হাওর বার্তা ডেস্কঃ শার্শা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়েছে। শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী সালতা ফুলসারা গ্রামের দুই ভাই রাসেদুল ইসলাম ও আল হুসাইন নয় বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে ফেলেছেন। তাদের দেখাদেখি উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে।
‘উপজেলায় ২০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তিনজন চাষি ড্রাগন চাষ করেছেন। এছাড়া ফসলি জমি কিংবা বাড়ির ছাদে অন্তত ২০০ সৌখিন চাষি ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন।’
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, ড্রাগন চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। শুধু পরিচর্যা করেই গাছে ফল আনা যায়। ১৪ মাস বয়স হওয়ার পর গাছে ফল আসতে শুরু করে। ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর পাকা ফল সংগ্রহ করা যায়। বাজারে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিকেজি ফল বাজারে চার শ’ থেকে সাড়ে চার শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাষি রাসেদুল বলেন, ঢাকার বাজারে ড্রাগনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ঢাকার কারওরান বাজারে এ বছরের প্রথমে ড্রাগন ফল বিক্রি করেছি প্রতিকেজি ৭০০ টাকা দরে। এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চার শ’ থেকে পাঁচ শ’ টাকায়।
চাষি আল হুসাইন বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করতে সর্বমোট খরচ হয়েছে ১২ লাখ টাকা। বছর শেষে ৩৫ লাখ টাকা ড্রাগন ফল বিক্রির আশা করছেন তিনি। চার বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন রাসেদুল।
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে দুই বছর আগে ড্রাগন চাষ শুরু করি। এবছর ফল আসতে শুরু করেছে। আজ আমি স্বাবলম্বী। এটি একটি লাভজনক চাষ। তবে প্রথম অবস্থায় টাকা পয়সা খরচ একটু বেশি হওয়ায় সরকারি সহযোগিতা পেলে এ চাষ দ্রুত বিস্তার লাভ করবে।’
একজন সৌখিন ড্রাগন চাষি টেংরা গ্রামের শান্ত বলেন, তিন বছর আগে বাড়ির ছাদে তিনি ড্রাগন গাছ লাগান। গত বছর থেকে পুরোপুরি ফল আসতে শুরু করেছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই শুধু পরিচর্যা করে ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। সিমেন্টের তৈরি পিলারের উপরে টায়ার বেঁধে দিলে তাতে জড়িয়ে উঠে গাছগুলি ফল দেওয়া শুরু করে। বাণিজ্যিকভাবে বাগআচড়ার বসতপুর গ্রামের মনিরুজ্জামান সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন।
মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর আক্টোবরে ড্রাগনের কাটিং লাগানো হলে মার্চ এপ্রিলে ফুল আসা শুরু করে। এক বছর পর ফল পুরোপুরি বিক্রি করা যায়। একটি গাছ এক নাগাড়ে ৩০ বছর ফল দেয়।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুখেন্দু কুমার মজুমদার বলেন, ড্রাগন চাষে কৃষি অফিস থেকে চাষিদের পুরোপুরি সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাদের পরামর্শের ফলে চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। ওদের দেখাদেখি এলাকার অনেক চাষি এ ড্রাগন ফলচাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে। প্রতিবিঘা জমিতে ১ থেকে ৩ লাখ টাকার উপরে লাভ করা সম্ভব। ড্রাগন চাষে নিয়মিত পর্যবেক্ষণসহ চাষিদের প্রশিক্ষণ উৎসাহ ও পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। আগামীতে চাষিদের আরো সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ বাড়ানো হবে।
নাভারন ফজিলাতুননেছা মহিলা কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মুসতাক আহম্মেদ বলেন, দেশে অপ্রচলিত একটি ফল ড্রাগন। ক্যাকটাস গোত্রের এই গাছ দেখে সবাই এটাকে ‘সবুজ ক্যাকটাস’ বলে মনে করে। মধ্য আমেরিকায় এই ফল বেশি পাওয়া যায়। তবে এশিয়ার অনেক দেশে এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে।
ড্রাগন ফলে ক্যালোরি খুব কম তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এটি খুব উপকারী ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও আয়রণ রয়েছে; তাই শরীরের চর্বি ও রক্তের কোলেস্টেরল কমানোর কাজে এই ফলটি ব্যবহার হয়।