ঢাকা ০৬:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে এখন বিভিন্ন প্রকার ফসলের উৎপাদন হচ্ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৬:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৮
  • ৩১২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে এখন বিভিন্ন প্রকার ফসলের উৎপাদন হচ্ছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এসব ফসলে নতুন নতুন পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবও ঘটছে। এ থেকে রেহাই পেতে ফসলে ইচ্ছামতো রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। এসব রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়োগের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পাখি, অনুজীব ইত্যাদি বিলুপ্ত হচ্ছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন উপকারী পোকা মাকড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, অপরদিকে জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে এবং ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়ছে।

তাই এবার পরিবেশবান্ধব কৌশলে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ‘‘পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন’’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন করা হয়েছে। দেশের ৮টি বিভাগের ৬১টি জেলার ৩১৭টি উপজেলায় এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৩৫ হাজার ৫৬০টি জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই দমন ব্যবস্থাপনা প্রদর্শনী স্থাপন করা হবে। ২০টি আইপিএম মডেল ইউনিয়ন ও ৩১৭টি স্কুল আইপিএম (পাইলট কার্যক্রম) পরিচালনা করা হবে। ধান, ভুট্টা, সবজি, ফল বিষয়ক ৮ হাজার ৩৯১টি কৃষক মাঠ স্কুল পরিচালনা করা হবে। ৫টি ব্যাচে মোট ৪০০ জন কৃষক বা সংশ্লিষ্ট জনকে বিভাগীয় প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ৩৩টি ব্যাচে ৯৯০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ২১টি ব্যাচে ৬৩০ জন ট্যাগ এসএএও প্রশিক্ষণ পাবেন এবং ১ হাজার ৫৮৫টি আইপিএম ক্লাবকে সহায়তা দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে এ বরাদ্দ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ২০২৩ সালের ৩০ জুন সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, কৃষি ক্ষেতে বালাই ব্যবস্থাপনায় শুধু বালাইনাশকের ওপর নির্ভরশীলতা যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি পরিবেশের জন্য দূষণীয় এবং জনস্বার্থের জন্য হুমকি। বাণিজ্যিক কৃষকরা ফল ও সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক মৌসুমে ঘন ঘন অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে বালাইনাশক ব্যবহার করেন। বর্তমানে দেশে খাদ্য সংরক্ষণ, ফল পাকানো ইত্যাদি কাজে ফরমালিন, কার্বাইড, ইথিলিনসহ বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য অতিমাত্রায় মেশানো হচ্ছে। এ কারণে পরিবেশবান্ধব উপায়ে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কম খরচে বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনসহ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কৃষকদের সক্ষম করে তোলা এবং কৃষকদের আর্থিক অবস্থার টেকসই উন্নয়ন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের মাধ্যমে জনস্বার্থের উন্নতি সাধন করার লক্ষ্যে ‘‘পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন’’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

সূত্র জানায়, নিরাপদ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকের কারিগরি দক্ষতা এবং নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক সচেতনা বাড়বে, যাতে কৃষক-শ্রমিক ও ভোক্তার শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণিত আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটবে। প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রমে মহিলাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর মাধ্যমে নিরাপদ ও গুণগতমান সম্পন্ন ফসল উৎপাদনে সচেতনতা বাড়বে। একই সঙ্গে আয়ের সুযোগ সৃষ্টি এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের শাসনামলে কৃষিতে ব্যাপক বিপ্লব ঘটেছে। কৃষি বিষয়ক নানা ধরণের প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জনগণ উপকৃত হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

দেশে এখন বিভিন্ন প্রকার ফসলের উৎপাদন হচ্ছে

আপডেট টাইম : ১০:৩৬:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে এখন বিভিন্ন প্রকার ফসলের উৎপাদন হচ্ছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এসব ফসলে নতুন নতুন পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবও ঘটছে। এ থেকে রেহাই পেতে ফসলে ইচ্ছামতো রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। এসব রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়োগের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পাখি, অনুজীব ইত্যাদি বিলুপ্ত হচ্ছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন উপকারী পোকা মাকড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, অপরদিকে জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে এবং ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়ছে।

তাই এবার পরিবেশবান্ধব কৌশলে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ‘‘পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন’’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন করা হয়েছে। দেশের ৮টি বিভাগের ৬১টি জেলার ৩১৭টি উপজেলায় এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৩৫ হাজার ৫৬০টি জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই দমন ব্যবস্থাপনা প্রদর্শনী স্থাপন করা হবে। ২০টি আইপিএম মডেল ইউনিয়ন ও ৩১৭টি স্কুল আইপিএম (পাইলট কার্যক্রম) পরিচালনা করা হবে। ধান, ভুট্টা, সবজি, ফল বিষয়ক ৮ হাজার ৩৯১টি কৃষক মাঠ স্কুল পরিচালনা করা হবে। ৫টি ব্যাচে মোট ৪০০ জন কৃষক বা সংশ্লিষ্ট জনকে বিভাগীয় প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ৩৩টি ব্যাচে ৯৯০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ২১টি ব্যাচে ৬৩০ জন ট্যাগ এসএএও প্রশিক্ষণ পাবেন এবং ১ হাজার ৫৮৫টি আইপিএম ক্লাবকে সহায়তা দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে এ বরাদ্দ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ২০২৩ সালের ৩০ জুন সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, কৃষি ক্ষেতে বালাই ব্যবস্থাপনায় শুধু বালাইনাশকের ওপর নির্ভরশীলতা যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি পরিবেশের জন্য দূষণীয় এবং জনস্বার্থের জন্য হুমকি। বাণিজ্যিক কৃষকরা ফল ও সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক মৌসুমে ঘন ঘন অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে বালাইনাশক ব্যবহার করেন। বর্তমানে দেশে খাদ্য সংরক্ষণ, ফল পাকানো ইত্যাদি কাজে ফরমালিন, কার্বাইড, ইথিলিনসহ বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য অতিমাত্রায় মেশানো হচ্ছে। এ কারণে পরিবেশবান্ধব উপায়ে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কম খরচে বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনসহ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কৃষকদের সক্ষম করে তোলা এবং কৃষকদের আর্থিক অবস্থার টেকসই উন্নয়ন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের মাধ্যমে জনস্বার্থের উন্নতি সাধন করার লক্ষ্যে ‘‘পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন’’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

সূত্র জানায়, নিরাপদ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকের কারিগরি দক্ষতা এবং নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক সচেতনা বাড়বে, যাতে কৃষক-শ্রমিক ও ভোক্তার শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণিত আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটবে। প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রমে মহিলাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর মাধ্যমে নিরাপদ ও গুণগতমান সম্পন্ন ফসল উৎপাদনে সচেতনতা বাড়বে। একই সঙ্গে আয়ের সুযোগ সৃষ্টি এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের শাসনামলে কৃষিতে ব্যাপক বিপ্লব ঘটেছে। কৃষি বিষয়ক নানা ধরণের প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জনগণ উপকৃত হবে।