মিশ্রণের ওপর অসংখ্য কালো তিলা। অপরদিকে স্ত্রী পাখির ঘাড়ের পেছনের পট্টি কালো রঙের। কাঁধ ঢাকনি কালচে-জলপাই রঙের। কোমর নীল। ডানা নীলাভ-জলপাই রঙের। উভয়ের ঠোঁট কালো। চোখ কালচে। পা ও পায়ের পাতা পাটকিলে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের পিঠ কালচে-বাদামি। দেহতলে ঘন ফিকে ডোরা।

প্রধান খাবার: ভূমিজকীট, কেঁচো ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুলাই। অঞ্চলভেদে প্রজনন সময়ের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে মাটিতে অথবা ফার্নে আবৃত গাছের কাণ্ডে। বাসা গোলাকার। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস বা বাঁশপাতা। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৬ দিন। শাবক উড়তে পারে ২০-২৫ দিনে।