হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজবাড়ীতে পদ্মার চরাঞ্চল থেকে নদীপথ পাড়ি দিয়ে উপজেলার হাটবাজারে আসার জন্য তৈরি করা হয়েছিল একটি বাঁশের সাঁকো। এ বছর বর্ষার স্রোতে সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। ভুক্তভোগীদের দাবি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সাঁকো সংস্কার না করে দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণ করা।
রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নে পদ্মা নদীর শাখা কোল বলে পরিচিত হিরু মোল্লার ঘাট। উপজেলা শহররক্ষা বাঁধের ওপারে প্রায় ২৫টি গ্রামের মানুষ কালুখালী উপজেলা ও জেলা শহরে আসার জন্য ২০১৩ সালে প্রায় ১শ ফিট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকো তৈরি করে রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে এখানকার মানুষদের খেয়া নৌকায় করে পারাপার হতে হচ্ছে।
সময়মতো নৌকা না মেলায় পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। ব্যাহত হচ্ছে এসব এলাকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও কৃষি পণ্যের বাজারজাত। হিরু মোল্লার এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষের যাতায়াত। শুষ্ক মৌসুমে বালুর চরে পায়ে হাঁটলেও বর্ষার পানিতে দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মাসুদ সেখ জানান, কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নে পদ্মা নদীর শাখা কোলে হিরু মোল্লার ঘাট। এখানে নদীর ওপাড়ে চলাচলের জন্য বাঁশের তৈরি একটি সাঁকো ছিলো যা এবারের বর্ষার স্রোতে ভেঙে গেছে। চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত খুব কষ্টকর হয়ে পরেছে। একটি মাত্র নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার হচ্ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোগান্তির শেষ নেই।
চরাঞ্চলে অবস্থিত হরিণবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, সাঁকোটি ভেঙে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। অনেক শিক্ষককে নদী পার দিয়ে ওপারে যেতে হয়। সময়মতো নৌকা না পেলে সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এতে লেখাপড়ার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ জন্য সবার সুবিধার্থে দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণ প্রয়োজন।
রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেহেদী হাসিনা পারভীন নিলুফা বলেন, ‘কয়েক বছর আগে উপজেলা পরিষদ এই সাঁকোটি নির্মাণ করে দেয়। পরবর্তীতে আমি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ২ লাখ টাকা ব্যয়ে সাঁকোটি সংস্কার করে দিয়েছি। শুকনা মৌসুমে এই সাঁকোর ওপর দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারলেও এখন পানি উঠে যাওয়ায় তারা আর চলাচল করতে পারছে না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এসব অঞ্চলের সাধারণ হাজার হাজার মানুষ। এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা সময়মতো স্কুল কলেজে যেতে পারছে না। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে পারছে না। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলেই পাল্টে যাবে এসব অঞ্চলের জীবনযাত্রার মান। লাঘব হবে ভোগান্তি।’
কালুখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের ১০টি মৌজার হাজার হাজার মানুষ বেড়িবাঁধের ওপারে চরাঞ্চলে বসবাস করে। তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক। বিশেষ করে বর্ষাকালে এদের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মাত্র ৭ কিলোমিটার উপজেলা সদর থেকে এই পদ্মা নদী। আপদে বিপদে তাদের উপজেলায় আসতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। রতনদিয়া ইউনিয়নের হিরু মোল্লার ঘাট হয়ে পদ্মা নদী পর্যন্ত একটি রাস্তা। এখানে বড় ২টি ব্রিজ প্রয়োজন। প্রথমটি হিরু মোল্লার ঘাটে যা ১শ মিটারের বেশি এবং অপরটি হলো মাধবপুর বাজার হয়ে একটি গ্যাপ আছে সেটা ৫০ মিটারের একটু বেশি। সেটা ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়ে গেছে। কাজ কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে। হিরু মোল্লা ঘাটের ১৩০ মিটার ব্রিজের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সয়েল টেস্ট ও ডিজাইন হয়েছে। এখন এটা অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে। ব্রিজটা হলে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।’
কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, ‘হিরু মোল্লার ঘাটটি চরাঞ্চলের মানুষের জন্য অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাট। প্রতিবছর টিআরের মাধ্যমে সাঁকোটি সংস্কার করা হয়। বন্যায় সাঁকোটি ভেঙে গেছে। এটা সংস্কারের জন্য দ্রুত নেবো। চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক সুবিধা গ্রহনের জন্য এখানে স্থায়ীভাবে একটি ব্রিজ হওয়া জরুরি। ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।