চিকিৎসাবিজ্ঞানে আগ্রহ কমছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে শিক্ষা এখন পণ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে শিক্ষার মান ক্রমেই নামতে নামতে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এর প্রভাব পড়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষায়ও। এখানেও শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ। তা সত্ত্বেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে চলছে টাকার খেলা। কোনো কোনো মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্যই দিতে হয় ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এ যেন টাকা দিয়ে চিকিৎসার সনদ কেনা। এভাবে মেডিক্যাল কলেজগুলো থেকে প্রতিবছর বেরিয়ে আসছে ১০ হাজারের বেশি চিকিৎসক, যাঁদের চিকিৎসাসেবা নিয়েও জনমনে রয়েছে প্রশ্ন।

ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ক্রমেই বাড়ছে। আর তার অনিবার্য পরিণতিস্বরূপ মানুষ এখন দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপরই আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। যাদের ন্যূনতম সামর্থ্য আছে, তারা চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে এমবিবিএস পাস করেও বেকার থাকার হার ক্রমেই বাড়ছে। এ অবস্থায় চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি ক্রমেই শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমছে। এরই প্রমাণ পাওয়া যায় এবারের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায়। গত দুই বছরে আবেদনকারীর সংখ্যা কমেছে ৩৫ হাজার। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল ৯০ হাজার ৩০০ জন। এবার আবেদন করেছে ৬৫ হাজার ৯১৯ জন। জানা যায়, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এবার এমবিবিএসে ভর্তির জন্য আবেদনই করেনি।

চিকিৎসা পেশা হিসেবে অন্যান্য পেশা থেকে আলাদা। অন্যান্য পেশাজীবীর সামান্য ভুলে কোনো মানুষের জীবন যাওয়ার আশঙ্কা খুবই কম কিংবা থাকে না বললেই চলে। কিন্তু একজন চিকিৎসকের সামান্য ভুলেও যে কারো জীবন চলে যেতে পারে। তাই এ পেশার মান রক্ষা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু যেভাবে দেশের মেডিক্যাল শিক্ষা এগিয়ে চলেছে, তাতে উত্কর্ষ তো দূরে থাক, মান রক্ষারও কোনো উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়ে না। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে যে টাকার খেলা চলছে, তাতে বেশির ভাগ মেধাবী শিক্ষার্থীর পক্ষে সেখানে ভর্তির সুযোগ থাকে না। কয়জন অভিভাবকের ক্ষমতা থাকে ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ করে সন্তানকে ডাক্তার বানানোর! বাস্তবে দেখা যায়, বিত্তবানদের অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী সন্তানরাই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। এভাবে কি মেডিক্যাল শিক্ষার মান রক্ষা করা সম্ভব?

এখনো সময় আছে মেডিক্যাল শিক্ষার প্রতি মেধাবীদের আগ্রহ ধরে রাখার জন্য। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রতিবছর ১০ হাজার শিক্ষার্থী এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির সুযোগ পায়। ৬৫ হাজারের মধ্যে ১০ হাজার প্রকৃত মেধাবীকেই বেছে নিতে হবে। অনেক বেশি পাস করিয়ে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর বাণিজ্যের সুযোগ করে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য হবে না। টাকার খেলার কাছে পরাজিত হয়ে কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী যেন ছিটকে না পড়ে সেটি দেখতে হবে। মেডিক্যাল কলেজগুলোর শিক্ষার মানও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে। শুধু সনদ বিতরণ নয়, শিক্ষার্থীরা যাতে সেবার মানসিকতা ও যোগ্যতা নিয়ে চিকিৎসা পেশায় প্রবেশ করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর