নদীভাঙন রোধে নতুন একটি প্রকল্প নিচ্ছে সরকার। বিশ্বব্যাংকের ৬০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তায় এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এ ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। শিগগিরই এ সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষকে প্রতি বছর বন্যার ভয়াবহতা ও নদীভাঙন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
‘নদী ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ নামে এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হবে ৪০০ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সহজ শর্তের ঋণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ঋণের বিপরীতে বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এ প্রকল্প পরামর্শক সেবায় ৭৬৫ কোটি টাকা, ভূমি অধিগ্রহণ ৪৪১ কোটি টাকা, বাঁধ নির্মাণ ১ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা, নদীতীর সংরক্ষণ ১ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা, গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ ১৪৩ কোটি টাকা এবং ৩২টি যানবাহন ক্রয় ও মেরামত বাবদ ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর এবং বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনটকে প্রকল্পের এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে।
প্রকল্পের কাজ তিনটি ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধম ধাপ_ ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর ও যমুনা সেতু থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে ৫০ কিলোমিটারব্যাপী নদীরক্ষা বাঁধের উন্নয়ন (সিরাজগঞ্জের সিমলা থেকে বগুড়ার হাসনাপাড়া পর্যন্ত) করা হবে। উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে_ যমুনা নদীর ডান তীরে ৫০ কিলোমিটার সার্ভিস রোড পুনর্নির্মাণ, ৩৬ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৫টি গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করা। দ্বিতীয় ধাপ_ যমুনা সেতু থেকে সিরাজগঞ্জের সিমলা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার ও বগুড়ার হাসনাপাড়া থেকে তিস্তা আউটফল পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণ। তৃতীয় ধাপ_ বাঁধের ভেতরের অংশ বরাবর ১৩৭ কিলোমিটার ৪ লেনবিশিষ্ট রাস্তা নির্মাণ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান কাজী শফিকুল আযম বলেন, শিগগিরই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সংস্থাটির অর্থায়নে যে প্রকল্পগুলো পাইপলাইনে রয়েছে এটি তার মধ্যে অন্যতম। এরই মধ্যে ঋণের শর্তসহ যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভায় প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে বেশ কয়েকটি আপত্তি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে_ প্রকল্পের আওতায় প্রতি কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ বাবদ ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ অত্যধিক বলে মনে করে কমিশন। এ ছাড়া পরামর্শ সেবা বাবদ বরাদ্দের অর্থ হ্রাস করে বৈদেশিক সহায়তা থেকে ব্যয় করা ও প্রকল্পের আওতায় বাঁধ নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও পুনর্বাসনের বিষয়টি পাউবোর পক্ষ থেকে স্পষ্টকরণের কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৩৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ছাড় করেছে এ সংস্থাটি।