জাতীয় আয়ে অবদান রাখবে অনগ্রসর নারীরাও

দেশের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

আশা করা হচ্ছে, দুগ্ধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের অনগ্রসর নারীরা নিজেদের দারিদ্র্য দূর করতে পারবে। একই সঙ্গে অবদান রাখতে পারবে দেশের অর্থনীতিতেও।

‘সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দেশের ছয় বিভাগের মোট ৫০ উপজেলার নারীদের উন্নয়নে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সমবায় অধিদপ্তর।

গত ২৭ এপ্রিল প্রকল্পের প্রস্তাবনা (ডিপিপি) যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। বর্তমানে এই প্রকল্পের পিইসি সভা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তবে জানা গেছে, কমিশন থেকে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় পাঠানোর আগে কিছু সংশোধনের কথা বলা হয়। এসব সংশোধিত ডিপিপি জমা হলেই প্রকল্পের মূল্যায়ন হবে। এরপর পিইসি’র সুপারিশের প্রেক্ষিতে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উঠতে পারে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথম ডিপিপিতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৯৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশক্রমে বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় কিছুটা কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরামর্শে প্রকল্পের ব্যয় কিছুটা কমিয়ে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা করা হচ্ছে।

মো. আসাদুজ্জামান জানান, ব্যয় কমানো হলেও প্রকল্পের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। প্রাথমিক ডিপিপিতে দেশের পাঁচ বিভাগের (সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ বাদে) ২৫ জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছিল। এক্ষেত্রে প্রতিটি জেলার দুটি করে মোট ৫০টি উপজেলা এর আওতায় আনা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে প্রকল্পের প্রস্তাবনায় চট্টগ্রাম বিভাগ যোগ করা হয়েছে।

সমবায় অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা জানান, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হবে। আশা করা যায়, নভেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পের পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সমবায় অধিদপ্তর জানায়, দুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের অনগ্রসর নারীদের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যেই এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

২০১৯ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ করবে সমবায় অধিদপ্তর। এরপর দেশের ১২ হাজার ৫০০ নারী গাভী পালন করে দুগ্ধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে নিজেদের দারিদ্র্য লাঘব করে দেশের উন্নয়নেও অবদান রাখতে পারবে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ৫০টি উপজেলায় ১২ হাজার ৫০০ জন নারী সুবিধাভোগী নির্বাচন এবং তাদের ডেইরি ও সমবায় ব্যবস্থাপনার ওপর সাত দিনের প্রশিক্ষণ প্রদান। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের সঙ্কর জাতেরদুটি গাভী হস্তান্তর এবং পালনের জন্য ২০ হাজার টাকা নগদ প্রদান। প্রকল্পের আওতায় ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ থাকবে দুই শতাংশ।

প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ১৯ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চলতি এডিপিতে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের জন্য জিওবি ২০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পসমূহের প্রস্তাবিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রথম অর্থবছরের মোট চাহিদা প্রায় ২০৮ কোটি টাকা। আলোচ্য প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রথম অর্থবছরে আরো ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।

কমিশন জানায়, এ অবস্থায় এ অর্থ কীভাবে সংস্থান করা হবে সে বিষয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের মতামত পর্যালোচনা করে প্রকল্পের প্রক্রিয়াকরণ করা প্রয়োজন। সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, সংশোধিত ডিপিপিতে বিষয়টির সমাধান থাকবে।

সমবায় অধিদপ্তর এর আগে এ ধরনের আরো কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ২০১১ সালে হাতে নেওয়া হয় ‘সমবায় ভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদন নিশ্চিতকরণ’ প্রকল্প। এ প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ মহিলা ও বেকার যুবকদের জন্য লাভজনক আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি ও গাভীর জাত উন্নয়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা।

এছাড়া প্রায় একই উদ্দেশ্যে ২০১২ সালে হাতে নেওয়া ‘দুগ্ধ সমবায় সমিতির কার্যক্রম বিস্তৃতকরণের মাধ্যমে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল ও খুলনা জেলার দারিদ্র হ্রাসকরণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

কিন্তু উপরোক্ত প্রকল্পগুলোর তুলনায় নতুন গৃহীত প্রকল্পটি মহিলাদের উন্নয়নে বেশি উপযোগী হবে বলে সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আশা করছেন।

কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলছেন, সমবায় অধিদপ্তর মূলত বেকার মহিলা ও যুবকদের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করে। কিন্তু উক্ত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে শুধুমাত্র সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে। এমনকি এটি বাস্তবায়িত হবে শুধুমাত্র সিলেট বিভাগ ব্যতিত পুরো দেশে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর