বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীকে শিগগিরই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। হঠাৎ তাদের ভোটার করার প্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছে কমিশন। অথচ সারা দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। প্রশাসনিক ও সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের পর তাদের ভোটার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে এ বছর জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছেন না বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী। এতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সেবা পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় না হওয়ায় ৬৮ বছর তাদের ভোটার করা যায়নি; কিন্তু গেল জুলাই মাসে দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হওয়ায় এখন তাদের ভোটার করতে সমস্যা নেই। দীর্ঘদিন পরিচয়বঞ্চিত এসব নাগরিকের পরিচয়পত্র দিতে হালনাগাদ ভোটার তালিকার কাজ শুরু হওয়ার আগে বিশেষ উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল। হঠাৎ এ উদ্যোগ থেকে ইসি সরে আসায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের ভোটার হওয়ার বিষয়টি। কর্মকর্তারা আরও জানান, ছিটমহলবাসীকে ভোটার করতে প্রশাসনিক ও সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন নেই; বরং ভোটার করার পর ধীরে সুস্থে প্রশাসনিক ও সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস করা যাবে। দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে হলেও দ্রুত ছিটমহলবাসীকে ভোটার করার কাজ শুরু করা প্রয়োজন। ভোটার হলে তাদের দুর্ভোগ যেমন কমবে, তেমনি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয়ও দিতে পারবে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা পাওয়াও সহজ হবে।
ইসির সংশ্লিষ্ট শাখায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ছিটমহলবাসীকে দ্রুত ভোটার করার পরিকল্পনাসংবলিত ফাইলটি নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ না করে তাদের ভোটার করার কাজ শুরু করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। কারণ হিসেবে বলেছে, ছিটমহলবাসীকে ভোটার করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে। এতে অনেক জনবলের প্রয়োজন হবে। এ কারণে চলমান হালনাগাদ শেষে ছিটমহলবাসীকে ভোটার করার কাজ শুরু হবে। এছাড়া সরকারের প্রশাসনিক ও ইসির সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ করে ছিটমহলবাসীকে ভোটার করার কাজ শুরু করবে বলে তারা জানিয়েছেন। প্রশাসনিক ও সংসদীয় পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। ফলে এ বছরে ভোটার হতে পারছে না ছিটমহলবাসী।
জানা যায়, বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের মধ্যে যারা ভারতে চলে গেছে, এরই মধ্যে তারা সে দেশের পরিচয়পত্র পেয়েছেন। পরিচয়পত্র পেয়ে দীর্ঘদিনের বঞ্চনামুক্ত হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তারা। অথচ বাংলাদেশীদের ভোটার করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। ইসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১১১টি বিলুপ্ত ছিটমহলের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস ও সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ করেই বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভোটার করার বিষয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ইসি সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস করার পর তা সংসদীয় এলাকায় যুক্ত করা হবে। এর পরই স্বেচ্ছাপ্রত্যাবর্তনকারীদের ভোটার তালিকাভুক্ত করে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে।
জানা যায়, ১১১ ছিটের মধ্যে ১৯টি থেকে ৯৮৭ জন ভারতে চলে গেছেন। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলার ১০টি ছিটমহল, লালমনিরহাটের সাতটি ও কুড়িগ্রামের দুইটি ছিটের বাসিন্দা রয়েছেন। অপরদিকে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশী ৫১ ছিটমহলের কেউ বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ দেখাননি। দুই দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী, দাশিয়ারছড়াসহ ভারতের ১১১টি ছিটমহল ১ অগাস্ট প্রথম প্রহর থেকে বাংলাদেশের ভূখন্ডের অংশ হয়েছে। একইভাবে ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতের অংশ হয়ে গেছে।
ইসি সচিব জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও উপজেলায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে ছিটমহলগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সংসদীয় নির্বাচনী এলাকায় অন্তর্ভুক্ত করার পর এ এলাকার ভোটারযোগ্য নাগরিকদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। কবে নাগাদ এ কাজ শুরু হবে, তা স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গেজেট প্রকাশের পরই বলা যাবে বলে জানান সিরাজুল ইসলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকার প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এ সংক্রান্ত গেজেট করা হবে। এরপর এলাকাগুলো সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকায় যুক্ত করে সীমানা পুনর্নির্ধারণের পরই এলাকাভিত্তিক তাদের ভোটার করা হবে।