এতদিন জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের তেমন কোনো কর্মকাণ্ডের কথা শোনা যায়নি বাংলাদেশে৷ কিন্তু এবার এক বিদেশি নাগরিক হত্যার দায় স্বীকারের মাধ্যমে তাদের তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে৷ ভূ-রাজনৈতিক কারণেই আইএস নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে৷
দু’দিন আগে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে বাংলাদেশে ক্রিকেট দল পাঠাতে বিলম্ব করেছে অস্ট্রেলিয়া৷ আর তাদের ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা টিমের প্রধানের ঢাকা ত্যাগ করার আগেই কূটনৈতিক এলাকায় খুন হয়েছেন ইটালির এক নাগরিক৷
খুনের কয়েক ঘণ্টা পরই হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের জঙ্গিরা৷ আর হত্যাকাণ্ডের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ক্যানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে সেই সব দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
এ ঘটনাগুলোর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে ধারণা র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানের৷ তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে জঙ্গিদের কোনো ধরনের তৎপরতা নেই৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে তাদের অবস্থানও খুব দুর্বল৷ বাংলাদেশে নাশকতা করার মতো শক্তিও এখন তাদের নেই৷
কর্নেল জিয়া বলেন, কিন্তু হঠাৎ করে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশে না আসা, গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় ইটালীয় নাগরিকের খুন হওয়া, আইএসের দায় স্বীকার ও প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের জনসাধারণের চলাচলের ওপর সতর্কতা জারি – বিষয়গুলো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না৷ এর পেছনে কোনো স্যাবোটাজ (ষড়যন্ত্র) থাকতে পারে বলেই আমার মনে হচ্ছে৷ আমরা সেগুলো বের করার চেষ্টা করছি৷
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, অস্ট্রেলিয়া যে কাজটি করেছে সেটা করা তাদের মোটেও উচিত হয়নি৷ কথা নেই, বার্তা নেই, হঠাৎ করে তারা নিরাপত্তা শঙ্কার কথা মিডিয়ায় জানিয়ে ক্রিকেট দল বাংলাদেশে পাঠালো না৷ এটা না করে তারা বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতো৷
আমার মতে, জঙ্গিরাও এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে থাকতে পারে৷ কারণ এখন বাংলাদেশে জঙ্গিদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ অর্থাৎ কিছু করলে প্রচারও পাওয়া যাবে বেশি৷ ফলে অস্ট্রেলিয়ার এই আচরণ জঙ্গিদের উৎসাহিত করতে পারে৷ সারা বিশ্বে ইসলামিক স্টেট বা অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর যে তৎপরতা রয়েছে, বাংলাদেশে তা তাই৷ এখন আসলে সবাইকে ঠিক করতে হবে, কীভাবে এই জঙ্গিদের মোকাবেলা করা যায়৷ সবকিছু কেমন যেন হঠাৎই ঘটে যাওয়ায়৷ এর পেছনে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে৷
গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি) বাংলাদেশে ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে৷ ডিএফএটির ওয়েবসাইটে দেয়া নোটিসে বলা হয়, জঙ্গিরা বাংলাদেশে ‘অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থের ওপর’ আঘাত হানার পরিকল্পনা করছে– এমন ‘নির্ভরযোগ্য তথ্য’ তাদের হাতে রয়েছে৷ এরপরই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শন ক্যারল বাংলাদেশে এসে দফায় দফায় বৈঠক করেন সরকারের মন্ত্রী, শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে৷
এসব ঘটনার মধ্যেই সোমবার রাতে গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় খুন হন ইটালির নাগরিক তাবেলা সিজার৷ তিনি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসিও বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রুফস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ৷
আইসিসিও সারাবিশ্বে খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে কাজ করে৷ এই খুনের পর রাতেই নিজেদের ওয়েবসাইটে হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় আইএস৷ অবশ্য তার আগেই অর্থাৎ হত্যাকাণ্ডের পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডাসহ কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে ওই সব দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দেয়া হয়৷ সূত্র : ডয়চে ভেলে