হাওর বার্তা ডেস্কঃ জিরা উপমহাদেশীয় রান্নার একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। জিরা শুধু রান্নায় সুগন্ধ বা স্বাদই বৃদ্ধি করে না বরং এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও আছে। জিরায় ভিটামিন, মিনারেল, এসেনশিয়াল অয়েল, ফাইবার, ব্যাকটেরিয়া নাশক, ছত্রাকনাশক, অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান সহ উপকারী সক্রিয় যৌগ থাকে। চলুন তাহলে জেনে নিই জিরার অসাধারণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা।
১। হজমের উন্নতিতে সাহায্য করে
জিরায় থাইমল এবং অন্য এসেনশিয়াল অয়েল থাকে যা লালা গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে খাদ্য হজমে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি মন্থর পরিপাক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী বা গতিশীল হতে সাহায্য করে। আপনি যদি বদহজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে জিরা চা পান করুন। ১ গ্লাস পরিমান পানিতে ১ চামচ জিরা দিয়ে ফুটান। মিশ্রণটি বাদামী বর্ণ ধারণ করলে চুলা বন্ধ করে পাত্রটি ঢেকে রাখুন। ঠান্ডা হওয়ার পর এই চা দিনে ৩ বার পান করুন হজমের উন্নতির জন্য এবং হালকা পেটে ব্যথা সারানোর জন্য। আপনি যদি একটু হালকা চা পান করতে চান তাহলে ১ গ্লাস ফুটন্ত পানিতে সামান্য জিরা দিয়ে ঢেকে রাখুন। ঠান্ডা হওয়ার পর নেড়ে পান করুন পানীয়টি।
২। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
জিরায় উচ্চমাত্রায় ফাইবার থাকে বলে এনজাইম এর নিঃসরণকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট এর কাজের উন্নতিতে সাহায্য করে। এ কারণেই জিরার গুঁড়া প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মূলত জিরার জোলাপের /রেচক গুণের কারণেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা বিশ্বাস করেন যে, এটি পাইলস এর মত মারাত্মক সমস্যা প্রতিরোধে ও নিরাময়ে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানের জন্য জিরা চা পান করতে পারেন অথবা তাওয়ায় জিরা টেলে নিয়ে একে পাউডারের মত গুঁড়া করে পানিতে গুলিয়ে বা মধুর সাথে মিশিয়ে পান করুন খালি পেটে।
৩। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে
আমেরিকার সাউথ ক্যারোলিনা এর হিল্টন হেড আইল্যান্ড এর ক্যান্সার রিসার্চ ল্যাবরেটরি এর দ্বারা পরিচালিত গবেষণায় জানা যায় যে, জিরা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করতে পারে। কারণ জিরায় কিউমিনঅ্যালডিহাইড নামক সক্রিয় যৌগ থাকে যা টিউমারের বৃদ্ধিতে বাঁধা দিতে সাহায্য করে। এই ক্যান্সাররোধী গুনটি কালো জিরায় সীমাবদ্ধ ছিলো। ডাল, তরকারী বা চাটনি প্রস্তুতের সময় এক চিমটি জিরা যোগ করতে ভুলবেন না যেনো।
৪। রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
জিরায় উচ্চমাত্রার পটাসিয়াম থাকে বলে শরীররে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই জিরা হৃদরোগীদের জন্য শ্রেষ্ঠ ঔষধ। এই খনিজ উপাদানটি শুধু কোষের উৎপাদন পরিচালনায় সাহায্য করেনা বরং হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন ১ গ্লাস জিরা পানি।
৫। ঠান্ডা ও অ্যাজমা নিরাময়ে সাহায্য করে
জিরার শক্তিশালী অ্যান্টিইনফ্লামেটরি, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাংগাল গুণের কারণে জিরা ঠান্ডা ও অ্যাজমা নিরাময়ে চমৎকার প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। এই উপাদানগুলো ইমিউনিটিকে প্রেরণা দেয় সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এবং উদ্দীপ্ত পেশীকে শান্ত হতে সাহায্য করে।
এছাড়াও জিরায় আয়রন থাকে বলে অ্যানেমিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে, যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে, গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী, ইনসমনিয়ার মোকাবেলায় সাহায্য করে (প্রতিদিন রাতে পাকা কলার সাথে তাজা জিরার গুঁড়া মিশিয়ে খান) এবং স্মৃতিশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করে (কিছু টালা জিরা প্রতিদিন চিবিয়ে খেতে পারেন)।