ঢাকা ০১:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লালপুরে রোপা আমন ধান চাষে ব্যস্ত কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৯:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অগাস্ট ২০১৮
  • ৪১৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নাটোরের লালপুরে রোপা আমন ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বৃষ্টি ও রোদ উপেক্ষা করে এখন দিন-রাত বীজতলা থেকে চারা তোলা, জমি চাষ ও মই দেয়াসহ রোপা ধান চাষের নানা কাজে দারুণ ব্যস্ত তারা। বাংলাদেশের মানচিত্রে সবচেয়ে উষ্ণ ও কম বৃষ্টিপাতের এলাকা হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের পদ্মানদী বিধৌত নাটোরের লালপুর থানা। বর্ষা মৌসুমে কিছু পরিমানে বৃষ্টি পাত হওয়ায় এবং পানি সেচ কম লাগাই এই অঞ্চলের কৃষকের একমাত্র ভরসা হিসেবে রোপা আমন ধান চাষ করে থাকেন।

জানাগেছে, আষাঢ়ের শেষে শ্রাবণের প্রথম থেকে এই রোপা আমন ধানের চাষ শুরু হয়। তবে এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে কিছু পরিমানে বৃষ্টিপাত হলেও গত ৫ দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার ওয়ালিয়া, নাওদাড়া, নান্দ ও ফুলবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠের রোপা আমন ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে এতে নিচুঁ জমির রোপা আমন চাষ ব্যহত হচ্ছে।

মাঠে ব্যস্ততা দেখেও তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারনে অনেক কৃষকরা মনে আশঙ্কা নিয়ে রোপা আমন চাষাবাদ করছেন। তবে আবহাওয়া অনুকলে থাকলে বাম্পার ফলনের মধ্য দিয়ে বিগত সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান তারা। এদিকে গত বছর ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অনেক কৃষক অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন বলেও সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে।

লালপুর উপজেলার ধান চাষী আব্দুল লতিফ, কাশেম, চেনু মন্ডলসহ স্থানীয় কৃষকরা আমার সংবাদ কে জানান, ‘গত ২ বছর যাবত আশানুরূপ বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় এবং উৎপাদিত ধানের নায্য মূল্য না পাওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে আখ ও ভুট্টাচাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।’

তারা আরও জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে চারা ও সারের সঙ্কট না থাকায় বিভিন্ন মাঠে রোপা আমন ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু করছেন। এবছর এই উপজেলায় কৃষকদের দেশীয় জাতের পরিবর্তে বেশির ভাগ জমিতে (বিনা ধান-১৭, ৭, ২০, ব্রি-ধান ৪৯, ৬৬, ৭২, হাইব্রিড ধানী গোল্ড ও কেয়া) হাইব্রিট জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ করতে দেখা গেছে। তবে আধুনিক যুগেও প্রয়োজনের তাগিদে এখানকার অনেক কৃষক এখনো গরুর নাঙ্গল ব্যবহার করছেন। বর্তমানে এই অঞ্চলের অনেক কৃষকরা এখনো গতনাগতিক পদ্ধতি চাষবাদ করছেন ফলে তারা ফসলের কাঙ্খিত ফলন পাচ্ছেন না।’

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর অনেক কৃষক তাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জমিতে রোপা আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন। এ বছর রোপা আমন ধান চাষে খরচ অন্যান্য বছরের চেয়ে কিছুটা কম বলে খানিকটা উজ্জীবিত ।
ওয়ালিয়া গ্রামের রোপা আমন ধান চাষী আকমল হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘এবছর আমি আড়াই বিঘা জমিতে রোপা আম ধান রোপণ করেছি যাতে শ্রমিক, সার, জমি চাষ ও বীজ বাবদ প্রথম অবস্থায় খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এছাড়া পানি সেচ, নিড়ানী, কিটনাশকসহ নানা ওষুধ, ধান কাটা ও মাড়াই বাবদ আরও প্রায় ৫ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে। এ ছাড়াও এবছর প্রতি বিঘা জমিতে চাষাবাদ বাবদ সর্বমোট খরচ হবে ৭হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। ফলন ভালো হওয়াসহ দাম ভালো পাওয়া গেলে এই খরচ আর পরিশ্রম দুই সার্থক হবে।’

লালপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লালপুর উপজেলায় গত বছর ৫ হাজার ৭শত হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হলেও এবার ৬ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষামাত্রার অধিক জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হবে বলে আশ করছেন কৃষি বিভাগ।

এ ব্যাপারে লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুল ইসলাম খাঁন আমার সংবাদকে বলেন,‘ আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবছর উপজেলায় নির্ধারিত লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে পাশাপাশি কৃষকদের বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কিছু জমির লাগানো ধান ডুবে গেলেও আবহাওয়া পরিস্কার হয়ে গেলে তা সাবেক হয়ে যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

লালপুরে রোপা আমন ধান চাষে ব্যস্ত কৃষক

আপডেট টাইম : ১২:২৯:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অগাস্ট ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নাটোরের লালপুরে রোপা আমন ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বৃষ্টি ও রোদ উপেক্ষা করে এখন দিন-রাত বীজতলা থেকে চারা তোলা, জমি চাষ ও মই দেয়াসহ রোপা ধান চাষের নানা কাজে দারুণ ব্যস্ত তারা। বাংলাদেশের মানচিত্রে সবচেয়ে উষ্ণ ও কম বৃষ্টিপাতের এলাকা হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের পদ্মানদী বিধৌত নাটোরের লালপুর থানা। বর্ষা মৌসুমে কিছু পরিমানে বৃষ্টি পাত হওয়ায় এবং পানি সেচ কম লাগাই এই অঞ্চলের কৃষকের একমাত্র ভরসা হিসেবে রোপা আমন ধান চাষ করে থাকেন।

জানাগেছে, আষাঢ়ের শেষে শ্রাবণের প্রথম থেকে এই রোপা আমন ধানের চাষ শুরু হয়। তবে এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে কিছু পরিমানে বৃষ্টিপাত হলেও গত ৫ দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার ওয়ালিয়া, নাওদাড়া, নান্দ ও ফুলবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠের রোপা আমন ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে এতে নিচুঁ জমির রোপা আমন চাষ ব্যহত হচ্ছে।

মাঠে ব্যস্ততা দেখেও তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারনে অনেক কৃষকরা মনে আশঙ্কা নিয়ে রোপা আমন চাষাবাদ করছেন। তবে আবহাওয়া অনুকলে থাকলে বাম্পার ফলনের মধ্য দিয়ে বিগত সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান তারা। এদিকে গত বছর ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অনেক কৃষক অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন বলেও সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে।

লালপুর উপজেলার ধান চাষী আব্দুল লতিফ, কাশেম, চেনু মন্ডলসহ স্থানীয় কৃষকরা আমার সংবাদ কে জানান, ‘গত ২ বছর যাবত আশানুরূপ বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় এবং উৎপাদিত ধানের নায্য মূল্য না পাওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে আখ ও ভুট্টাচাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।’

তারা আরও জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে চারা ও সারের সঙ্কট না থাকায় বিভিন্ন মাঠে রোপা আমন ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু করছেন। এবছর এই উপজেলায় কৃষকদের দেশীয় জাতের পরিবর্তে বেশির ভাগ জমিতে (বিনা ধান-১৭, ৭, ২০, ব্রি-ধান ৪৯, ৬৬, ৭২, হাইব্রিড ধানী গোল্ড ও কেয়া) হাইব্রিট জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ করতে দেখা গেছে। তবে আধুনিক যুগেও প্রয়োজনের তাগিদে এখানকার অনেক কৃষক এখনো গরুর নাঙ্গল ব্যবহার করছেন। বর্তমানে এই অঞ্চলের অনেক কৃষকরা এখনো গতনাগতিক পদ্ধতি চাষবাদ করছেন ফলে তারা ফসলের কাঙ্খিত ফলন পাচ্ছেন না।’

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর অনেক কৃষক তাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জমিতে রোপা আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন। এ বছর রোপা আমন ধান চাষে খরচ অন্যান্য বছরের চেয়ে কিছুটা কম বলে খানিকটা উজ্জীবিত ।
ওয়ালিয়া গ্রামের রোপা আমন ধান চাষী আকমল হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘এবছর আমি আড়াই বিঘা জমিতে রোপা আম ধান রোপণ করেছি যাতে শ্রমিক, সার, জমি চাষ ও বীজ বাবদ প্রথম অবস্থায় খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এছাড়া পানি সেচ, নিড়ানী, কিটনাশকসহ নানা ওষুধ, ধান কাটা ও মাড়াই বাবদ আরও প্রায় ৫ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে। এ ছাড়াও এবছর প্রতি বিঘা জমিতে চাষাবাদ বাবদ সর্বমোট খরচ হবে ৭হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। ফলন ভালো হওয়াসহ দাম ভালো পাওয়া গেলে এই খরচ আর পরিশ্রম দুই সার্থক হবে।’

লালপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লালপুর উপজেলায় গত বছর ৫ হাজার ৭শত হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হলেও এবার ৬ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষামাত্রার অধিক জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হবে বলে আশ করছেন কৃষি বিভাগ।

এ ব্যাপারে লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুল ইসলাম খাঁন আমার সংবাদকে বলেন,‘ আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবছর উপজেলায় নির্ধারিত লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে পাশাপাশি কৃষকদের বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কিছু জমির লাগানো ধান ডুবে গেলেও আবহাওয়া পরিস্কার হয়ে গেলে তা সাবেক হয়ে যাবে।