ঢাকা ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনেক ঘটনার ম্যাচে নায়ক ‘লাল কার্ডধারী’ এমবাপে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:১০:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • ৩৪২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একটা ম্যাচে কত রকমের গোল হতে পারে? আর কতজনই বা নায়ক হতে পারেন? কয়জন নায়ক বনে যেতে পারেন কে বলতে পারবে! তবে গতকাল শনিবার ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে নিম ও পিএসজির মধ্যকার ম্যাচটিতে নায়ক দাবিদার অন্তত ৫ জন! নেইমার, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, ববিচন, এডিনসন কাভানি-চাইলে এদের সবাই নিজেদের নায়ক দাবি করতে পারে।

তবে ম্যাচ অ্যাডজুকেটসদের বিচারে এদের সবাইকে ছাপিয়ে নায়ক-স্বীকৃতি পেয়েছেন কিলিয়ান এমবাপে! দর্শক এবং ফুটবলবোদ্ধাদের রায়েও নিম-পিএসজির ম্যাচটির সত্যিকার নায়ক এমবাপেই। পিএসজির ৪-২ গোলে জেতা ম্যাচটাতে সবচেয়ে বড় অবদান তারই। দুঃখের বিষয় হলো, নায়ক বনে যাওয়া এই ম্যাচটাতে ফরাসি বিস্ময়বালককে মুখোমুখি হতে হয়েছে বড় একটা ট্র্যাজেডি’রও। ম্যাচের শেষ দিকে দেখতে হয়েছে লালকার্ড। সেটা আবার তার ক্যারিয়ারের প্রথম লালকার্ড!

শুরুর ওই প্রশ্ন দুটোই বলে দিচ্ছে শনিবারের এই ম্যাচটা ছিল ঘটনার ঘনঘটায় ভরা। কি ঘটেনি ম্যাচটাতে! স্লাইড গোল, কর্নার থেকে সরাসরি গোল, পেনাল্টি গোল, বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার শটে গোল-সব রকম গোলই দেখেছে ৬ গোলের ম্যাচটি।

তারকাখচিত পিএসজির সামনে দুর্বল নিম স্রেফ উড়ে যাবে, ম্যাচ শুরুর আগে এমনটাই ছিল অনুমিত। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ের চিত্রটা ঠিক তার উল্টো। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ২-৪ গোলে হার মেনেছে নিম। তবে হার মানার আগ পর্যন্ত সমানে সমানে লড়াই করেছে। ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিল রোমাঞ্চে ভরা। ম্যাচের ৭৭ মিনিট পর্যন্ত প্রথম বারের মতো ড্র শঙ্কায় পুরতে হয়েছে পিএসজিকে।

ম্যাচের শুরু থেকেই দৈত্য পিএসজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়তে থাকে পুঁচকে নিম। তবে ৩৫ মিনিটের পর হঠাৎই খেই হারিয়ে ফেলে নিম। ৩৬ থেকে ৪০, ৪ মিনিটের ব্যবধানে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি। ৩৬ মিনিটে পিএসজিকে প্রথম এগিয়ে দেন নেইমার। ব্রাজিলিয়ান তারকা ম্যাচে গোলের সূচননা করেন দারুণ এক স্লাইডশটে। ছোট বক্সের সামনে দিয়ে মুনিয়েরের দুর্দান্ত ক্রস। অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে ডাইভ দিয়ে স্লাইড করে বল জালে জড়িয়ে দেন নেইমার।

এর রেশ না কাটতেই আবারও পিএসজিকে উৎসবে ভাসান অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। পিএসজির আর্জেন্টাইন তারকা সরাসরি কর্নার কিক থেকে করে বসেন অবিশ্বাস্য এক গোল। তার বাকানো কর্নার কিক নিমের গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে ঢূকে যায় জালে। এবং সেটাও প্রথম পোস্টের কোণ ঘেষে!

২-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় পিএসজি। ম্যাচে তখন পিএসজির বড় জয়েরই ইঙ্গিত। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেয় সেই ১৯৯২-৯৩ মৌসুমের পর ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে ফিরে আসা নিম। ৬৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার বুলেট শটে ব্যবধান ২-১ করেন ববিচন। ৭১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে নিমকে সমতাই এনে দেন ফরাসি মিডফিল্ডার তেজি সাভানিয়ে।

এই গোলটির দায় অবশ্য পিএসজি অধিনায়ক থিয়াগো সিলভার। ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার প্রতিপক্ষ এক খেলোয়াড়কে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় নিম। অবশ্য রেফারি প্রথমে পেনাল্টি দেননি। নিমের খেলোয়াড়েরা তাই রিভিউ চান। রিভিউয়ে জয়ও হয় তাদের। ভিডিও দেখে পেনাল্টির সিদ্ধান্তই নেন রেফারি।

যাই হোক, ২-২ সমতার পর পিএসজি শিবিরে মৌসুমে প্রথম বারের মতো ড্র শঙ্কাই চেপে বসেছিল। অবশেষে ৭৭ মিনিটে সেই শঙ্কা মুছে দেন এমবাপে। দারুণ এক গোল করে বিশ্বকাপ মাতানো এমবাপে নতুন করে খুলে দেন দলের জয়ের দরজা। পরে কাভানির জয় নিশ্চিত করা গোলটিতেও অবদান আছে তার। তার পাস থেকেই গোলটি করেন উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড।

নিজে গুরুত্বপূর্ণ একটি গোল করেছেন। সতীর্থকে দিয়ে আরেকটি করিয়েছেন। নেইমার-ডি মারিয়াদের ছাপিয়ে ১৯ বছর বয়সী এমবাপেই সত্যিকারের নায়ক। কিন্তু কে জানত, অবিশ্বাস্য এই ম্যাচটার শেষে লালকার্ড ট্র্যাজেডি অপেক্ষা করছে তার জন্য!

ম্যাচের শেষ দিকে বল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নিমের সাভানিয়ে। অনৈকটা ফাঁকায় ছিলেন তিনি। বিপদ বুঝে দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে তাকে কড়া ট্যাকল করেন এমবাপে। দৌড়ে এসে রেফারি সরাসরি দেখান তাকে। ম্যাচের নায়ককে মাঠ ছাড়তে হয় ক্যারিয়ারের প্রথম লালকার্ড পাওয়ার বেদনায় মাথা নিচু করে!

লালকার্ড মূলত খেলোয়াড়দের খলনায়ক বানিয়ে দেয়। কিন্তু এদিন লালকার্ডের পরও এমবাপে নায়ক। ফুটবল আসলে সবই পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

অনেক ঘটনার ম্যাচে নায়ক ‘লাল কার্ডধারী’ এমবাপে

আপডেট টাইম : ০২:১০:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একটা ম্যাচে কত রকমের গোল হতে পারে? আর কতজনই বা নায়ক হতে পারেন? কয়জন নায়ক বনে যেতে পারেন কে বলতে পারবে! তবে গতকাল শনিবার ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে নিম ও পিএসজির মধ্যকার ম্যাচটিতে নায়ক দাবিদার অন্তত ৫ জন! নেইমার, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, ববিচন, এডিনসন কাভানি-চাইলে এদের সবাই নিজেদের নায়ক দাবি করতে পারে।

তবে ম্যাচ অ্যাডজুকেটসদের বিচারে এদের সবাইকে ছাপিয়ে নায়ক-স্বীকৃতি পেয়েছেন কিলিয়ান এমবাপে! দর্শক এবং ফুটবলবোদ্ধাদের রায়েও নিম-পিএসজির ম্যাচটির সত্যিকার নায়ক এমবাপেই। পিএসজির ৪-২ গোলে জেতা ম্যাচটাতে সবচেয়ে বড় অবদান তারই। দুঃখের বিষয় হলো, নায়ক বনে যাওয়া এই ম্যাচটাতে ফরাসি বিস্ময়বালককে মুখোমুখি হতে হয়েছে বড় একটা ট্র্যাজেডি’রও। ম্যাচের শেষ দিকে দেখতে হয়েছে লালকার্ড। সেটা আবার তার ক্যারিয়ারের প্রথম লালকার্ড!

শুরুর ওই প্রশ্ন দুটোই বলে দিচ্ছে শনিবারের এই ম্যাচটা ছিল ঘটনার ঘনঘটায় ভরা। কি ঘটেনি ম্যাচটাতে! স্লাইড গোল, কর্নার থেকে সরাসরি গোল, পেনাল্টি গোল, বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার শটে গোল-সব রকম গোলই দেখেছে ৬ গোলের ম্যাচটি।

তারকাখচিত পিএসজির সামনে দুর্বল নিম স্রেফ উড়ে যাবে, ম্যাচ শুরুর আগে এমনটাই ছিল অনুমিত। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ের চিত্রটা ঠিক তার উল্টো। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ২-৪ গোলে হার মেনেছে নিম। তবে হার মানার আগ পর্যন্ত সমানে সমানে লড়াই করেছে। ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিল রোমাঞ্চে ভরা। ম্যাচের ৭৭ মিনিট পর্যন্ত প্রথম বারের মতো ড্র শঙ্কায় পুরতে হয়েছে পিএসজিকে।

ম্যাচের শুরু থেকেই দৈত্য পিএসজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়তে থাকে পুঁচকে নিম। তবে ৩৫ মিনিটের পর হঠাৎই খেই হারিয়ে ফেলে নিম। ৩৬ থেকে ৪০, ৪ মিনিটের ব্যবধানে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি। ৩৬ মিনিটে পিএসজিকে প্রথম এগিয়ে দেন নেইমার। ব্রাজিলিয়ান তারকা ম্যাচে গোলের সূচননা করেন দারুণ এক স্লাইডশটে। ছোট বক্সের সামনে দিয়ে মুনিয়েরের দুর্দান্ত ক্রস। অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে ডাইভ দিয়ে স্লাইড করে বল জালে জড়িয়ে দেন নেইমার।

এর রেশ না কাটতেই আবারও পিএসজিকে উৎসবে ভাসান অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। পিএসজির আর্জেন্টাইন তারকা সরাসরি কর্নার কিক থেকে করে বসেন অবিশ্বাস্য এক গোল। তার বাকানো কর্নার কিক নিমের গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে ঢূকে যায় জালে। এবং সেটাও প্রথম পোস্টের কোণ ঘেষে!

২-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় পিএসজি। ম্যাচে তখন পিএসজির বড় জয়েরই ইঙ্গিত। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেয় সেই ১৯৯২-৯৩ মৌসুমের পর ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে ফিরে আসা নিম। ৬৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার বুলেট শটে ব্যবধান ২-১ করেন ববিচন। ৭১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে নিমকে সমতাই এনে দেন ফরাসি মিডফিল্ডার তেজি সাভানিয়ে।

এই গোলটির দায় অবশ্য পিএসজি অধিনায়ক থিয়াগো সিলভার। ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার প্রতিপক্ষ এক খেলোয়াড়কে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় নিম। অবশ্য রেফারি প্রথমে পেনাল্টি দেননি। নিমের খেলোয়াড়েরা তাই রিভিউ চান। রিভিউয়ে জয়ও হয় তাদের। ভিডিও দেখে পেনাল্টির সিদ্ধান্তই নেন রেফারি।

যাই হোক, ২-২ সমতার পর পিএসজি শিবিরে মৌসুমে প্রথম বারের মতো ড্র শঙ্কাই চেপে বসেছিল। অবশেষে ৭৭ মিনিটে সেই শঙ্কা মুছে দেন এমবাপে। দারুণ এক গোল করে বিশ্বকাপ মাতানো এমবাপে নতুন করে খুলে দেন দলের জয়ের দরজা। পরে কাভানির জয় নিশ্চিত করা গোলটিতেও অবদান আছে তার। তার পাস থেকেই গোলটি করেন উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড।

নিজে গুরুত্বপূর্ণ একটি গোল করেছেন। সতীর্থকে দিয়ে আরেকটি করিয়েছেন। নেইমার-ডি মারিয়াদের ছাপিয়ে ১৯ বছর বয়সী এমবাপেই সত্যিকারের নায়ক। কিন্তু কে জানত, অবিশ্বাস্য এই ম্যাচটার শেষে লালকার্ড ট্র্যাজেডি অপেক্ষা করছে তার জন্য!

ম্যাচের শেষ দিকে বল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নিমের সাভানিয়ে। অনৈকটা ফাঁকায় ছিলেন তিনি। বিপদ বুঝে দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে তাকে কড়া ট্যাকল করেন এমবাপে। দৌড়ে এসে রেফারি সরাসরি দেখান তাকে। ম্যাচের নায়ককে মাঠ ছাড়তে হয় ক্যারিয়ারের প্রথম লালকার্ড পাওয়ার বেদনায় মাথা নিচু করে!

লালকার্ড মূলত খেলোয়াড়দের খলনায়ক বানিয়ে দেয়। কিন্তু এদিন লালকার্ডের পরও এমবাপে নায়ক। ফুটবল আসলে সবই পারে।