ঢাকা ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নীরব জীবনে ব্যারিস্টার রাজ্জাক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৩:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০১৫
  • ২৩৩ বার

দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রবাস জীবনে নীরবতায় রয়েছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, শীর্ষ আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। তিনি বর্তমানে কোন দেশে আছেন, কবে আসবেন সেটা কেউই জানে না। দলের শীর্ষ কোনো নেতার সঙ্গেই তার বর্তমানে কোনো যোগাযোগ নেই। এ বিষয়ে জামায়াত নেতারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

নেতারা জানান, তিনি আদৌ আসবেন কিনা সেটাও অনিশ্চিত। রাজ্জাকের মতো একজন সিনিয়র নেতার এভাবে বিদেশ পাড়ি দেয়ায় জামায়াতের শীর্ষ নেতারাও যারপরনাই বিস্মিত।

মামলা ও গ্রেফতার হতে পারেন, এমন কারণ দেখিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যুক্তরাজ্যের কথা বলে দেশ ছাড়লেও তার সর্বশেষ অবস্থানের কথা দলের নেতারা দিতে পারেননি।

ওয়ান ইলেভেন সরকারের পর ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল বসিয়ে বিচার শুরু করলে জামায়াতের এ নেতা ছিলেন আটক নেতা ও দলের মুখপাত্র। প্রতিদিনই তিনি দল ও আটক নেতাদের হয়ে মিডিয়ার সামনে নানাভাবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতেন, ক্লান্তিহীনভাবে তার যুক্তিতর্ক আদালত বা মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে উপস্থাপনা করতেন। নিয়মিত ব্রিফিং ও টকশোতে আসার কারণে দেশে বিদেশে তিনি ছিলেন অতি পরিচিত মুখ। জামায়াতের তিনিই একমাত্র নেতা, যিনি নিয়মিত টকশো করতেন।

কিন্তু দেড় বছরেরও বেশি সময় তিনি দেশের বাইরে। কবে আসবেন, তা কেউ জানেন না। কর্মীমহলে এমন ধারণা দেয়া আছে, তিনি বাইরে থেকে জামায়াতের হয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে লবিং করছেন। কিন্তু সাধারণ নেতাকর্মী, এমনকি দলের নেতারাও এখন আর সেটি বিশ্বাস করেন না।

একের পর এক বিচার, এমনকি দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি সম্পন্ন হওয়ায় নেতাকর্মীরা এখন তাকে দলের জন্য আর আগের মতো অপরিহার্য বলে মনে করছেন না। দলের অনেকেরই ধারণা, তিনি সরকারের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে দেশ ছেড়েছেন।

একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী হিসেবেও দলের নেতা কর্মীদের কাছে তিনি যথেষ্ট সমাদৃত, নির্ভরশীল, একই সঙ্গে বিশ্বস্ত ছিলেন। তুলনামূলকভাবে দলের মধ্যম পর্যায়ের নেতা হলেও দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তার প্রভাব প্রতিপত্তি, অবাধ যাতায়াত ছিল। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেক সিদ্ধান্ততেই তার পরামর্শ, মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হতো। জামায়াত-বিএনপি জোটের প্রধান দল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও ব্যারিস্টার রাজ্জাকের সম্পর্কও ভালো ছিল। বেগম জিয়া নিজেও তাকে সমীহ করতেন।

জনশ্রুতি আছে, সিলেট-১ (সদর) আসন অথবা গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার নিয়ে সিলেট-৬ আসনে তার নির্বাচন করার কথা রয়েছে। তার নীরবতায় নির্বাচনী এলাকাতেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এলাকার নেতা কর্মী, সমর্থরাও কম বেশি বিরক্ত।

জানা গেছে, দলের প্রয়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম আজমের মামলা থেকে শুরু করে কামারুজ্জামান পর্যন্ত কোনো মামলাতেই দলের নেতাকর্মীরা তাকে কাছে পায়নি। দলের দুঃসময়ে তার বাইরে থাকাটা নেতা কর্মীরাও মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। তার বর্তমান অবস্থানকে নেতাকর্মীরাও রীতিমতো বিস্মিত। দলের নেতাকর্মীরা রাজ্জাকের এ পলায়নকে ভীতু কাপুরুষের কাজ বলে মন্তব্য করেছেন। তাকে, একজন দায়িত্বহীন নেতা বলেছেন। জামায়াতের মতো ক্যাডারভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দলে শীর্ষপর্যায়ের নেতার দীর্ঘদিন প্রবাসে নীরব থাকার ঘটনা বিরল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

নীরব জীবনে ব্যারিস্টার রাজ্জাক

আপডেট টাইম : ১১:৩৩:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০১৫

দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রবাস জীবনে নীরবতায় রয়েছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, শীর্ষ আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। তিনি বর্তমানে কোন দেশে আছেন, কবে আসবেন সেটা কেউই জানে না। দলের শীর্ষ কোনো নেতার সঙ্গেই তার বর্তমানে কোনো যোগাযোগ নেই। এ বিষয়ে জামায়াত নেতারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

নেতারা জানান, তিনি আদৌ আসবেন কিনা সেটাও অনিশ্চিত। রাজ্জাকের মতো একজন সিনিয়র নেতার এভাবে বিদেশ পাড়ি দেয়ায় জামায়াতের শীর্ষ নেতারাও যারপরনাই বিস্মিত।

মামলা ও গ্রেফতার হতে পারেন, এমন কারণ দেখিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যুক্তরাজ্যের কথা বলে দেশ ছাড়লেও তার সর্বশেষ অবস্থানের কথা দলের নেতারা দিতে পারেননি।

ওয়ান ইলেভেন সরকারের পর ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল বসিয়ে বিচার শুরু করলে জামায়াতের এ নেতা ছিলেন আটক নেতা ও দলের মুখপাত্র। প্রতিদিনই তিনি দল ও আটক নেতাদের হয়ে মিডিয়ার সামনে নানাভাবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতেন, ক্লান্তিহীনভাবে তার যুক্তিতর্ক আদালত বা মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে উপস্থাপনা করতেন। নিয়মিত ব্রিফিং ও টকশোতে আসার কারণে দেশে বিদেশে তিনি ছিলেন অতি পরিচিত মুখ। জামায়াতের তিনিই একমাত্র নেতা, যিনি নিয়মিত টকশো করতেন।

কিন্তু দেড় বছরেরও বেশি সময় তিনি দেশের বাইরে। কবে আসবেন, তা কেউ জানেন না। কর্মীমহলে এমন ধারণা দেয়া আছে, তিনি বাইরে থেকে জামায়াতের হয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে লবিং করছেন। কিন্তু সাধারণ নেতাকর্মী, এমনকি দলের নেতারাও এখন আর সেটি বিশ্বাস করেন না।

একের পর এক বিচার, এমনকি দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি সম্পন্ন হওয়ায় নেতাকর্মীরা এখন তাকে দলের জন্য আর আগের মতো অপরিহার্য বলে মনে করছেন না। দলের অনেকেরই ধারণা, তিনি সরকারের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে দেশ ছেড়েছেন।

একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী হিসেবেও দলের নেতা কর্মীদের কাছে তিনি যথেষ্ট সমাদৃত, নির্ভরশীল, একই সঙ্গে বিশ্বস্ত ছিলেন। তুলনামূলকভাবে দলের মধ্যম পর্যায়ের নেতা হলেও দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তার প্রভাব প্রতিপত্তি, অবাধ যাতায়াত ছিল। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেক সিদ্ধান্ততেই তার পরামর্শ, মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হতো। জামায়াত-বিএনপি জোটের প্রধান দল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও ব্যারিস্টার রাজ্জাকের সম্পর্কও ভালো ছিল। বেগম জিয়া নিজেও তাকে সমীহ করতেন।

জনশ্রুতি আছে, সিলেট-১ (সদর) আসন অথবা গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার নিয়ে সিলেট-৬ আসনে তার নির্বাচন করার কথা রয়েছে। তার নীরবতায় নির্বাচনী এলাকাতেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এলাকার নেতা কর্মী, সমর্থরাও কম বেশি বিরক্ত।

জানা গেছে, দলের প্রয়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম আজমের মামলা থেকে শুরু করে কামারুজ্জামান পর্যন্ত কোনো মামলাতেই দলের নেতাকর্মীরা তাকে কাছে পায়নি। দলের দুঃসময়ে তার বাইরে থাকাটা নেতা কর্মীরাও মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। তার বর্তমান অবস্থানকে নেতাকর্মীরাও রীতিমতো বিস্মিত। দলের নেতাকর্মীরা রাজ্জাকের এ পলায়নকে ভীতু কাপুরুষের কাজ বলে মন্তব্য করেছেন। তাকে, একজন দায়িত্বহীন নেতা বলেছেন। জামায়াতের মতো ক্যাডারভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দলে শীর্ষপর্যায়ের নেতার দীর্ঘদিন প্রবাসে নীরব থাকার ঘটনা বিরল।