হাওর বার্তা ডেস্কঃ পল পগবাকে বার্সেলোনায় চান লিওনেল মেসি। এটা পুরোনো খবর। মেসির ইচ্ছা পূরণের জন্য গ্রীষ্মের দলবদলের সময় পগবাকে কেনার জন্য দুদুবার প্রস্তাবও পাঠিয়েছিল বার্সেলোনা। এমনকি তলেতলে পগবার এজেন্টের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বার্সেলোনার দুটি প্রস্তাবই অতি বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়েছে পগবার ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু তাতেও মেসির পগবাকে সতীর্থ হিসেবে পাওয়ার বাসনা দমে যায়নি। আসন্ন শীতকালীন দলবদল উইন্ডোকে সামনে রেখে ক্লাব কর্তাদের নাকি আবারও তাড়না দিয়েছেন মেসি।
জানিয়ে দিয়েছেন যেকোনো মূল্যে পগবাকে দলে চাই তার! পগবাকে দলে টানার ইচ্ছাটা মেসির মনে নতুন করে জাগ্রত হওয়ার কারণ মূলত দুটো। এক, কোচ হোসে মরিনহোর সঙ্গে পগবার সম্পর্কের তিক্ততার ফাটল আরও প্রশস্ত হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুরো ড্রেসিংরুমে। ইউনাইটেড তাই ড্রেসিংরুমের অস্থিরতা দূর করতেই নাকি পগবাকে এখন বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভাবছে। মানে পগবাকে কেনার দরজা এখন খোলা।
দ্বিতীয়ত, বার্সেলোনারও সাম্প্রতিক সময়টা ভালো যাচ্ছে না। মৌসুমের শুরুটা দুর্দান্ত হলেও জয়ের সেই পথ হারিয়ে ফেলেছেন মেসিরা। লিগে সর্বশেষ ৩ ম্যাচেই জয়বঞ্চিত বার্সা। অধিনায়ক হিসেবে দলের এই টানা ব্যর্থতা খুবই কষ্ট দিচ্ছে মেসিকে। ব্যর্থতার কারণ ঘাটতে গিয়ে একজন বিশ্বমানের মিডফিল্ডারের অভাবটাই মেসিরা অনুভব করছেন বেশি করে!
বর্ষিয়ান আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা চলে গেছেন। তার জায়গায় কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে ফিলিপে কুতিনহোকে খেলাচ্ছেন বটে। কিন্তু সার্জিও বুসকেটস ও কুতিনহোর সঙ্গে তৃতীয় মিডফিল্ডার হিসেব যাদের খেলানো হচ্ছে, তাদের কেউই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন না। আসলে বর্তমান বার্সেলোনা দলে বুসকেটস, কুতিনহো, রাকিতিচ ছাড়া সেই অর্থে প্রতিষ্ঠিত মিডফিল্ডার নেইও। তারা আছেন তাদের সবাই তরুণ।
বল নিয়ন্ত্রণে রেখে খেলা তৈরি করা, প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়া, ডিফেন্স-চেরা পাস-সবকিছুই পগবাকে করতে পারেন খুব নিখূঁতভাবে। আর পগবার এই গুণগুলো মেসি সর্বশেষ স্বচোক্ষে দেখেছেন রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে। ৪-২ গোলে জিতে ফ্রান্স যে সেদিন মেসির আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দেয়, তার পেছনে পগবার ভূমিকা ছির অপরিসীম।
বিশেষ করে ফ্রান্সের প্রথম গোলটি পগবার বুদ্ধিদীপ্ত এক পাসেরই ফসল। নিজেদের অর্থে জটলার মধ্যে বল পান পগবা। সেখান থেকেই কিলিয়ান এমবাপেকে লক্ষ্য করে অবিশ্বাস এক পাস বাড়ান পগবাকে। যে পাসটির গতিপথ এতোটাই নিখুঁত ছিল যে, আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারদের পক্ষে বলের নাগাল পাওয়া সম্ভব ছিল না!
আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডাররা বলেল নাগালও পায়নিও। বলের কাছে পৌঁছাতে না পেরে শেষমেষ বলের পেছনে ছোটা এমবাপেকে ফাউল করে বসেন মার্কোস রোহো। ফ্রান্স পেয়ে যায় পেনাল্টি। তা থেকে গোল করে ফ্রান্সকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন আতোইন গ্রিজমান। আর্জেন্টাইনদের আত্মবিশ্বাসে লাগে বড় এক ধাক্কা। মেসি নিশ্চয় গবেষণা করে দেখেছেন, সেই ধাক্কার মূলে ছিলেন পগবা। কি পাস রে বাবা! শুধু ই পাসটিই নয়, ম্যাচটিতে বেশ কয়েকবারই মেসির পা থেকে বল কেড়ে নেন পগবা। যা দেখে মেসি মুগ্ধ।
সেই মুগ্ধতাই পগবাকে সতীর্থ হিসেবে পাওয়ার ক্ষুধাটা বাড়িয়ে দিয়েছে মেসির। আর শুধু মেসিই নন, বার্সেলোনার দুই ফরাসি খেলোয়াড় স্যামুয়েল উমতিতি ও উসমানে ডেম্বেলেও দলে চাইছেন পগবাকে। পগবাকে পছন্দের তালিকায় আছেন জেরার্ড পিকে, এমনকি কোচ ভালভার্দেরও। কিন্তু বার্সেলোনার কর্তারা নাকি কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে। বার্সা কর্তারা এমন একজন মিডফিল্ডারকে চান যিনি বার্সেলোনার টিকি-টাকা দর্শনের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নিতে পারবে। পাশাপাশি মাঠে কম ঝুকি নেবে এবং পজিশন সেন্স দুর্দান্ত।
বার্সেলোনা কর্তারা আসলে পগবার পেছন থেকে সরে আসতে চাইছে টাকার কারণে! নিশ্চিতভাবেই পগবাকে কিনতে হলে বিশাল অঙ্কের টাকা গুণতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে বার্সেলোনার তহবিলে অত টাকা জমা নেই। বাজেটও নেই। কিন্তু ইংল্যান্ডের পত্রপত্রিকার খবর, ক্লাব কর্তারা যতই টালবাহানা করুন, মেসি নাকি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন-যেকোনো মূল্যে পগবাকে দলে চাই তার। যত টাকাই লাগুক, কেনা হোক পগবাকে।
পগবাকে কেনার দৌড়ে যোগ দিয়েছে ফরাসি ক্লাব পিএসজিও। মেসির এই আলিমেটামের পর বার্সেলোনাও যে পগবাকে কেনার জন্য নতুন করে চেষ্টা করবে, সেটা অনুমান করাই যায়। পগবা ইস্যুতে শীতকালীন দলবদল উইন্ডোটা জমবে বলেই মনে হচ্ছে!