ঢাকা ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরগঞ্জের নারিকেলী কচু বিদেশেও রফতানি হচ্ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অগাস্ট ২০১৮
  • ৩৯৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলায় কচু চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানে কচু চাষ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। এই উপজেলায় রামদী, মনোহরপুর, জগৎচর, গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর, সালুয়া, চরকামালপুরসহ আরো অনেক এলাকায় কচুর আবাদ হয়। উপজেলায় সাধারনত দুই জাতের কচুর আবাদ হয়। সাদা কচু এবং নারিকেলী কচু। নারকেলী কচুর চাহিদা ও বাজারমূল্য বেশি থাকায় কৃষকরা এই কচু আবাদে আগ্রহী বেশি। কুলিয়ারচর উপজেলার কচু ইউরোপ, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, ব্রাজিল, সৌদী আরব, দুবাই, কাতার, কুয়েত মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

সালুয়া ইউনিয়নের চরকামালপুরের কচু চাষি মনির হোসেন মঞ্জিল বলেন, প্রতি বছর কচু চাষ করি। এক কানি জমিতে নারিকেলী কচু চাষ করতে খরচ ১০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৫০-৬০ হাজার টাকায়। সাদা কচু চাষে খরচ হয় ৮ হাজার টাকা। বিক্রি হয় প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।

মনোহরপুরের কচু চাষি মো. গোলাপ বলেন, এইচএসসি পাশ করে ঢাকা সিএইচএম এর চাকরি নেই। পরে সেটা ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে এসে কৃষি কাজ শুরু করি। বর্তমানে কচু চাষ করে সংসারের খরচ চালিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা করাচ্ছি।

রামদী ইউনিয়নের মনোহরপুরের কচু চাষি মো. অহিদ মিয়া বলেন, আমি সাদা কচু চাষ করেছি। ৪৫ শতশ জমিতে সাদা কচু চাষ করতে খরচ হয় ২৩ হাজার টাকা। বিক্রি করতে পারি ১ লাখ টাকায়। যা ধানের চেয়ে ৪ গুণ বেশি লাভজনক।

বড়খারচর গ্রামের কচু ব্যবসায়ী মো. আঙ্গুর মিয়া বলেন, ১২-১৫ বছর এ ব্যবসা করে আসছি। চাষিদের থেকে কচু ক্রয় করে ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিক্রি করি। এছাড়া ভৈরব, বাজিতপুর, সরারচর বাজার, পিরিজপুর বাজার ও কটিয়াদীতে কচু পাইকারি বিক্রি করি। এ বছর কচুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সবাই লাভবান হচ্ছি।

কুলিয়ারচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আমার এ উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বেশি কচু চাষ করা হয়। গত বছরের তুলনায় এবার কচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের চেয়ে চারগুণ অধিক লাভবান হওয়ায় কচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা। এ কচু এখন ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়াসহ বেশকিছু দেশে রফতানিও হচ্ছে।

তিনি বলেন, চার মাস কচু আবাদের পর একই জমিতে ধান (রোপা আমন) চাষ করতে পারেন। তাই উচ্চমূল্য ফসল হিসেবে কচু উৎপাদনে কুলিয়ারচর উপজেলার কৃষকেরা সফল।

কৃষি কর্মকর্তা জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে মোট ১৪ হাজার মেট্রিক টন কচু উৎপাদিত হয়েছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০৫ হেক্টর জমিতে মোট ১৯ হাজার মেট্রিকটন কচু উৎপাদন হয়েছে। কচু উৎপাদনে মোট সময় লাগে চার মাস।

কৃষক ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সাধারনত অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসের দিকে কচু রোপন করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কাটা হয়। কচু উৎপাদনে বিঘা প্রতি চারা প্রয়োজন ৪ হাজার।

চারা থেকে চারার দুরত্ব ২৪ ইঞ্চি এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৪ ইঞ্চি বজায় রাখা হয়। কচু উৎপাদনে বিঘা প্রতি ইউরিয়া ৫০ কেজি, টিএসপি ৫০ কেজি, এমওপি ৫০ কেজি, জিপসাম ৩০ কেজি, জিংক সালফেট ৩ কেজি ব্যবহার করা হয়।

কচু উৎপাদনে বিঘা প্রতি খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এই খরচ কৃষকেরা কচুর লতি বিক্রি করেই উপার্জন করে থাকেন।

এছাড়া কচু বিক্রি করে কৃষক বিঘা প্রতি ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করে থাকেন। ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজী প্রোগ্রাম এর আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্মকর্তা এবং কৃষকদের বিষমুক্তভাবে কচু উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

সেক্স ফেরোমোন ট্র্যাপ ব্যবহার করে কচুর পোকা দমন করা হয়। এক্ষেত্রে বিঘা প্রতি ৭-৯ টি সেক্স ফেরোমোন ট্র্যাপের প্রয়োজন হয়।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কচু কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ এবং আঁশ জাতীয় একটি সবজি। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, এবং বি-৬, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ। এছাড়াও কচু অ্যানিমিরা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং উচ্চ রক্তচাপ দূরকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কিশোরগঞ্জের নারিকেলী কচু বিদেশেও রফতানি হচ্ছে

আপডেট টাইম : ১১:২৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অগাস্ট ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলায় কচু চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানে কচু চাষ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। এই উপজেলায় রামদী, মনোহরপুর, জগৎচর, গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর, সালুয়া, চরকামালপুরসহ আরো অনেক এলাকায় কচুর আবাদ হয়। উপজেলায় সাধারনত দুই জাতের কচুর আবাদ হয়। সাদা কচু এবং নারিকেলী কচু। নারকেলী কচুর চাহিদা ও বাজারমূল্য বেশি থাকায় কৃষকরা এই কচু আবাদে আগ্রহী বেশি। কুলিয়ারচর উপজেলার কচু ইউরোপ, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, ব্রাজিল, সৌদী আরব, দুবাই, কাতার, কুয়েত মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

সালুয়া ইউনিয়নের চরকামালপুরের কচু চাষি মনির হোসেন মঞ্জিল বলেন, প্রতি বছর কচু চাষ করি। এক কানি জমিতে নারিকেলী কচু চাষ করতে খরচ ১০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৫০-৬০ হাজার টাকায়। সাদা কচু চাষে খরচ হয় ৮ হাজার টাকা। বিক্রি হয় প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।

মনোহরপুরের কচু চাষি মো. গোলাপ বলেন, এইচএসসি পাশ করে ঢাকা সিএইচএম এর চাকরি নেই। পরে সেটা ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে এসে কৃষি কাজ শুরু করি। বর্তমানে কচু চাষ করে সংসারের খরচ চালিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা করাচ্ছি।

রামদী ইউনিয়নের মনোহরপুরের কচু চাষি মো. অহিদ মিয়া বলেন, আমি সাদা কচু চাষ করেছি। ৪৫ শতশ জমিতে সাদা কচু চাষ করতে খরচ হয় ২৩ হাজার টাকা। বিক্রি করতে পারি ১ লাখ টাকায়। যা ধানের চেয়ে ৪ গুণ বেশি লাভজনক।

বড়খারচর গ্রামের কচু ব্যবসায়ী মো. আঙ্গুর মিয়া বলেন, ১২-১৫ বছর এ ব্যবসা করে আসছি। চাষিদের থেকে কচু ক্রয় করে ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিক্রি করি। এছাড়া ভৈরব, বাজিতপুর, সরারচর বাজার, পিরিজপুর বাজার ও কটিয়াদীতে কচু পাইকারি বিক্রি করি। এ বছর কচুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সবাই লাভবান হচ্ছি।

কুলিয়ারচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আমার এ উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বেশি কচু চাষ করা হয়। গত বছরের তুলনায় এবার কচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের চেয়ে চারগুণ অধিক লাভবান হওয়ায় কচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা। এ কচু এখন ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়াসহ বেশকিছু দেশে রফতানিও হচ্ছে।

তিনি বলেন, চার মাস কচু আবাদের পর একই জমিতে ধান (রোপা আমন) চাষ করতে পারেন। তাই উচ্চমূল্য ফসল হিসেবে কচু উৎপাদনে কুলিয়ারচর উপজেলার কৃষকেরা সফল।

কৃষি কর্মকর্তা জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে মোট ১৪ হাজার মেট্রিক টন কচু উৎপাদিত হয়েছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০৫ হেক্টর জমিতে মোট ১৯ হাজার মেট্রিকটন কচু উৎপাদন হয়েছে। কচু উৎপাদনে মোট সময় লাগে চার মাস।

কৃষক ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সাধারনত অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসের দিকে কচু রোপন করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কাটা হয়। কচু উৎপাদনে বিঘা প্রতি চারা প্রয়োজন ৪ হাজার।

চারা থেকে চারার দুরত্ব ২৪ ইঞ্চি এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৪ ইঞ্চি বজায় রাখা হয়। কচু উৎপাদনে বিঘা প্রতি ইউরিয়া ৫০ কেজি, টিএসপি ৫০ কেজি, এমওপি ৫০ কেজি, জিপসাম ৩০ কেজি, জিংক সালফেট ৩ কেজি ব্যবহার করা হয়।

কচু উৎপাদনে বিঘা প্রতি খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এই খরচ কৃষকেরা কচুর লতি বিক্রি করেই উপার্জন করে থাকেন।

এছাড়া কচু বিক্রি করে কৃষক বিঘা প্রতি ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করে থাকেন। ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজী প্রোগ্রাম এর আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্মকর্তা এবং কৃষকদের বিষমুক্তভাবে কচু উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

সেক্স ফেরোমোন ট্র্যাপ ব্যবহার করে কচুর পোকা দমন করা হয়। এক্ষেত্রে বিঘা প্রতি ৭-৯ টি সেক্স ফেরোমোন ট্র্যাপের প্রয়োজন হয়।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কচু কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ এবং আঁশ জাতীয় একটি সবজি। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, এবং বি-৬, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ। এছাড়াও কচু অ্যানিমিরা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং উচ্চ রক্তচাপ দূরকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।