হাওর বার্তা ডেস্কঃ আনারসে ছেয়ে গেছে বান্দরবানের হাট-বাজার। এবার বাম্পার ফলন হওয়ায় আনন্দে মেতেছে পাহাড়ি চাষীরা। তবে অন্যান্য বারের তুলনায় আকারে একটু ছোট হওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তারা। কৃষি বিভাগের দাবি একই জমিতে বারবার চাষের কারণে আনারস আকারে ছোট হচ্ছে। পাশাপাশি পচনশীল এ ফলটি সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত বিক্রি করে দিতে হচ্ছে চাষীদের। এতে আর্থিকভাবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় সাড়ে ১১ হাজার ৮১৯ একর পাহাড়ি জমিতে আনারস চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় সামান্য বেশি। গত বছর আনারস উৎপাদিত হয়েছিল ৯০ হাজার ৮২০ টন। এ বছর উৎপাদনের পরিমাণ লক্ষাধিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা চাষীদের।
এ অঞ্চলে মূলত জায়ান্ট কিউ এবং হানি কুইন এ দু’জাতের আনারস চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে জায়ান্ট কিউ আনারস চাষের পরিমাণ বেশি। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় পাহাড়িরা জুম চাষ ছেড়ে আনারসসহ মিশ্র ফল চাষের দিকেই বেশি ঝুঁকছে। পাহাড়িরা জায়ান্ট কিউ আনারস চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছে। আকারে বড় এবং খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এ অঞ্চলের উৎপাদিত আনারসের চাহিদাও রয়েছে দেশ-বিদেশে।
চাষীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন সদর উপজেলার লাইমী পাড়া, ফারুক পাড়া, স্যারণ পাড়া, গেজমনী পাড়া, সাতকমল পাড়া, নোয়াপাড়া, পোড়া পাড়া, বাগান পাড়া, দেওয়াই হেডম্যান পাড়া, বসন্ত পাড়া’সহ রুমা, থানচি এবং রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে পাইকারি মূল্যে আনারস কিনে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনে করে নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। জেলা শহরসহ স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতেও চাষীরা আনারস বিক্রি করতে নিয়ে আসে। জেলা শহরে প্রতি জোড়া আনারস ৪০ টাকা থেকে দেড়শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী জানে আলম, আব্দুচ সাত্তার বলেন, আনারসের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বাজারে আনারসের চাহিদাও বেড়েছে। পাহাড়িদের কাছ থেকে ছোট সাইজের একশ’ আনারস ১২ থেকে ১৩শ’ টাকায় এবং বড় সাইজের একশ’ আনারস ১৮ থেকে ২২শ’ টাকা দামে কিনে নিচ্ছে তারা। এখান থেকে আনারসগুলো কিনে তারা চট্টগ্রাম, সাতকানিয়া, আমিরাবাদ, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছে। প্রতি জোড়ায় তাদের ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। তবে কখনও কখনও আনারস নষ্ট হয়ে লোকসানও গুনতে হয়।
আনারস চাষী লালপিয়াম বম ও সানতোয়াল বম বলেন, তাদের ছয় একর বাগানে ভালো ফলন হয়েছে। তবে বাম্পার ফলন হওয়ায় দাম কিছুটা কমে গেছে। চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন জানান, এ অঞ্চলে উৎপাদিত জায়ান্ট কিউ এবং হানি কুইন আনারস আকারে বড়, রসালো এবং খেতে খুবই সুস্বাদু। ফলন বাড়াতে আনারস চাষীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এখানে আনারসসহ মৌসুমি ফল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পচনশীল এসব পণ্য কম মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছে চাষীরা। এতে স্থানীয় চাষীরা আর্থিকভাবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।