হাওর বার্তা ডেস্কঃ চারদিকে থৈ থৈ পানি। বর্ষা মৌসুমে এখানকার নিচু এলাকা প্রতি বছরই প্লাবিত হয়। বাড়ির আশেপাশে সবখানেই পানি জমে আছে কিন্তু এতেই হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই চাষিরা। অনাবাদি জমিতে আগাছা ও কচুরিপনার স্তূপ সাজিয়ে তার ওপর ভাসমান সবজি চাষ করছেন তারা। এ পদ্ধতিতে চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখছেন অনেকে। সার-কীটনাশক ছাড়া চাষ করা এ ধরনের সবজির চাহিদাও রয়েছে বাজারে প্রচুর।
স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন বিল ও জলাশয়ে কচুরি ও আগাছার ধাপ টেনে এই ভাসমান সবজির চাষ করা হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এ ধরনের পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হলেও তেমন গুরুত্ব পাইনি কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় কৃষি অফিস এ চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে নানা ধরনের সহায়তা প্রদান করছে। ফলে চাষিরা উৎসাহী হয়ে বাণিজ্যিকভাবে এটি চাষের প্রতি জোর দিয়েছেন। এতে কৃষি কাজে এক নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। চিতলমারীর রুইয়েরকূল, বেন্নাবাড়ি, কোদালিয়া বিলে ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বন্যাবাড়ি, মিত্রডাঙ্গা, জোয়ারিয়া, পাথরঘাটা, চাপরাইল, রুপাহাটের বিভিন্ন বিলসহ আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা এখন ভাসমান বেডে সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। রাত-দিন ক্ষেতের পরিচর্যায় সময় পার করছেন তারা।
স্থানীয় কৃষি অফিসের সূত্রে জানা গেছে, এখানকার প্রায় ৮০ হেক্টর অনাবাদি জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে ঢেঁড়স, পুঁইশাক, লালশাক, বরবটি, শসা, করলা, লাউ, কুমড়া, কচু ও হলুদসহ বিভিন্ন রকমের শাক সবজি ও মসলার চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে পানির ওপর ভাসমান ক্ষেত তৈরি ও চাষাবাদ করার জন্য প্রয়োজনীয় বীজ, নেটসহ প্রয়োজনীয় কাজে শ্রমিকের মূল্যসহ সার্বিক ভাবে পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছে স্থানীয় কৃষি অফিস। এতে এ সকল চাষিরা উদ্বুদ্ধ হয়ে আগ্রহের সঙ্গে ভাসমান সবজি চাষে বেশির ভাগ সময় পার করছেন।
ভাসমান সবজি চাষের সঙ্গে যুক্ত কৃষক বরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, রবিন দাস, হরেন্দ্রনাথ বসু, জোয়ারিয়া গ্রামের নরোত্তম বালা, অনিমেষ চন্দ্র সরকারসহ অনেকে জানান, এটি একটি বিল এলাকা। এখানকার অধিকাংশ জমি বর্ষা মৌসুমে পানিতে প্লাবিত হয়। ফলে চাষাবাদের তেমন কোনো জমি নেই। এ সময়টায় চাষিদের হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হয়। উপজেলার বেশিরভাগ নিচু জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। এখন অনেকেই ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন। সার-কীটনাশক ছাড়াই এটি চাষ করা হয়।
সবজির স্বাদ ও গুণগতমান বজায় থাকে। ফলে বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আগামীতে আরো নানা ধরনের পরিকল্পনার কথা জানালেন এসব চাষিরা। উপজেলা কৃষি অফিসার জামাল উদ্দিন জানান, উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের নিচু এলাকাগুলোতে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষের উপর নানা ধরনের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এখানকার চাষিদের সবজি চাষে বেশ সাড়া মিলেছে। আগামীতে এ পদ্ধতি আরো ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলবে চাষিদের মাঝে। এর জন্য সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা পাবে কৃষি অফিস থেকে।