ঢাকা ০১:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবাদ অনেক ভাল হয়েছে, কিন্তু কিয়েরে যে দাম নাই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০২:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই ২০১৮
  • ৩৯৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জেলার মধুপুরে এবার আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় সরব হয়ে উঠেছে মধুপুরের বিভিন্ন বাজার। তবে প্রতিকূল আবহাওয়া ও বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবসহ নানা কারণে লাভ হচ্ছে না চাষিদের। খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

ইদিলপুর এলাকার চাষি আবু হানিফ খাঁ বলেন, ‘আমরা এহন ফলে হরমোন দেই না। আগে দিতাম। হরমোন না দিলে ফল মিষ্টি, সুস্বাদু আর ভাল সেন্ট অয়। এ বছর আমাগো ফলের আবাদ অনেক ভাল অইছে। কিন্তু কিয়েরে যে দাম নাই, বুঝতাছি না। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলাতেই এ বছর ৭ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ করেছে চাষীরা। এছাড়াও পাশের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় আনারসের চাষ হয়েছে ৮০০ হেক্টরে। এ সব জমিতে প্রায় দুই লাখ ১৩ হাজার ১২০ মেট্রিক টন আনারস উৎপাদন হয়েছে। এ সব আনারস মধুপুরের স্থানীয় হাট বাজারগুলো থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে।

এবার অতিরিক্ত বৃষ্টি আর বাজারজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ফলনের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। মধুপুরের আনারসের বড় বাজার জলছত্র ও গারোবাজার। উপজেলার অরণখোলা, আউশনাড়া, ষোলাকুড়ি বা পঁচিশ মাইল থেকে জলছত্রে আনারস আসে। কেউ বাইসাইকেলে ঝুলিয়ে, কেউ আনে ঘোড়ার গাড়ি করে। পিকআপ-ইজিবাইক আর ভ্যানে করে তো আসেই।

সড়কের দুই ধারে বসে বাজার, শুক্র ও মঙ্গলবার হাট। কেনাবেচা অবশ্য প্রতিদিনই চলে। সারা দেশ থেকেই ক্রেতা আসে। তবে গারোবাজারে হাট হয় রবি আর বুধবার।

মধুপুর জলছত্র এলাকার আনারস চাষি মনসুর আলী জানান, এ বছর তিনি ৩০ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছেন। উৎপাদনও অনেক ভাল হয়েছে। কিন্তু ফলের বাজার খুবই খারাপ, উৎপাদন খরচই উঠবে না। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ফল বাজারে নেওয়া পর্যন্ত ১৬/১৭ টাকা খরচ পরে। আর ফল বিক্রি করতে হয় ১৫/১৬ টাকায়। এর মধ্যে কিছু ছোট ফল থাকে, সেগুলো ৭/৮ টাকায় বিক্রি করতে হয়।

বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ হয় জলছত্র আনারসের হাটে। তারা জানান, এখান থেকে আনারস কিনে ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, ঈশ্বরদী, রাজশাহী, নাটের, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেটসহ প্রায় সারাদেশেই সরবরাহ করে থাকে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আনারসের দাম অনেক কম বলেও জানান তারা।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলাতেই এবছর ৭ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ হয়েছে। এ সব আনারস মধুপুরের স্থানীয় বাজারগুলো থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টি আর বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় ফলনের সঠিক দাম পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

তিনি আরো জানান, কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন এনজিও হরমোন প্রয়োগে নিরুৎসাহিত করণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে আনারসের স্বাদ আর মান পুনরায় ফিরে এসেছে। এ অঞ্চলে আনারস প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা গেলে মধুপুরের আনারস দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আবাদ অনেক ভাল হয়েছে, কিন্তু কিয়েরে যে দাম নাই

আপডেট টাইম : ১১:০২:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জেলার মধুপুরে এবার আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় সরব হয়ে উঠেছে মধুপুরের বিভিন্ন বাজার। তবে প্রতিকূল আবহাওয়া ও বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবসহ নানা কারণে লাভ হচ্ছে না চাষিদের। খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

ইদিলপুর এলাকার চাষি আবু হানিফ খাঁ বলেন, ‘আমরা এহন ফলে হরমোন দেই না। আগে দিতাম। হরমোন না দিলে ফল মিষ্টি, সুস্বাদু আর ভাল সেন্ট অয়। এ বছর আমাগো ফলের আবাদ অনেক ভাল অইছে। কিন্তু কিয়েরে যে দাম নাই, বুঝতাছি না। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলাতেই এ বছর ৭ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ করেছে চাষীরা। এছাড়াও পাশের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় আনারসের চাষ হয়েছে ৮০০ হেক্টরে। এ সব জমিতে প্রায় দুই লাখ ১৩ হাজার ১২০ মেট্রিক টন আনারস উৎপাদন হয়েছে। এ সব আনারস মধুপুরের স্থানীয় হাট বাজারগুলো থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে।

এবার অতিরিক্ত বৃষ্টি আর বাজারজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ফলনের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। মধুপুরের আনারসের বড় বাজার জলছত্র ও গারোবাজার। উপজেলার অরণখোলা, আউশনাড়া, ষোলাকুড়ি বা পঁচিশ মাইল থেকে জলছত্রে আনারস আসে। কেউ বাইসাইকেলে ঝুলিয়ে, কেউ আনে ঘোড়ার গাড়ি করে। পিকআপ-ইজিবাইক আর ভ্যানে করে তো আসেই।

সড়কের দুই ধারে বসে বাজার, শুক্র ও মঙ্গলবার হাট। কেনাবেচা অবশ্য প্রতিদিনই চলে। সারা দেশ থেকেই ক্রেতা আসে। তবে গারোবাজারে হাট হয় রবি আর বুধবার।

মধুপুর জলছত্র এলাকার আনারস চাষি মনসুর আলী জানান, এ বছর তিনি ৩০ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছেন। উৎপাদনও অনেক ভাল হয়েছে। কিন্তু ফলের বাজার খুবই খারাপ, উৎপাদন খরচই উঠবে না। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ফল বাজারে নেওয়া পর্যন্ত ১৬/১৭ টাকা খরচ পরে। আর ফল বিক্রি করতে হয় ১৫/১৬ টাকায়। এর মধ্যে কিছু ছোট ফল থাকে, সেগুলো ৭/৮ টাকায় বিক্রি করতে হয়।

বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ হয় জলছত্র আনারসের হাটে। তারা জানান, এখান থেকে আনারস কিনে ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, ঈশ্বরদী, রাজশাহী, নাটের, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেটসহ প্রায় সারাদেশেই সরবরাহ করে থাকে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আনারসের দাম অনেক কম বলেও জানান তারা।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলাতেই এবছর ৭ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ হয়েছে। এ সব আনারস মধুপুরের স্থানীয় বাজারগুলো থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টি আর বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় ফলনের সঠিক দাম পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

তিনি আরো জানান, কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন এনজিও হরমোন প্রয়োগে নিরুৎসাহিত করণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে আনারসের স্বাদ আর মান পুনরায় ফিরে এসেছে। এ অঞ্চলে আনারস প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা গেলে মধুপুরের আনারস দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।