কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়েও প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যায়নি। পরীক্ষার আগের রাতে ফেইসবুকে যে প্রশ্ন পাওয়া যায়, সেই প্রশ্নেই নেওয়া হলো এইচএসসির হিসাববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা।
সোমবার বেলা ১টায় পরীক্ষা শেষে বেরিয়ে একাধিক পরীক্ষার্থী সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্যই প্রকাশ করে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানায়, ‘একজন পরীক্ষার্থী রবিবার রাত ২টা ৩৩ মিনিটে নিজের ফেইসবুক পেইজে এ পরীক্ষার প্রশ্ন তুলে দিয়ে মন্তব্যে লিখেছিলেন, এক বন্ধুর কাছ থেকে তিনি ওই প্রশ্ন পেয়েছেন। পরীক্ষার পর মূল প্রশ্নের সঙ্গে আগের রাতে ফেইসবুকে আসা ৪০টি নৈর্ব্যক্তিক (বহু নির্বাচনী অভীক্ষা) প্রশ্নের হুবুহু মিল পাওয়া যায়। হিসাববিজ্ঞানে ৪০ মিনিটের ৪০ নম্বরের এই নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার পাশাপাশি ২ ঘণ্টায় ৬০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
ওই পরীক্ষার্থী জানায়, প্রশ্ন সত্যিই মিলে যায় কি না- তা যাচাই করতেই ফেইসবুকে আপলোড করেছিলাম। পরীক্ষায় দেখলাম শতাভাগ মিলে গেছে। পরীক্ষা শেষে এই পরীক্ষার্থী আগের রাতে পাওয়া প্রশ্ন এবং পরীক্ষার মূল প্রশ্ন পাশাপাশি রেখে নিজের ফেইসবুকে দেন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর আমরা বিষয়টি দেখব। আর ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ ওই পরীক্ষার্থীর ফেইসবুক আইডি জানতে চান। পড়া বাদ দিয়ে গভীর রাতে একজন পরীক্ষার্থী কেন ফেইসবুকে ‘প্রশ্ন খুঁজে বেড়াচ্ছিল’ -সে প্রশ্নও তোলেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।’
গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় যাতে প্রশ্ন ফাঁস হতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রশ্নের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে বিজি প্রেসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসন নিয়ে বৈঠকও করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ওই বৈঠকে প্রশ্ন ফাঁসকারীচক্রের হোতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। ফেসবুকের মাধ্যমেও যাতে প্রশ্নফাঁস না হয় সে ব্যাপারে বিটিআরসির সাহায্য চাওয়া হয়। পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলোর ওপরও নজরদারি চালানো হয়। টার্গেট যে কোনো উপায়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস বা ফাঁসের গুজব ছড়ানো, ফেসবুকে প্রশ্নপত্রের নামে হুজুগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে পুরো বিজি প্রেসকে ঘিরে একশরও বেশি সিসি টিভি স্থাপন করা হয়। বিজি প্রেসের দুইশর বেশি কর্মচারী ও কর্মকর্তার নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের গতিবিধির ওপর গোয়েন্দা পুলিশের টিম কাজ করে।
এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস বা প্রশ্নপত্র নিয়ে যেসব কোচিং সেন্টার নানাভাবে প্রতারণা করছে এমন কোচিং সেন্টারের তালিকা তৈরির ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্ত প্রশ্ন ফাঁসের কারণে এ সব উদ্যোগ কতটা কাজে এসেছে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা।