সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কুটনীতিকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দলের অভ্যন্তরীণ ইস্যু এবং কুটনৈতিক কর্মকান্ডকে ফেসবুকে দিয়ে ব্যক্তি প্রচারণার বিরুদ্ধে রেড এলার্ট জারি করেছেন তিনি। স্থানীয় সময় রোববার রাতে লন্ডনের কিংসটনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া এ রেড এলার্ট জারি করেন। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে বিএনপি ও অঙ্গদলের প্রতিটি ইউনিটকে নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনার কথাও বলেন তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করুন। তবে দলের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ এজেন্ডা নিয়ে ফেসবুকে সময় নষ্ট করার দরকার কী? যারা কুটনৈতিক দায়িত্ব পালন করবেন, তা দলীয় সিদ্ধান্তে মিডিয়ায় যেতে পারে। ফেসবুকে দিয়ে দলীয় ও জাতীয় ইস্যুকে হালকা করা যাবে না। কোনো ইস্যুকে অধিক প্রচারণার দরকার হলে সেটা দলীয় সিদ্ধোন্তেই করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। আন্দোলনের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা রাজপথের কর্মী, তারা ফেসবুকের কর্মী হওয়ার কোনো দরকার নেই। হিউম্যান রাইটস্ ইস্যুতে যে যার মতামত দিতেই পারে। কিন্তু, দলের মূল শক্তি হলো রাজপথের কর্মী। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফুলটাইম ব্যয় করলে মাঠে কাজ করবে কারা? রাজপথের কর্মীদের সঙ্গে দলের চেয়ারপার্সন পর্যন্ত কমিটি টু কমিটি এবং নেতৃত্ব ও নেতৃত্ব চেইন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, দলে চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠা এবং একটি সুপরিকিল্পত আন্দোলনের কাঠামো তৈরীতে মনোযোগী হতে হবে। বিগত আন্দোলনে ভুমিকা বিবেচনায় নতুনভাবে সব ইউনিটকে সাজানোর পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা বিএনপির নেতারা গত আন্দোলনে দলের পক্ষে তাদের কুটনৈতিক কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরেন চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। বেগম খালেদা জিয়া সব ধরণের অভ্যন্তরীন ভেদাভেদ ভুলে বাংলাদেশকে স্বৈরাচারী শাসনের হাত থেকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে তাদের নির্দেশ দেন। বিশেষ করে প্রবাসে ব্যক্তিভেদে গ্রুপ ভুলে এক প্লাটফর্মে এসে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি পালন এবং কুটনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা গিয়াস উদ্দিন আহমেদ (নিউইয়র্ক), শাহ মোজাম্মেল নান্টু (শিকাগো), সৈয়দ বদরে আলম (বোস্টন), ইলিয়াস খান (ফ্লোরিডা), কানাডা বিএনপির নেতা ফয়সল আহমেদ চৌধুরী ও বাংলাদেশী প্রবাসী নাগরিক কমিটি, কানাডার সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।
উল্লখ্যে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আসেন। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে দীর্ঘ নয় বছর পর তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করেন। তাঁর চোখে এবং পায়ের চিকিৎসা চলছে। প্রথমত ১ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা থাকলেও চিকিৎসার দীর্ঘ সূত্রিতায় প্রথম দফায় পিছিয়ে তিনি ৮ অক্টোবর দেশে ফেরার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে আবারো তার দেশে ফেরা পিছিয়েছে। দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে।