ঢাকা ০১:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চরের জমিতে সবজি চাষ করে অভাব ঘুচিয়েছে সবজি চাষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০০:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুলাই ২০১৮
  • ৩২১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন চরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চরের জমিতে সব সবজি চাষ করে অভাব ঘুচিয়েছে সবজি চাষ। এক সময় বকশীগঞ্জের চরাঞ্চলে কেবলই ধান, পাট, গম চাষ করতেন কৃষক। কিন্তু ফলন কম হওয়ার কারণে এবং উৎপাদন খরচ অধিক হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষক অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়তেন। সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এখন বকশীগঞ্জের বালুর চর, টেরির চর ও মেরর চরসহ বিভিন্ন চরে পটল, কাকরোল, ঝিঙা, চালকুমড়ো, শসা, টমোটো, লাউ, মিষ্টি কুমড়ো ও পুইশাক চাষ হচ্ছে।

সবজি চাষে ভালো লাভ হওয়ার কারণে চরের কৃষক এখন যেমন পারিবারিক চাহিদাগুলো মেটাতে পারছেন, তেমনি কিছু সঞ্চয়ও করতে পারছেন। এ সবই সম্ভব হয়েছে সরকারের কৃষি অফিস এবং উন্নয়ন সংগঠনগুলোর সহযোগিতার কারণে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্স্যাম ইন বাংলাদেশের রি-কল প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় বেসরকারি সংগঠন উন্নয়ন সংস্থা চরের কৃষকদের নিয়ে কাজ করার ফলে সবজি উৎপাদন ও বিপণনে বড় ধরনের সুবিধা তৈরি হয়েছে।

কৃষক নূর আলী জমির মালিককে এক লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে তিন বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখন পরিবেশ সম্মতভাবে তারা চাষবাদ করছেন। আগে কৃষি ও পরিবেশের অনেক বিষয়  জানা ছিলনা। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং রিকল প্রকল্পের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক কিছু জেনেছি। শুষ্ক মৌসুমে চর এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পানি। চরাঞ্চলে পানি একেবারে  থাকে না। এতে করে ফসলের বেশ ক্ষতি হয়। যদি চরাঞ্চলে সেচ সুবিধা দেওয়া যেতো তাহলে আরও বেশি করে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হতো।’

কৃষক জিয়ারুল জানান, আগে থেকে চাষবাদ করলেও নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা কম ছিল। তবে রিকল প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সিবিও (কমিউনিট বেস অর্গনাইজেশন) করার পর আধুনিক কৃষি এবং পরিবেশ সম্পর্কে তিনি অনেক কিছু জেনেছেন।

বেসরকারি সংগঠন উন্নয়ন সংঘের রিকল প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর জোস্না আক্তার বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় চরের চাষিদের শুধু কৃষি উৎপাদনই নয়, পাশাপাশি কীভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যায়, পরিবেশ সম্মত কৃষির গুরুত্ব, কীটনাশক ব্যবহার না করা, জৈব সার ব্যবহার বিষয়ে সচেতন করা হয়। নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং ওরিয়েন্টেশন পাওয়ার পর চরের কৃষক এখন অনেক সচেতন এবং দায়িত্বশীল। কৃষকদের এ অগ্রযাত্রা দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ধরনের প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘সবজি উৎপাদন চরের কৃষকদের মাঝে নতুন এক উদ্দীপনা তৈরি করেছে। কৃষক সবজি বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে আগের চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে। আগে কৃষক ধান উৎপাদন করে খুব একটা সুবিধা করতে পারত না। সবজি চাষ এখন তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এনে দিয়েছে। কৃষি অফিস চরের কৃষকদের যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চরের জমিতে সবজি চাষ করে অভাব ঘুচিয়েছে সবজি চাষ

আপডেট টাইম : ০১:০০:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুলাই ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন চরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চরের জমিতে সব সবজি চাষ করে অভাব ঘুচিয়েছে সবজি চাষ। এক সময় বকশীগঞ্জের চরাঞ্চলে কেবলই ধান, পাট, গম চাষ করতেন কৃষক। কিন্তু ফলন কম হওয়ার কারণে এবং উৎপাদন খরচ অধিক হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষক অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়তেন। সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এখন বকশীগঞ্জের বালুর চর, টেরির চর ও মেরর চরসহ বিভিন্ন চরে পটল, কাকরোল, ঝিঙা, চালকুমড়ো, শসা, টমোটো, লাউ, মিষ্টি কুমড়ো ও পুইশাক চাষ হচ্ছে।

সবজি চাষে ভালো লাভ হওয়ার কারণে চরের কৃষক এখন যেমন পারিবারিক চাহিদাগুলো মেটাতে পারছেন, তেমনি কিছু সঞ্চয়ও করতে পারছেন। এ সবই সম্ভব হয়েছে সরকারের কৃষি অফিস এবং উন্নয়ন সংগঠনগুলোর সহযোগিতার কারণে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্স্যাম ইন বাংলাদেশের রি-কল প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় বেসরকারি সংগঠন উন্নয়ন সংস্থা চরের কৃষকদের নিয়ে কাজ করার ফলে সবজি উৎপাদন ও বিপণনে বড় ধরনের সুবিধা তৈরি হয়েছে।

কৃষক নূর আলী জমির মালিককে এক লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে তিন বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখন পরিবেশ সম্মতভাবে তারা চাষবাদ করছেন। আগে কৃষি ও পরিবেশের অনেক বিষয়  জানা ছিলনা। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং রিকল প্রকল্পের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক কিছু জেনেছি। শুষ্ক মৌসুমে চর এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পানি। চরাঞ্চলে পানি একেবারে  থাকে না। এতে করে ফসলের বেশ ক্ষতি হয়। যদি চরাঞ্চলে সেচ সুবিধা দেওয়া যেতো তাহলে আরও বেশি করে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হতো।’

কৃষক জিয়ারুল জানান, আগে থেকে চাষবাদ করলেও নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা কম ছিল। তবে রিকল প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সিবিও (কমিউনিট বেস অর্গনাইজেশন) করার পর আধুনিক কৃষি এবং পরিবেশ সম্পর্কে তিনি অনেক কিছু জেনেছেন।

বেসরকারি সংগঠন উন্নয়ন সংঘের রিকল প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর জোস্না আক্তার বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় চরের চাষিদের শুধু কৃষি উৎপাদনই নয়, পাশাপাশি কীভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যায়, পরিবেশ সম্মত কৃষির গুরুত্ব, কীটনাশক ব্যবহার না করা, জৈব সার ব্যবহার বিষয়ে সচেতন করা হয়। নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং ওরিয়েন্টেশন পাওয়ার পর চরের কৃষক এখন অনেক সচেতন এবং দায়িত্বশীল। কৃষকদের এ অগ্রযাত্রা দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ধরনের প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘সবজি উৎপাদন চরের কৃষকদের মাঝে নতুন এক উদ্দীপনা তৈরি করেছে। কৃষক সবজি বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে আগের চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে। আগে কৃষক ধান উৎপাদন করে খুব একটা সুবিধা করতে পারত না। সবজি চাষ এখন তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এনে দিয়েছে। কৃষি অফিস চরের কৃষকদের যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’