দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের মদদ আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার দুপুর ১২টার দিকে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানাতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুজন বিদেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে একই স্টাইলে। একটি গুলিও মিস হয়নি। অর্থাৎ হত্যাকাণ্ডগুলো ছিল সুপরিকল্পিত। বিএনপির এক নেতার কিছু বক্তব্য ও এরপর তার যে প্রতিক্রিয়া, তা মিলিয়ে নিলেই এ রহস্যের উত্তর পাওয়া যাবে। দেশকে অস্থিতিশীল করতেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। যে ঘটনাই ঘটছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দুই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে। কারো ফাঁসির রায় কার্যকরের সময় যখন ঘনিয়ে আসছে, তখনই এসব হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ করতে অনেক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, এর কিছু পাল্টা প্রতিক্রিয়া তো হবেই। প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, একটা পক্ষ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারা এটা অব্যাহত রাখবে। এটা ওটা ঘটাতেই থাকবে। আমরা মানবতাবিরোধীদের বিচার করতেই থাকবো আর তারা চুপচাপ বসে থাকবে, তা তো হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে এসব করা হচ্ছে। তা হতে দেবো না। এগুলো আমরা প্রতিরোধ করে যাচ্ছি, করে যাবো। বিএনপি নেত্রী তো তিন মাস এক অফিসের মধ্যে বসে থেকেই দেড় শ-দুই শ মানুষ হত্যা করলেন। কয়েক হাজার মানুষকে আহত করলেন। এটা কিন্তু সারা বিশ্বও ভালোভাবে নেয়নি। ওই তিন মাস সময় নষ্ট করা সত্ত্বেও আমরা ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছি। যে যেভাবেই ব্যাখ্যা দিক, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ এর ফলও ভোগ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, মেয়েরা পাকিস্তানে খেলতে যাবে না কেন, পাকিস্তান একটা দেশ, তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক শেষ হয়নি। তাই খেলতে না যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। তিনি আরো বলেন এটা সম্পূর্ণ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ব্যাপার।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, দেশে যে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে তার স্টাইল একই রকমের। সুতরাং এটি যে সুপরিকল্পিত ঘটনা তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল যে এখানে তাদের সফর বাতিল করল, তারপর সেদেশেই বা কি ঘটলো, সেদিকেও খেয়াল রাখুন। অথবা যুক্তরাষ্ট্রেই যে ১০ জন গুলিতে মারা গেল সে ব্যাপারে তারা কি বলবেন।’ বিদেশে যখন কোনও বাঙালি মারা যান তখন সেটিকে কেনও গুরুত্ব দেওয়া হয় না বলেও দেশের গণমাধ্যমগুলোর প্রতি প্রশ্ন রাখেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে এ ধরনের মানসিক দৈন্যতায় না ভুগতেও আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে ঘটনা ঘটলেও আমি যেখানেই থাকি, প্রতিনিয়ত সবকিছু জানতে পারি। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের সব অর্জন যদি ধুয়ে যায় এ দুই ঘটনায়, তাহলে বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্য সফল হবে। কাজেই সেটাও হতে দিতে পারি না। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এবারের অংশগ্রহণে সাফল্য, চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ ও আইসিটি অ্যাওয়ার্ড অর্জনসহ বিভিন্ন বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে যোগদান শেষে শনিবার দুপুরে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অধিবেশনে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন তিনি।