মাচার উপরে শীতলাউ, নিচে আদা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শেরপুর জেলার নকলার ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্যান্য নদীর তীরবর্তী এলাকায় বছরের পাঁচ থেকে সাত মাসই পানি জমাট থাকে বা জমির জো থাকে না। সেখানে বছরে একবার বোরো ধান চাষ করা যায়। এ অবস্থায় বিকল্প আয় ও অন্য ফসল উৎপাদনের উপায় খুঁজতে গিয়ে মাচায় শীতলাউ এবং মাচার নিচে খাট জাতের স্বল্পকালীন বিভিন্ন শাক-সবজি চাষের পরিকল্পনা করে আবাদ শুরু করেন নারায়ণখোলা এলাকার কৃষক মো. সুরুজ আলী।

কিছুদিন পরই সফলতা আসতে শুরু করে। উপরে শীতলাউ নিচে শাক-সবজির বাম্পার ফলন হয়। বছর না ঘুরতেই লাভের মুখ দেখতে পান সুরুজ আলী। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তার কৃষি জমিতি ৪/৫ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। শ্রমিকরা কেউ মাসিক, আবার কেউবা দিন চুক্তিতে কাজ করছেন।

সুরুজ আলীর সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার অনেকেই এখন মাচায় লাউ, ঝিঙ্গা, কুমড়া, পটল, শশা চাষ এবং মাচার নিচে খাটো জাতের ও স্বল্পকালীন বিভিন্ন শাক-সবজি, আদা চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। তারা সুরুজ আলীর কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। পরামর্শ নিয়ে একই জমিতে, এক সাথে, এক খরচে দুই ফসলের আয়ে অধিক লাভবান হচ্ছেন চানু মিয়া, রতন মিয়া, বিল্লাল ও মোস্তাইনসহ অনেকেই।

২০১৬ সালে নিজ উদ্যোগে নারায়ণখোলা বাড়ির কাছে ১০ শতাংশ জমিতে উপরে মাচায় শীতলাউ এবং মাচার নিচে শাক-সবজি চাষ শুরু করেন। ওই বছর লাউ বাদে, মাচার নিচে আবাদ করা শাক-সবজির ফসল থেকে ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় করেন। পরের বছর তিনি উপরে-নিচের আবাদ সম্প্রসারণ করেন। সেই বছর (২০১৭ সালে) ২০ শতাংশ জমিতে লাউয়ের মাচার নিচে আদা লাগিয়ে তিনি অতিরিক্ত প্রায় অর্ধলক্ষ্য টাকা আয় করেন। চলতি মৌসুমে তিনি এমন আবাদ বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ জমিতে উপরে শীতলাউ এবং মাচার নিচে আদা লাগিয়েছেন। তিনি আশা করছেন এবছর ওই ৩৫ শতাংশ জমির শীতলাউ ও আদা থেকে দুই লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারবেন।

সুরুজ আলী জানান, এবছর লাউয়ের মাচার নিচে সাড়ে চার মণ বীজ আদা লাগিয়েছেন। এতে নিজের পরিশ্রম বাদে মোট খরচ হয়েছে ৬০ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকা। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ওই ৩৫ শতাংশ জমির শীতলাউয়ের মাচার নিচে অতিরিক্ত আবাদ করা আদা ক্ষেত হতে ৩০ থেকে ৪০ মণ আদা পাবেন।

তিনি জানান, সর্বনিন্ম প্রতি কেজি আদা ১০০ টাকা করে বিক্রি করলেও এক লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকার আদা বিক্রি হবে। আর শীতলাউ বিক্রির আয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই ৩৫ শতাংশ জমি হতে লাউ ও আদা মিলিয়ে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করতে পরবেন।

আলাপকালে সুরুজ বলেন, আস্তে আস্তে ৩৫ শতাংশ থেকে সম্প্রসারণ করে ভবিষ্যতে ৩৫ একর জমিতে এই ধরনের আবাদ গড়ে তোলার আশা রয়েছে তার। এখানকার নিরাপদ শাক সবজি পেয়ে ক্রেতারা সবাই খুশি বলেও জানান তিনি।

উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, সুরুজ আলীর দেখা দেখি নারায়ণখোলাসহ আশেপাশের কৃষকরাও এমন উপর-নিচের আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, সুরুজ আলী রীতিমত বেকার যুবকদের অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। তিনি এক জমিতে ও এক খরচে একসাথে দুই-তিনটি ফসল ফলিয়ে এলাকার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। যে স্থানে বছরে একবার ধান চাষ হতো, সেখানে তিনি মাচায় লাউ আর নিচে বিভিন্ন শাক-সবজি ও আদা চাষ করে বছরে অতিরিক্ত লাখ টাকা আয় করছেন। তার সফলতা দেখে এলাকার বেকার যুবকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুময়ূন কবীর বলেন, সুরুজ আলী যেন অসাধ্য সাধন করেছেন। তার এ আগ্রহ ও অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিতে এবং এলাকার অন্যান্য কৃষকদেরকে আগ্রহী করতে তারা সার্বক্ষণিক দেখভাল ও পরামর্শ সেবা দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।

ওই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, এই পদ্ধতিতে একই জমিতে, এক সাথে ও একই খরচে শাক-সবজি ও অন্যান্য স্বল্পকালীন আবাদ করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর