ঢাকা ১০:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জিতলে আমি জার্মান, হারলে অভিবাসী : ওজিল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০৭:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই ২০১৮
  • ৩৫৩ বার
হাওর বার্তা ডেস্কঃ নিজের তুর্কি শেকড়ের কারণে ‘বর্ণবাদ এবং অসম্মানের’ শিকার হয়েছেন জানিয়ে জার্মানির জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন মেসুত ওজিল। ২৯ বছর বয়সী ক্ষুব্ধ এ তারকা ফুটবলারের আরো অভিযোগ জয় এনে দিতে পারলে একজন জার্মান হিসেবেই গণ্য করা হয় তাকে এবং হারলে বলা হয় অভিবাসী।
জার্মানি ২০১৮ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়ের পর ওজিলের সমালোচনা তীব্র হয়। বিশ্বকাপ ব্যর্থতা যেন এরপর আগুনে ঘি ঢালে। এ প্রসঙ্গে ওজিল বলেন, ‘আমরা যখন জিতি তখন জার্মানই থাকি, কিন্তু যখন হেরে যাই তখন অভিবাসী হয়ে যাই।’
যদিও ব্রাজিলে ২০১৪ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে অবদান ছিল তার। ২০০৯ সালে অনূর্ধ্ব ২১ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের সুবাদে গড়ে ওঠা জার্মানির সোনালী প্রজন্মের অন্যতম তারকা তিনি। বাকিদের মধ্যে আছেন ম্যানুয়েল ন্যুয়ার, জেরোমে বোয়েটাং, ম্যাটস হামেলস, সামি খেদিরা প্রমুখ। ওই বছরেই জাতীয় দলে অভিষেক নেন ওজিল। ২০১০ বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া দলটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।
আর্সেনাল মিডফিল্ডার ওজিলকে নিয়ে বিতর্কের সুত্রপাত মে মাসে লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সাথে তোলা ছবি প্রকাশের পর। এরদোগানের দল তুরস্কের সাম্প্রতিক নির্বাচনের সময় এ ছবিটি ব্যবহার করে। সেসময় জার্মানির সাথে তুরস্কের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিল না।
ওজিলের এমন মন্তব্যে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ডিএফপি। তবে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে বলেছেন ওজিল জাতীয় দলের জন্য অনেক করেছেন। তার মুখপাত্র এ তথ্য জানান। বায়ার্ন মিউনিখ সভাপতি উলি হোয়েনেস অবশ্য তার সমালোচনা করেছেন। হোয়েনেসের মতো অনেকদিন ধরেই বাজে খেলছিলেন ওজিল।
জার্মানীর গেলসেনকিরচেনে জন্ম তার। বাবা এবং মা দুজনেই তুর্কি হওয়ায় ২০০৬ সালে তুরস্কের হয়ে খেলার প্রস্তাব পেলেও জার্মানির হয়ে খেলতে তা ফিরিয়ে দেন ওজিল। এরপর জার্মানীর জার্সি গায়ে ৯২ ম্যাচে মাঠে নামা ওজিল ২০১১ সালের পর থেকে পাঁচবার সমর্থকদের ভোটে সেরা জার্মান ফুটবলারও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে এবারের বিশ্বকাপে একপ্রকার নিষ্প্রভই ছিলেন ওজিল।
অবশ্য জার্মানিও ছন্দে ছিল না। তাই ফেভারিট হওয়া সত্ত্বেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় আগেরবারের চ্যাম্পিয়নদের। ২০১০ থেকে সবগুলো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে শুরুর একাদশে থাকলেও সুইডেনের বিপক্ষে এবারই প্রথম বাদ পড়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে ওই একটা ম্যাচেই জিতেছিল জার্মানি।
ওজিল জানিয়েছেন সমর্থকদের বিরূপ আচরণ তার জার্মান দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামার ইচ্ছেটাকে মেরে ফেলেছে। বিদায়ী বক্তব্যে তিনি জানান জার্মানিতে আয়কর দেয়া, ভালো কাজে দান করা, দেশটিকে বিশ্বকাপ জেতানোর পরও তাকে আপন করে নেয়নি জার্মান সমাজ।
বিদায়ের ঘোষণায় আর্সেনাল মিডফিল্ডার লেখেন, ‘অনেক বিবেচনার পর আমি ভারাক্রান্ত হূদয়ে জানাচ্ছি যে, বিগত দিনের কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণবাদ এবং অসম্মানিত বোধ করার কারণে আমি জার্মানির হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর খেলবো না।’
ওজিল আরও বলেন, ‘আমি অনেক গর্ব এবং শিহরণ নিয়ে জার্মান দলের জার্সিটি গায়ে চড়াতাম, কিন্তু এখন আর এমন বোধ করি না। নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে হচ্ছে আমার এবং আমি মনে করি ২০০৯ সালে আমার আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকে এ পর্যন্ত আমি জাতীয় দলের হয়ে যা অর্জন করেছি তার সবকিছুকে ভুলে যাওয়া হয়েছে।’
সূত্র- বিবিসি
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

জিতলে আমি জার্মান, হারলে অভিবাসী : ওজিল

আপডেট টাইম : ০৫:০৭:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই ২০১৮
হাওর বার্তা ডেস্কঃ নিজের তুর্কি শেকড়ের কারণে ‘বর্ণবাদ এবং অসম্মানের’ শিকার হয়েছেন জানিয়ে জার্মানির জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন মেসুত ওজিল। ২৯ বছর বয়সী ক্ষুব্ধ এ তারকা ফুটবলারের আরো অভিযোগ জয় এনে দিতে পারলে একজন জার্মান হিসেবেই গণ্য করা হয় তাকে এবং হারলে বলা হয় অভিবাসী।
জার্মানি ২০১৮ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়ের পর ওজিলের সমালোচনা তীব্র হয়। বিশ্বকাপ ব্যর্থতা যেন এরপর আগুনে ঘি ঢালে। এ প্রসঙ্গে ওজিল বলেন, ‘আমরা যখন জিতি তখন জার্মানই থাকি, কিন্তু যখন হেরে যাই তখন অভিবাসী হয়ে যাই।’
যদিও ব্রাজিলে ২০১৪ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে অবদান ছিল তার। ২০০৯ সালে অনূর্ধ্ব ২১ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের সুবাদে গড়ে ওঠা জার্মানির সোনালী প্রজন্মের অন্যতম তারকা তিনি। বাকিদের মধ্যে আছেন ম্যানুয়েল ন্যুয়ার, জেরোমে বোয়েটাং, ম্যাটস হামেলস, সামি খেদিরা প্রমুখ। ওই বছরেই জাতীয় দলে অভিষেক নেন ওজিল। ২০১০ বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া দলটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।
আর্সেনাল মিডফিল্ডার ওজিলকে নিয়ে বিতর্কের সুত্রপাত মে মাসে লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সাথে তোলা ছবি প্রকাশের পর। এরদোগানের দল তুরস্কের সাম্প্রতিক নির্বাচনের সময় এ ছবিটি ব্যবহার করে। সেসময় জার্মানির সাথে তুরস্কের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিল না।
ওজিলের এমন মন্তব্যে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ডিএফপি। তবে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে বলেছেন ওজিল জাতীয় দলের জন্য অনেক করেছেন। তার মুখপাত্র এ তথ্য জানান। বায়ার্ন মিউনিখ সভাপতি উলি হোয়েনেস অবশ্য তার সমালোচনা করেছেন। হোয়েনেসের মতো অনেকদিন ধরেই বাজে খেলছিলেন ওজিল।
জার্মানীর গেলসেনকিরচেনে জন্ম তার। বাবা এবং মা দুজনেই তুর্কি হওয়ায় ২০০৬ সালে তুরস্কের হয়ে খেলার প্রস্তাব পেলেও জার্মানির হয়ে খেলতে তা ফিরিয়ে দেন ওজিল। এরপর জার্মানীর জার্সি গায়ে ৯২ ম্যাচে মাঠে নামা ওজিল ২০১১ সালের পর থেকে পাঁচবার সমর্থকদের ভোটে সেরা জার্মান ফুটবলারও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে এবারের বিশ্বকাপে একপ্রকার নিষ্প্রভই ছিলেন ওজিল।
অবশ্য জার্মানিও ছন্দে ছিল না। তাই ফেভারিট হওয়া সত্ত্বেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় আগেরবারের চ্যাম্পিয়নদের। ২০১০ থেকে সবগুলো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে শুরুর একাদশে থাকলেও সুইডেনের বিপক্ষে এবারই প্রথম বাদ পড়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে ওই একটা ম্যাচেই জিতেছিল জার্মানি।
ওজিল জানিয়েছেন সমর্থকদের বিরূপ আচরণ তার জার্মান দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামার ইচ্ছেটাকে মেরে ফেলেছে। বিদায়ী বক্তব্যে তিনি জানান জার্মানিতে আয়কর দেয়া, ভালো কাজে দান করা, দেশটিকে বিশ্বকাপ জেতানোর পরও তাকে আপন করে নেয়নি জার্মান সমাজ।
বিদায়ের ঘোষণায় আর্সেনাল মিডফিল্ডার লেখেন, ‘অনেক বিবেচনার পর আমি ভারাক্রান্ত হূদয়ে জানাচ্ছি যে, বিগত দিনের কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণবাদ এবং অসম্মানিত বোধ করার কারণে আমি জার্মানির হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর খেলবো না।’
ওজিল আরও বলেন, ‘আমি অনেক গর্ব এবং শিহরণ নিয়ে জার্মান দলের জার্সিটি গায়ে চড়াতাম, কিন্তু এখন আর এমন বোধ করি না। নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে হচ্ছে আমার এবং আমি মনে করি ২০০৯ সালে আমার আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকে এ পর্যন্ত আমি জাতীয় দলের হয়ে যা অর্জন করেছি তার সবকিছুকে ভুলে যাওয়া হয়েছে।’
সূত্র- বিবিসি