আমি নিজে হাওরাঞ্চলের মানুষ; আমার শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের বড় অংশ বৃহত্তর সিলেটে কেটেছে; পরবর্তীকালেও আমি যে টেকসই উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে কাজ করেছি, সেখানে হাওরাঞ্চল উল্লেখযোগ্য ফোকাসে থেকেছে। কিন্তু হাওরাঞ্চল নিয়ে একটি ধন্ধ রয়ে গেছে। সম্পদে ও জীববৈচিত্র্যে এত সমৃদ্ধ হয়েও এই অঞ্চলে কেন দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, পশ্চাৎপদতা এত বেশি?
আমরা জানি, বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট ধানের এক-পঞ্চমাংশ আসে হাওরাঞ্চল থেকে। মিঠাপানির মাছের একটা বড় অংশও আমরা পেয়ে থাকি উত্তর-পূর্বাংশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা চার শতাধিক হাওর থেকেই। ভাটির এ অঞ্চল লোকসাহিত্যেও সমৃদ্ধ। হাওরের প্রাণী, হাওরের উদ্ভিদ বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ; প্রতিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বস্তুত বাংলাদেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও পরিবেশে হাওরাঞ্চলের অবদান নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। হাওরবাসী সাধারণ মানুষ আর্থ-সামাজিক দিক থেকে নাজুক অবস্থানে থেকে গেছে। এর কারণও অনেকাংশে অনালোচিত। আমি এই লেখায় হাওরের টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে আলোকপাত করব।
সমুদ্রসীমার কথা বাদ দিলে বাংলাদেশের মোট আয়তনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসলে জলাভূমি_ নদী, খাল, বিল এবং হাওর। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত বিশাল ও বিস্তৃত জলাভূমি হাওর বলে পরিচিত। হাওর মূলত কমবেশি গোলাকার নিচু ভূমি, যার নিজস্ব পানি নিষ্কাশনযোগ্য অববাহিকা রয়েছে এবং এ ভূমি নদীঘেরা থাকে। শুকনো মৌসুমে হাওরের নিম্নতম অংশে এক বা একাধিক বিল থাকে। বিলগুলো খালের মাধ্যমে নদীর সঙ্গে যুক্ত থাকে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের পূর্বভাগ এবং বৃহত্তর সিলেটের পশ্চিমভাগ হাওরাঞ্চল। এ অঞ্চল আশপাশের স্থলভাগ থেকে নিচু এবং বর্ষাকালে ১০-১৫ ফুট পানির নিচে চলে যায়। হাওর এলাকাকে তখন প্রায় সাগরের মতো দেখায়। চারপাশে শত বর্গমাইল এলাকা পানিতে একাকার হয়ে যায়।
বাংলাদেশের হাওরের সর্বসম্মত পরিসংখ্যান নেই। বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ডের এক দলিলে হাওরের সংখ্যা ৪১৪টি বলা হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যসূত্রে এই সংখ্যা ৪২৩। হাওর জেলা হিসেবে পরিচিত সাতটি প্রশাসনিক এলাকার মধ্যে সুনামগঞ্জে ১৩৩, কিশোরগঞ্জে ১২২, নেত্রকোনায় ৮০, সিলেটে ৪৩, হবিগঞ্জে ৩৮, মৌলভীবাজারে ৪ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩টি হাওর রয়েছে। হাওর অববাহিকার আয়তন সাড়ে ২৪ লাখ হেক্টর বা বাংলাদেশের ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
হাওরাঞ্চলের সাতটি জেলার মানুষের জীবন ও জীবিকা সরাসরি প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভরশীল। এই অঞ্চলের প্রধান দুটি পেশা হচ্ছে কৃষি ও মৎস্য শিকার। হাওর এলাকার অধিকাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে এই দুই পেশার সঙ্গে যুক্ত। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, হাওরাঞ্চলের সাত জেলায় ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ কৃষিকাজে এবং ১২ শতাংশের বেশি মাছ চাষ বা মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত। প্রাণবৈচিত্র্যনির্ভর অপ্রধান অন্যান্য পেশার মধ্যে রয়েছে পশুপাখি পালন।
হাওরবাসীর একটি বড় অংশ বাস করে দারিদ্র্যসীমার নিচে। ইজারাদার ও জোতদারের দাপটে হাওরের ধান-মাছ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে অধরাই থেকে যায়। তারা উদয়াস্ত খেটেই চলে, ফসল ওঠে ওয়াটার লর্ডদের ঘরে। শুকনো মৌসুমে যদিও হাওরের বুকে চলাফেরার অধিকার থাকে, ভাসান পানির সময় সেটাও হারায় খেটে খাওয়া জনগোষ্ঠী। আছে দাদনের ফাঁস_ সেখান থেকে সারাজীবনেও নিষ্কৃতি মেলে না অনেকের। উল্লেখযোগ্য কিছু শর্ত উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও হাওরে শিল্পায়ন হয়নি। খনিজ সম্পদের সম্ভাবনাও রয়ে গেছে অনুদ্ঘাটিত। ফসলের ক্ষেতে কাজ আর মাছ ধরা ছাড়া হাওরবাসীর বিকল্প কোনো জীবিকা গড়ে ওঠেনি।
শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, অবকাঠামো, সুশাসন_ বলতে গেলে সব দিক থেকে পিছিয়ে আছে হাওরবাসী। পেছনে ফিরে যদি দেখি, ২০০১-১৫ এই পনের বছরে অন্তত পাঁচবার হাওরের মানুষ ফসল ঘরে তুলতে পারেনি, যার প্রভাব পড়েছে আমাদের সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তায়। ডিসেম্বরে শুরু করে ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য উপযুক্ত সময়। কিন্তু সেখানে বাঁধের জন্য অর্থ বরাদ্দ সময়মতো হয় না। বাংলাদেশের মিঠাপানির মাছের প্রধান ক্ষেত্র হাওরাঞ্চল এবং ওই অঞ্চল থেকে সব থেকে বেশি আমিষ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ক্ষুধা এই অঞ্চলের মানুষের নিত্যসঙ্গী।
হাওরাঞ্চলের নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, জরুরি ভিত্তিতে নদী খনন ও পুনর্খনন করতে জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ দরকার। হাওরাঞ্চলের ফসল সংরক্ষণে শস্য সংরক্ষণাগার নির্মাণে বাজেটে অর্থ বরাদ্দের জন্য উদ্যোগী হতে হবে। হাওরের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাওরে ভাসমান ক্লিনিক গড়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। হাওরের উৎপাদিত বোরো ধানের আগাম ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে।
হাওরের নদীভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। খাস জমিতে হাওরের দরিদ্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং হাওরের পানি নিষ্কাশনের খাল খনন ও পুনর্খননের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
আমি বলতে চাই, হাওরের সংকট আসলে টেকসই উন্নয়নের পথে অগ্রসর না হওয়ার সংকট। হাওরে যে বিপুল প্রাণবৈচিত্র্য রয়েছে, যে মানুষ রয়েছে, তাদের কেন্দ্রে না রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনার সংকট। আমার বক্তব্যে আমি মূলত হাওরের টেকসই উন্নয়ন ও এর প্রয়োজনে সেখানকার প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার ওপর জোর দিতে চাই। কারণ হাওরের প্রাণবৈচিত্র্যই সেখানকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চাবিকাঠি।
সহজ কথায় বললে, টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে মানুষকে কেন্দ্রে রেখে, পরিবেশ সংরক্ষণ করে সামাজিকভাবে গ্রাহ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন। বস্তুত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের একটি স্তম্ভ হচ্ছে পরিবেশ-প্রতিবেশ প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করা। এই প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন ঘটলে যেমন পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষিত থাকে, তেমনই উন্নয়নের সুফল পায় সাধারণ মানুষ। গোটা দেশেই উন্নয়নের এই দর্শন প্রতিপালিত হওয়া উচিত। আমি মনে করি, হাওরাঞ্চলের জন্য এটা আরও বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
প্রাণবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হাওরাঞ্চলে টেকসই উন্নয়নের পরিবেশ স্তম্ভে সাধারণত ব্যাপক বৈচিত্র্য উপস্থিত। আমরা দেখি, বাংলাদেশে মোটামুটি যত প্রাণের হদিস মেলে, সবগুলোর সম্মিলন ঘটেছে হাওরাঞ্চলে। পাহাড়-নদী-সাগর-বন-মাঠের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে যেন বাংলাদেশেরই প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে হাওরাঞ্চল। এত সব ভৌগোলিক আর পারিবেশিক বৈচিত্র্য হাওরাঞ্চলকে বাংলাদেশের আর দশটা এলাকা থেকে করেছে স্বতন্ত্রও। প্রাণ ও প্রকৃতির প্রাচুর্যে ভরা হাওরাঞ্চল। কিন্তু এটাও অনস্বীকার্য যে, হাওরাঞ্চলে প্রাণের সমাহার সংকুচিত হয়ে আসছে। এমনকি খোদ হাওরগুলোর অস্তিত্বই সংকটে পড়েছে এখন। প্রাকৃতিক নানা কারণে হাওরের চিরায়ত চরিত্রের গুরুতর বিকৃতি ও প্রাণসম্পদে টান পড়েছে। প্রাকৃতিক কারণেও বেশি ক্ষতি করছে হাওরাঞ্চলের মানুষের নানা তৎপরতা। হাওরের দুর্দশা প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে উঠছে। মানুষের দ্বারা সৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে প্রাণসম্পদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, সামাজিক অধিকার ও দায়িত্বের ব্যত্যয়, মানব বসতির অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ, প্রকৃতিবৈরী রাসায়নিক ও ধাতুর ব্যবহার এবং আইনের প্রয়োগ না হওয়ার বিষয়গুলো গুরুতর। প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে প্রকৃতিতে যে সুর-লয়-তাল গাঁথা হয়েছিল শত শত বছর ধরে, তা কোথায় যেন মিলিয়ে গেছে। ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে হাওরাঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য।
এই অঞ্চলের মানুষের টেকসই অগ্রগতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন স্তম্ভগুলোও নানাভাবে বাধাগ্রস্ত। একদিকে পরিবেশ বিপর্যয় এবং অপরদিকে অবকাঠামো, উৎপাদন, বিপণন, বণ্টন, দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে সংকট এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক ঘাটতি হাওরাঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন বিঘি্নত করেছে।
এত নেতিবাচক চিত্রের ভিড়ে আমরা আশান্বিত যে, ২০১০ সালে সরকার ‘জাতীয় হাওর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা’ প্রণয়ন ও অনুমোদন করেছে। এ জন্য সরকার সাধুবাদ পেতেই পারে। বস্তুত হাওরের উন্নয়ন নিয়ে নাগরিক সমাজের পক্ষে আমরা দীর্ঘদিন যেসব দাবি জানিয়ে এসেছি, তার উল্লেখযোগ্য অংশ এই মহাপরিকল্পনায় স্থান পেয়েছে। এর আগেও হাওরের নেতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে এবং সংবাদমাধ্যমেও উঠে এসেছে হাওরের অবনয়নের চিত্র। বুঝতে পেরেছিলেন নীতিনির্ধারকরাও। হাওরের প্রকৃতি ও প্রতিবেশের গুরুতর অবস্থা বিবেচনায় অন্তত একটি হাওরকে ঘোষণা করা হয়েছিল ‘ইকোলজিক্যালি ক্রিটিকেল এরিয়া’ হিসেবে। অপর একটি ‘রামসার সাইট’। আমরা দেখেছি, তারও আগে অর্ধশতক ধরে প্রাকৃতিক বিভিন্ন সম্পদ রক্ষায় প্রণীত হয়েছিল বেশ কিছু আইন ও নীতিমালা। এর মধ্যে স্বাধীনতার পরপরই গৃহীত জলাভূমি ব্যবস্থাপনা নীতির কথা বলতে হবে। পরে ১৯৭৪, ১৯৮৪, ১৯৮৬ সালেও একই ধরনের নীতিমালা হয়েছে। বিশেষত ২০০৯ সালে ‘জাল যার, জলা তার’ স্লোগান সামনে রেখে প্রণীত হয় আরেকটি নীতিমালা। আর কিছু না হোক, এর ফলে হাওরের মৎস্যসম্পদে জেলেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বাস্তবে সেটা হয়নি। এর পরেও আরও কিছু নীতিমালা হয়েছে, যেগুলো হাওরাঞ্চলের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক; যেমন_ ১৯৯৯ সালের জাতীয় পানি নীতি, ১৯৯৯ সালের জাতীয় কৃষিনীতি, ১৯৯৮ সালে জাতীয় মৎস্যনীতি, ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি ও জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি, জাতীয় পরিবেশ নীতি ইত্যাদি। কথা হচ্ছে, অনেক আইন ও নীতিমালা হয়েছে। কিন্তু হাওরাঞ্চলে পরিস্থিতির উন্নতির পথে পরিবর্তন ঘটেছে সামান্যই; অবনতিই লক্ষণীয়। অনেক নীতি ও আইনের প্রেক্ষাপটে চারটি উদ্যোগ আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক মনে হয়। এগুলো খুবই সাম্প্রতিক হলেও যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। উদ্যোগগুলো_ গৃহীত জাতীয় হাওর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা ২০১২; হাওর উন্নয়ন বোর্ড পুনর্গঠন করে ‘হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড’ গঠন ২০১২, যা সাম্প্রতিককালে অধিদপ্তর হিসেব পুনর্গঠিত হয়েছে; সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের (এপিপিজি) হাওর লাইভলিহুডস উদ্যোগ; সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রাসঙ্গিক কিছু প্রস্তাব।
সব মিলিয়ে দেখলে হাওরাঞ্চলের সংকটগুলো ইতিমধ্যে চিহ্নিত এবং এর সমাধান যে টেকসই উন্নয়ন, তা আগেই বলেছি। আমরা দেখছি, ইতিমধ্যে বেশ কিছু আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোও প্রস্তুত হয়েছে। তবে ব্যবস্থা বদলে অগ্রগতি এখনও তেমন ঘটেনি। হাওরাঞ্চলে কাঙ্ক্ষিত টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা ও কার্যক্রম নিশ্চিত করতে আইন প্রণেতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। হাওরের জীবনযাত্রা সম্পর্কিত সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ (এপিপিজি) আয়োজিত গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে জাতীয় সংসদের মন্ত্রী হোস্টেলের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘হাওর জনপদে দারিদ্র্য, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও আইন প্রণেতাগণের ভূমিকা’ শীর্ষক নীতি সংলাপে যেসব কথা বলেছিলাম, এ প্রসঙ্গে আমি সেগুলোই পুনর্ব্যক্ত করতে চাই।
আমার জানামতে, হাওরাঞ্চলের সাতটি জেলায় ৩৬টি নির্বাচনী আসন রয়েছে। সেখান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা হাওরাঞ্চলের টেকসই উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমরা দেখেছি, ২০১২ সালে হাওর মহাপরিকল্পনা প্রণীত হওয়ার পর ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করার জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দও রাখা হয়। কিন্তু সেই বরাদ্দ সম্পূর্ণ অব্যবহৃত থেকে যায় উপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাবে। পরবর্তী বাজেটেও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড পুনর্গঠিত হয়েছে। কিছু কার্যক্রম হাতেও নেওয়া হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। সংসদ সদস্যরা ভূমিকা রাখতে পারেন হাওরের জন্য বাজেট বরাদ্দ ও বৃদ্ধি এবং তা পরিকল্পিত ও সঠিকভাবে ব্যয় হওয়ার ক্ষেত্রে।
এছাড়াও সার্বিকভাবে হাওর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের গতি ও অভিমুখ যাতে ঠিক থাকে, সেজন্য সক্রিয় থাকতে পারেন সংসদ সদস্যরা। সংসদ সদস্যরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে হাওরাঞ্চলের পশ্চাৎপদতা জাতীয় সংসদে তুলে ধরতে পারেন, যাতে এসব সমস্যার সমাধানে সংসদ দিকনির্দেশনা প্রদান ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হয়।