ঢাকা ০৭:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে মৃত্যুপথযাত্রীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সেবা ব্যবস্থা সীমিত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০৬:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০১৫
  • ২৮৪ বার

মৃত্যুপথযাত্রী মানুষেরা হাসপাতাল ও সেবা-সদনে কতোটা সেব-যত্ন পান তার ওপর পরিচালিত এক বিশ্ব সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার সবচেয়ে নিচে। একই অবস্থা ইরাকেরও। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান -ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ৮০টি দেশের ওপর এই জরিপটি চালিয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, তাদেরকে সবচে ভালো সেবাযত্ন করা হয় ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে।
সমীক্ষাটি বলছে, বয়স্ক লোকজনের মধ্যে হৃদরোগ ও ক্যান্সারের হার যখন বাড়ছে তখন এই সেবা আরো বাড়ানো দরকার।
জীবনের একেবারে শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশে এই সেবা পাওয়া যায় সাধারণত বাসায় পরিবারের লোকজনের কাছে থেকেই।
কিন্তু এর বাইরে তাদের জন্যে প্রাতিষ্ঠানিক সেবার ব্যবস্থা রয়েছে খুবই সীমিত পর্যায়ে।
গাইবান্ধার আলমগীর হোসেন ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
নানান জটিল রোগে আক্রান্ত তার পিতার আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই, চিকিৎসকরা এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তিন বছর আগে।সেই থেকে তিনি তার পিতাকে ঢাকায় বাসায় রেখে সেবা দিচ্ছেন। পুরো পরিবারটির ওপর একটা মানসিক চাপ পড়েছে। মি: হোসেন মনে করেন, তার পিতার জীবনের শেষ মূহূর্তে তারা পরিবারের সদস্যরা পাশে থেকে সেবা দিতে পারছেন।
ঢাকায় ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন নারী চাকরি ছেড়ে এখন বাসায় শয্যাশায়ী। তার আর সময় নেই, এটি তিনি নিজেই শুনেছেন চিকিৎসকদের কাছ থেকে।তার বক্তব্য হচ্ছে, তাকে নিয়ে পরিবারের ওপর মানসিক চাপের পাশাপাশি অর্থ সমস্যাও বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য তিনি জীবনের শেষ মূহূর্তে হাসপাতালে নয়, পরিবারের সদস্যদের কাছেই থাকছেন। মৃত্যুপথযাত্রী জীবনের শেষ মূহূর্তে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা পেতে পারেন, বাংলাদেশে মানুষের এই ধারণাই এখনও তৈরি হয়নি। চিকিৎসকদের অনেকে বলেছেন, শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষই শেষ মূহূর্তে পরিবারের সদস্যদের কাছে থেকেই বিদায় নিতে চায়।
এছাড়া এই সেবার বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালসহ সরকারি কয়েকটি হাসপাতালে এ ধরণের সেবা ইউনিট আছে এবং হাতেগোনা কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে।সেগুলোও ঢাকাকেন্দ্রিক এবং আনসংখ্যাও কম।
ঢাকায় এ ধরণের নয় শয্যাবিশিষ্ট একটি বসেরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক শাহিনূর কবির বলছিলেন, “মৃত্যুপথযাত্রীদের সেবা দেয়ার প্রতিষ্ঠান সীমিত পর্যায়ে কেবল শুরু হয়েছে বলা যায়। ফলে মানুষের যতটা প্রয়োজন, সেখানে মাত্র শতকরা দুই ভাগ মানুষের জন্য সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে।কিন্তু এর চাহিদা অনেক অনেক বেশি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, “মানুষের জীবনের শেষ মূহূর্তে সেবার দেয়ার জন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসক এবং নার্সেরও অভাব রয়েছে। চিকিৎসকদের মধ্যে এ ব্যাপারে তেমন আগ্রহও তৈরি হয়নি।জনসাধারণেরও এ ব্যাপারে ধারণা নেই।”
চিকিৎসক শাহিনূর কবির বলেছেন, এই সেবায় মূলত চেষ্টা করা হয়, শেষ সময়টাতে মৃত্যুপথযাত্রী ব্যাথ্যা যাতে অনুভব না করেন, তিনি যেনো শান্তিতে থাকতে পারেন।শুধু শারীরিক কষ্ট প্রশোমন করাই নয়। মানসিক সেবার বিষয়কেও এই সেবায় গুরুত্ব দেয়া হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে চিকিৎসকরা এটাও মনে করেন, বাণিজ্যিক চিন্তা থেকে এ ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব নয়।এজন্য সরকারের সহযোগিতা সম্ভব নয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাংলাদেশে মৃত্যুপথযাত্রীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সেবা ব্যবস্থা সীমিত

আপডেট টাইম : ০১:০৬:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০১৫

মৃত্যুপথযাত্রী মানুষেরা হাসপাতাল ও সেবা-সদনে কতোটা সেব-যত্ন পান তার ওপর পরিচালিত এক বিশ্ব সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার সবচেয়ে নিচে। একই অবস্থা ইরাকেরও। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান -ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ৮০টি দেশের ওপর এই জরিপটি চালিয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, তাদেরকে সবচে ভালো সেবাযত্ন করা হয় ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে।
সমীক্ষাটি বলছে, বয়স্ক লোকজনের মধ্যে হৃদরোগ ও ক্যান্সারের হার যখন বাড়ছে তখন এই সেবা আরো বাড়ানো দরকার।
জীবনের একেবারে শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশে এই সেবা পাওয়া যায় সাধারণত বাসায় পরিবারের লোকজনের কাছে থেকেই।
কিন্তু এর বাইরে তাদের জন্যে প্রাতিষ্ঠানিক সেবার ব্যবস্থা রয়েছে খুবই সীমিত পর্যায়ে।
গাইবান্ধার আলমগীর হোসেন ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
নানান জটিল রোগে আক্রান্ত তার পিতার আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই, চিকিৎসকরা এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তিন বছর আগে।সেই থেকে তিনি তার পিতাকে ঢাকায় বাসায় রেখে সেবা দিচ্ছেন। পুরো পরিবারটির ওপর একটা মানসিক চাপ পড়েছে। মি: হোসেন মনে করেন, তার পিতার জীবনের শেষ মূহূর্তে তারা পরিবারের সদস্যরা পাশে থেকে সেবা দিতে পারছেন।
ঢাকায় ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন নারী চাকরি ছেড়ে এখন বাসায় শয্যাশায়ী। তার আর সময় নেই, এটি তিনি নিজেই শুনেছেন চিকিৎসকদের কাছ থেকে।তার বক্তব্য হচ্ছে, তাকে নিয়ে পরিবারের ওপর মানসিক চাপের পাশাপাশি অর্থ সমস্যাও বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য তিনি জীবনের শেষ মূহূর্তে হাসপাতালে নয়, পরিবারের সদস্যদের কাছেই থাকছেন। মৃত্যুপথযাত্রী জীবনের শেষ মূহূর্তে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা পেতে পারেন, বাংলাদেশে মানুষের এই ধারণাই এখনও তৈরি হয়নি। চিকিৎসকদের অনেকে বলেছেন, শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষই শেষ মূহূর্তে পরিবারের সদস্যদের কাছে থেকেই বিদায় নিতে চায়।
এছাড়া এই সেবার বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালসহ সরকারি কয়েকটি হাসপাতালে এ ধরণের সেবা ইউনিট আছে এবং হাতেগোনা কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে।সেগুলোও ঢাকাকেন্দ্রিক এবং আনসংখ্যাও কম।
ঢাকায় এ ধরণের নয় শয্যাবিশিষ্ট একটি বসেরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক শাহিনূর কবির বলছিলেন, “মৃত্যুপথযাত্রীদের সেবা দেয়ার প্রতিষ্ঠান সীমিত পর্যায়ে কেবল শুরু হয়েছে বলা যায়। ফলে মানুষের যতটা প্রয়োজন, সেখানে মাত্র শতকরা দুই ভাগ মানুষের জন্য সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে।কিন্তু এর চাহিদা অনেক অনেক বেশি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, “মানুষের জীবনের শেষ মূহূর্তে সেবার দেয়ার জন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসক এবং নার্সেরও অভাব রয়েছে। চিকিৎসকদের মধ্যে এ ব্যাপারে তেমন আগ্রহও তৈরি হয়নি।জনসাধারণেরও এ ব্যাপারে ধারণা নেই।”
চিকিৎসক শাহিনূর কবির বলেছেন, এই সেবায় মূলত চেষ্টা করা হয়, শেষ সময়টাতে মৃত্যুপথযাত্রী ব্যাথ্যা যাতে অনুভব না করেন, তিনি যেনো শান্তিতে থাকতে পারেন।শুধু শারীরিক কষ্ট প্রশোমন করাই নয়। মানসিক সেবার বিষয়কেও এই সেবায় গুরুত্ব দেয়া হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে চিকিৎসকরা এটাও মনে করেন, বাণিজ্যিক চিন্তা থেকে এ ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব নয়।এজন্য সরকারের সহযোগিতা সম্ভব নয়।