দেশের জনগণ চাইলে আবার সরকার গঠন করব প্রধানমন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আসছে জাতীয় নির্বাচনে দেশের জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। যদি বাংলাদেশের জনগণ ভোট দেয়, আল্লাহর ইচ্ছা থাকে, হয়তো আবার সরকার গঠন করব। আর যদি না হয়, সরকার গঠন করব না।’

প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

আগামী দিনে যদি সরকার গঠন না-ও করতে পারেন, তাহলেও পিজিআর সদস্যদের প্রতি দোয়া সব সময় থাকবে বলে জানান টানা সাড়ে ৯ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘চিরদিন আপনাদের কথা মনে থাকবে।

আপনারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরাপত্তার জন্য দিনরাত, রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে যে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেটা আমার সব সময় মনে থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর সর্বস্তরে চেইন অব কমান্ড বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, কার্যকরী কমান্ড চ্যানেল সশস্ত্র বাহিনীতে লক্ষ্য অর্জনে মুখ্য ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সব স্তরের কমান্ডারদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও তাঁদের প্রতি অনুগত থাকলে যেকোনো কাজ দক্ষতা, শৃঙ্খলা ও নৈপুণ্যের সঙ্গে সম্পন্ন করা সম্ভব।’

সেনা সদস্যদের শৃঙ্খলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে এই বাহিনীর সদস্যদের চেইন অব কমান্ড সব সময় মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তাঁদের অধীনস্থদের সুযোগ-সুবিধাও দেখতে হবে। আবার অধীনস্থ যাঁরা, তাঁরাও তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ মেনে শৃঙ্খলা বজায় রেখে কাজ করবেন, সেটাই আমি আশা করি। কারণ এটা যেহেতু সুশৃঙ্খল বাহিনী। কাজেই এর কমান্ড ঠিক থাকতে হবে এবং সব কিছু সুশৃঙ্খলভাবে চলতে হবে। তাহলেই যেকোনো লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে পারব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেছি ২০২০ সালের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা পালন করব, এই সময়ের মধ্যেই আমরা দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে গড়ে তুলতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণকে ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। সেই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করতে ‘ষড়যন্ত্রের’ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ একটা সম্মানজনক অবস্থানে এসেছে। একটা চ্যালেঞ্জ এসেছিল আমার ওপর। দোষারোপ করতে চেয়েছিল পদ্মা সেতুর দুর্নীতির কথা বলে। দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশেরই বেশ স্বনামধন্য মানুষ, সামান্য একটা ব্যাংকের এমডির পদ বয়সের কারণে হারিয়ে সে প্রতিশোধ নিয়েছিল পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করে দিয়ে।’

এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারণ দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। এসেছি দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে। সেটা প্রমাণিত হয়েছে, কোনো দুর্নীতি এখানে হয়নি। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেটা করতে পেরেছি। এখন পদ্মা সেতু দৃশ্যমান।’

শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের সময় পিজিআর সদস্যদের আবাসনসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর হারুন স্বাগত বক্তব্য দেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী পিজিআর সদর দপ্তরে পৌঁছলে রেজিমেন্টের কোয়ার্টার গার্ডে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর হারুন তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সব অফিসার ও জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে একটি সুসজ্জিত গার্ড রেজিমেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। তিনি অনুষ্ঠানে রেজিমেন্টে কর্মরত অবস্থায় নিহত, শহীদদের স্বজনদের উপহার সামগ্রী বিতরণ এবং অনুদান হস্তান্তর করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান, প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূইয়া, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রম, প্রেসসচিব ইহসানুল করিমসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র : বাসস

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর