কাবিখা, টাবিখা, কর্মসৃজন কিংবা সরকারের বিশেষ কোনো প্রকল্প নয়, দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় লিচু বাগানে কমপক্ষে এক লাখ নারীর এক মাসের কর্মসংস্থান হয়েছে।
১৩ মে থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসংস্থান চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। সংসারের পাশাপাশি নারীরা গড়ে ২৫০ টাকা করে এক মাসে সাড়ে সাত হাজার করে টাকা আয় করবেন। সঙ্গে তারা পরিবারের জন্য পাবেন পর্যাপ্ত লিচু।
দিনাজপুরে লিচু মৌসুম শুরু হয়েছে। বাগানিরা তাদের বাগানের লিচু ভাঙতে শুরু করেছেন। বাজারে আসতে শুরু করেছে মাদ্রাজি লিচু। এরপর বাজারের একে একে আসবে বেদানা, তার পর আসবে চায়না-১, চায়না-২ ও চায়না-৩ ও লিচুর রাজা বোম্বাই। সবার শেষে বাজারে আসবে কাঁঠালি লিচু। এ ছাড়াও লিচুর আরও কয়েকটি জাত রয়েছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের ১৩ উপজেলার মাটি ও জলবায়ু লিচু উৎপাদনে উপযোগী হওয়ায় দিনাজপুরে লিচু চাষে রীতিমত বিপ্লব ঘটেছে। দিনাজপুরে চার হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ২৯৮টি বাগানে ৬ লাখ ৪৫টি গাছে লিচু উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার ২২৭ টন।
লিচু বাগানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনাজপুরে বাগানগুলোতে লিচু ভাঙতে শুরু করেছেন। এ বাগানগুলোতে নারীরা লিচু বাছাই ও বাঁধার কাজ করছেন। একেকটি বাগানে ১৫ থেকে শুরু করে ৩০ জন পর্যন্ত নারী কাজ করছেন। যারা গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫০ টাকা করে মজুরি পেয়ে থাকেন। কাজ চলবে এক মাস। তাতে করে নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি লিচু বাছাই ও গুনে গুনে লিচু বেঁধে এক মাসে কমপক্ষে সাড়ে সাত হাজার টাকা আয় করবেন। যা তাদের বাড়তি চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে।
লিচু বাগানি ও ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম, লুৎফর রহমান ও জাকির হোসেন জানান, লিচুর এই মৌসুমে কমপক্ষে এক লাখ নারীর এক মাসের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে।
সদর উপজেলার মাসিমপুর লিচু বাগানে কাজ করতে আসা ছাবিয়া, মজিনা, সুমি ও জাহেদা জানান, এই কাজ তারা প্রতিবছর করে থাকেন। সংসারের কাজের পাশাপাশি তারা এ কাজ করে থাকেন। তারা সকাল ৯টায় আসেন আর দুপুর ২টার দিকে কাজ শেষ করে চলে যান। বিকেলে লিচু ভাঙলে বাগানিরা খবর পাঠান বা মোবাইলে জানালে তারা বিকেলে এসে কাজ করেন। পাশাপাশি যেসব লিচুর বোঁটা ছুটে যায়, ফেটে যায় বা কালো দাগ থাকে সেসব লিচু বাগানিরা আমাদের দিয়ে দেন।
দিনাজপুর কৃষি অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, তিন-চার বছর ধরে নারীরা লিচু বাগানে কাজ করছেন। নারীদের মজুরি কম, কাজ পরিচ্ছন্ন হওয়ায় বাগানি ও ব্যবসায়ীরা নারী শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাতে বেশি আগ্রহী।