হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাশিয়ার কাজানে একদিকে বেলজিয়াম সমর্থকদের উল্লাস অন্যদিকে ব্রাজিল সমর্থকদের হুহু কান্নায় মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। রাশিয়া বিশ্বকাপে ‘হেক্সার’ (ষষ্ঠ শিরোপা) স্বপ্ন নিয়ে আসা ব্রাজিলকে বিদায় করে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে দ্বিতীয় বারের মতো সেমিফাইনালে চলে গেছে বেলজিয়াম। আর ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপ বাদ দিয়ে শেষ সাত বিশ্বকাপে ইউরোপের দলের কাছে হেরে নক আউট পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছে ব্রাজিলের। এছাড়া ব্রাজিল ২০০২ বিশ্বকাপে শেষ ষোলো থেকে বেলজিয়ামকে বিদায় করে দেয়। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ২-১ গোলে হারিয়ে তার এক প্রতিশোধও নিয়ে নিল দেশটির সোনালি প্রজন্ম।
ব্রাজিলের জালে প্রথমার্ধের মধ্যেই দুই গোল দিয়ে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। ম্যাচের ১৩ মিনিটের মাথায় প্রথম একাদশে প্রথম বারের মতো সুযোগ পাওয়া ফার্নান্দিনহোর আত্মঘাতি গোলে পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল। এরপর ৩১ মিনিটে ২-০ গোলের লিড নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে বেলজিয়াম। এবারের ব্যবধান বাড়ান ডি ব্রুইনি। ম্যাচের ৭৬ মিনিটে গোল করে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় ব্রাজিল। ব্যবধান কমিয়ে ২-১ করে সেলেকাও মিডফিল্ডার আগুস্তো। কিন্তু বেলজিয়াম গোলরক্ষকের থিবোর্ত কোর্তোয়ার দুর্দান্ত সেভ এবং কৌতিনহো-আগুস্তোর গোল মিসের মিছিল ব্রাজিলকে বিদায় করে দিল রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে।
ম্যাচের শুরু থেকে কাউন্টার অ্যাটাকে ব্রাজিলকে কোণঠাসা করে ফেলে বেলজিয়াম। নিজেদের রক্ষণ মজবুত রেখে বার বার ব্রাজিলে বক্সে ঢুকে পড়ে রেড ডেভিলসরা। দারুন দুই সেভ করেছেন ব্রাজিল গোলরক্ষক অ্যালিসন। এছাড়া তাদের কিছু দ্রুত গতির আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয় ব্রাজিল।
কিন্তু ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে বেলজিয়ামকে আক্রমণের পর আক্রমণ করে ব্যাতিব্যস্ত করে তোলে সেলেকাওরা। আর দলের হয়ে দ্বিতীয় গোলটা করেও ম্যাচের নায়ক ডি ব্রুইনি নন। আসল নায়ক বেলজিয়াম গোলরক্ষক। চোখ ধাঁধাঁনো কিছু আক্রমণ সেভ করেন বেলজিয়ামের চেলসি গোলরক্ষক।
পুরো ম্যাচে ব্রাজিল গোলে শট নিয়েছে ১৬টি। এরমধ্যে গোল হওয়ার মতো শট ব্রাজিলের নয়টি। এছাড়া গোলের বাইরে আরও সাতটি শট নিয়েছে ব্রাজিল। কিন্তু গোলের লক্ষ্যে মারা শটগুলো ফিরিয়ে দিয়েছেন বেলজিয়াম গোলরক্ষক। তবে ব্রাজিল মাথা খুঁটতে পারে আগুস্তোর সহজ সুযোগ পেয়েও গোল করতে না পারার জন্য। এরপর ৮৪ মিনিটে বুক চাপড়াতে পারেন কৌতিনহো সহজ সুযোগ পেয়েও গোল মিস করায়। আর নেইমারের নেওয়া ম্যাচের ৯০ মিনেটের সেরা শটটি ফিরিয়ে দেওয়ায় ব্রাজিলিয়ানরা স্বান্তনা খুঁজতে পারেন দিনটা আমাদের ছিল না।
এরআগে ম্যাচের শুরুতে ৪ মিনিটে বেলজিয়াম বারে লেগে বল ফিরে আসে। এরপর ১৩ মিনিটে গোল খাই ব্রাজিল। ৩১ মিনিটে গতি দিয়ে ব্রাজিল রক্ষণকে পেছনে ফেলেন লুকাকু। এরপর ব্রুইনিকে বাড়ানো বল ধরে দারুণ গোল করেন ম্যানসিটি তারকা। ৪০ মিনিটে দারুণ এক ফ্রি কিক নেন ব্রুইনি। ব্রাজিল গোলরক্ষক তা ফিরিয়ে দেন। এরপর কর্ণার কিক থেকে পাওয়া বলে পা ছুইয়ে দেন কোম্পানি। সেটাও ঠেকান অ্যালিসন।
বেলজিয়াম গোলরক্ষক থিবোর্ট কোর্তোয়া অবশ্য ভালো দুটি আক্রমণ ঠেকান। ৩৭ মিনিটে মার্সেলোর ভালো শট ঠেকান বেলজিয়াম গোলরক্ষক। ৩৯ মিনিটে আরও একটি আক্রমণ ঠেকান বেলজিয়াম গোলরক্ষক।
শুক্রবারের প্রথম ম্যাচে উরুগুয়েকে হারিয়ে এরই মধ্যে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স। ব্রাজিলকে হারিয়ে সেমিতে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে বেলজিয়াম। ব্রাজিল ঘরের মাঠে ২০১৪ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নেয়। এবার আবার সেমিতে যাওয়ার লড়াইয়ে মাঠে নামে তারা। কিন্তু বেলজিয়ামের কাছে হেরে হেক্সা মিশন শেষ হয়ে গেছে তাদের। ফ্রান্স-বেলজিয়াম আগামী ১০ জুলাই সেন্ট পিটার্সবার্গে মুখোমুখি হবে।