হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলায় লজ্জাবতী অথবা লজ্জাবতী লতা, লজাক পাতা। সংস্কৃতিতে লজ্জালু। ইংরেজি (sensitive plant,touch me not)। বৈজ্ঞানিক নাম (Mimosa Pudica)। এটি একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে। তবে বর্তমানে বিশ্বের সব জায়গায় এটি ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী হরিপুর উপজেলার সব অঞ্চলেই যেমন— নদী ধার, জলাভূমি, ঝার-জঙ্গল, চরাঞ্চল, শুকনো-রুক্ষ এলাকা কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় লজ্জাবতী লতা বেড়ে ওঠে।
গাছগুলোর কাণ্ড পাঁচ ফুট পর্যন্ত দেখা যায়। তবে ভূমি সংলগ্ন হয়ে অবনতভাবে বৃদ্ধি পায়। এ কারণে খাড়াভাবে এই গাছ বেশি উচ্চতার মনে হয় না। কোনো কোনো জাতের লজ্জাবতী খাড়াভাবেও জন্মে থাকে। এর কাণ্ড কাষ্ঠল, কণ্টকযুক্ত এবং গোলাকার। কান্ডের গাত্র লোমাকৃত। এর পাতা দ্বিপক্ষল যৌগিক। পত্রবৃন্তের অগ্রভাগ থেকে উৎপন্ন হয়। শাখা পত্রদন্ডের সঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পত্রকগুলো যুক্ত থাকে। পত্রমূল স্ফ্রিত এবং এর গায়ে লোম থাকে। এর উপপত্র কণ্টকে পরিণত হয়।
এর পাতা স্পর্শ করলে পত্রকগুলো প্রসারিত অবস্থা থেকে গুটিয়ে যায় এবং পত্রদন্ডসহ পাতা নুয়ে পড়ে। কয়েক মিনিট পরে গাছের পাতা আবার আগের অবস্থায় চলে আসে। এ ছাড়াও সন্ধ্যা বেলাতেও পাতা বন্ধ হয়ে যায়। মূলত সিসমোন্যাস্টিক চলন-এর প্রভাবেই এর পাতা বন্ধ হয়ে যায়। স্পর্শের কারণে এভাবে গুটিয়ে যাওয়ার জন্য সংস্কৃতিতে একে লজ্জালু বলা হয়েছে। এই সূত্রে বাংলাতে এই গাছকে লজ্জাবতী বলা হয়।
থোকায় থোকায় ফুল ফোটে। এর ফুল বেশ নরম। ফুলের রং ফিকে লাল বা ফিকে বেগুনি। ফুলের বোঁটা দুই ইঞ্চি পরিমিত লম্বা হয়। পত্রের গোড়া থেকে ফুল বের হয়। ফুলগুলো প্রতিসম, সম্পূর্ণ, উভলিঙ্গ এবং গর্ভপাদপুষ্পী। এর দলমন্ডলের সংখ্যা চারটি, ফুলের গোড়ায় চারটি সংযুক্ত বৃত্যংশ আছে। পুংকেশর চারটি এবং গর্ভপত্র একটি। পুষ্পমঞ্জরী বলের মতো দেখায়।
জুলাই থেকে ডিসেম্বর মধ্যে ফুল ও ফল বেশি হয়। এর ফলগুলো চ্যাপ্টা, বাঁকা-লম্বাটে অথবা গুঁটি আকারের হয়। ফলের ভেতরে দুই-চারটি বীজ থাকে। ভারতীয় বনৌষধি দ্বিতীয় খন্ড সূত্রে, আয়ুর্বেদে পিত্তদোষ নিবারণের এর রস সেবন করার বিধান আছে।
এ ছাড়া অর্শ ও ভগন্দরের জন্য এই গাছের রস ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। পাথরী রোগ নিবারণে এর শিকড়ের ক্বাথ ব্যবহৃত হয়। পাতাসহ গাছ বেঁটে কাঁকড়াবিছার দংশনের স্থানে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে আরো অনেক গুণ রয়েছে লজ্জাবতী লতায়।