যৌবনের জলতরঙ্গহীন ব্রহ্মপুত্রের বুকে ভেসে চলেছে নৌকাগুলো। কীভাবে পিছনে ফেলা যাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের, এ নিয়েই ঘাম ঝরানো বৈঠা টানার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন মাঝি-মাল্লারা। দ্রুত তালে ছুটে চলেছে একেকটি নৌকা। মাঝিদের কারও মাথায় বাঁধা রুমাল, কারও মাথায় লাল ফিতা।
এর সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রের সুর তো রয়েছেই। টানটান উত্তেজনা ব্রহ্মপুত্রের বুক ছাপিয়ে নদের দু’পাড়েও। সবার কণ্ঠে এক সুর, ‘জোরসে বলো হেঁইয়ো, আরও জোরে হেঁইয়ো’। অনিন্দ্য সুন্দর এ সুর নদের দু’পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিশু, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধসহ হাজারো মানুষের হৃদয়েও দোলা দেয়।
কখনও হর্ষধ্বনি আবার কখনও দু’হাতে হাততালি। শুক্রবার (২ অক্টোবর) এভাবেই পালিত হয় ঐতিহ্যের নৌকা বাইচ উৎসব।
ঈদ পরবর্তী এ নৌকা বাইচের আয়োজন করে ময়মনসিংহ পৌরসভা। যান্ত্রিক ব্যস্ততা আর ছকে বাঁধা জীবনের বাইরে আবহমান বাংলার বিলুপ্তপ্রায় এ সংস্কৃতি ধরে রাখতে, গত কয়েক বছর ধরে পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু এ উৎসবের আয়োজন করে আসছেন।
দু’গ্রুপে ভাগ করে আয়োজন করা হয় নৌকা বাইচের। ছোট গ্রুপে অংশ নেয় ২০টি নৌকা।
এখানে সদর উপজেলার রোরোরচর এলাকার ফারুক খান প্রথম, দ্বিতীয় বাচ্চু খান ও তৃতীয় হন কাজী হাবিবুর।
এরপর বড় নৌকার বাইচে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন মাঝি-মাল্লারা। এ প্রতিযোগিতায় ৮টি বড় বড় নৌকা অংশ নেয়।
এখানে বিজয়ীর হাসি হাসেন সদর উপজেলার চর দরি কুষ্টিয়া দক্ষিণপাড়া এলাকার তামিম ইকবাল। তিনি পেয়েছেন একটি বড় রেফ্রিজারেটর। দ্বিতীয় একই এলাকার ফারুক সর্দার পেয়েছেন ২১ ইঞ্চি কালার টিভি। একই উপজেলার বিদ্যাগঞ্জ মধ্যচরের আমিনুল ইসলাম হয়েছেন তৃতীয়। এ কৃতিত্ব অর্জন করে তিনি পান একটি টিভি।
ময়মনসিংহ পৌরসভা আয়োজিত এ নৌকা বাইচ উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। উৎসব শেষে শহরের জয়নুল উদ্যানের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন তিনি।
এসময় ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ, ময়মনসিংহ পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ আসিফ হোসেন ডন, কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।