ঢাকা ০১:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতীয় ফল কাঁঠাল: উন্নয়নে এসেছে বিদেশি আঠাবিহীন রঙিন জাত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৪১:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ জুন ২০১৮
  • ৫৭৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যত দোষ আঠার। খেতে গেলে জড়িয়ে যায়, লাগলে সহজে ছাড়েনা। তাই পছন্দের হলেও অনেকে খেতে চান না, এদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। অথচ এ ফলের অতি উন্নত জাত সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রপ্তানীর প্রচুর সুযোগ থাকলেও প্রকিয়াজাতকরণ এবং ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতি বছর উৎপাদিত জাতীয় ফল কাঁঠালের প্রায় ৪০ ভাগ পঁচে নষ্ট হয়।

এদিকে বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতায় সঠিক দাম না পাওয়ায় দেশে কমছে কাঁঠাল চাষের জমি, কমছে কাঁঠাল গাছ। দেশে কাঁঠালের এই বেহাল দশায় ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের পুরো বাজার দখল করেছে ভারতীয় কাঁঠাল। দেশে এসেছে ভিয়েতনামি আঠাবিহীন রঙ্গিন কাঁঠাল। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চেীধুরী চলতি বছরের তৃতীয় জাতীয় সবজি মেলার উদ্বোধনী দিনের সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আক্ষেপের সুরে বলেন, মধ্যপ্রাচ্য দখল করেছে ভারতীয় কাঁঠাল। ফ্রেশ ফুড হিসেবে ছাড়াও ভেজিটেবল মিট বানিয়ে খাওয়া এবং রপ্তানী করা যায় কাঁঠাল।

জাতীয় পরামর্শক এম এনামুল হক বলেন, কাঁঠাল অতি পুষ্টিকর। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে দেশ বিদেশে কদর আছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম কাঁঠালের বেশকিছু সংখ্যক উন্নত জাত অবমুক্ত করেছে। এসব জাতের কাঁঠালে আঠা, ভোঁতা বা ছোবড়াও নেই। এসব কাঁঠাল কেবল কোয়া বা কোষে ঠাসা। ফল অতি সুস্বাদু, মিষ্টি এবং রং-বেরঙের (গোলাপী, লাল)। সাধারণ মানের কাঁঠালের চেয়ে দাম তিন থেকে চারগুণ বেশি। কিছু প্রতিষ্ঠান এসব জাতের কলম এনে এ দেশে বিপনন করছে। এর অন্যতম সুবিধা হলো এই জাতের কাঁঠালের বাগানে খরচ কম লাভ বেশি। এর একটা বারোমাসি জাতও আছে। তা লাগানো হলে বারোমাস ধরে অসময়ে প্রচুর ফল বেশি দামে বিপনন সুবিধা নিশ্চিত হতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইং সূত্রে জানা যায়, কাঁঠালের জমি ক্রমান্বয়ে কমে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২৯৫ হেক্টর। এসময় দেশে কাঁঠাল উৎপন্ন হয় ১৭লাখ ৫১ হাজার ৫৪৯ মেট্রিক টন। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৭৯হাজার ১২ হেক্টর জমিতে ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ২০৯ মেট্রিক টন, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ৭৯ হাজার ৯৪৭ হেক্টরে ১৬লাখ ৬৬ হাজার ৮৬৯ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়। প্রতিনিয়ত নানা কারণে নিধন হলেও নতুন করে কাঁঠাল গাছ লাগানো হচ্ছে কম।

মৌসুমে উৎপাদিত কাঁঠালের দাম না পাওয়া এবং এর কাঁঠের ব্যবহারও আগের চেয়ে কমে যাওয়ায় এই বিরুপ পরিস্থিতির মুখে পড়ছে দেশ। বছরব্যপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরুল ইসলাম বলেন, মৌসুমে রাজধানী ঢাকায় মোটামুটি বড় সাইজের একটি কাঁঠাল বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। দাম না পাওয়া, প্রকিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকা এবং ব্যবস্থাপনার দূর্বলতায় সম্ভাবনাময় জাতীয় ফল কাঁঠালকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছেনা। ইতিপূর্বে কাঁঠাল নিয়ে তেমন কাজ না হলেও বর্তমানে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা হচ্ছে।

আগে সমস্যা থাকলেও এখন কাঁঠালের বহু জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আঠাবিহীন এবং অন্যান্য জাতের কাঁঠালের চারা আনা হয়েছে। থাইল্যান্ড থেকে আনা আঠাবিহীন কাঁঠালের গাছে ইতিমধ্যে ফলও ধরেছে। কাঁঠালের বহুমুখি ব্যবহার নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগের কথা ভাবা হচ্ছে। প্রতিকুল অবস্থায়ও বাংলাদেশ কাঁঠাল উৎপাদন কারি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ভারত রয়েছে প্রথম স্থানে। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং নেপালের অবস্থান ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের টেশনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট নাহিদ বিন রফিক বলেন, আকারের দিক থেকে সম্ভবত কাঁঠালই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফল। পুষ্টিও স্বাদে কাঁঠালের তুলনা নেই। বিশাল এ ফলটির কোনো কিছুই ফেলনা নয়। অন্য ফলের চেয়ে এটি দামে বেশ সস্তা। তাইতো কাঁঠালকে বলা হয় গরীবের ফল। কাঁঠালে আছে অনেক ঔষধিগুণ। ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো ভয়াবহ অসুকের ঝুঁকি কমায়। এর বিচি শিলপাটায় পিশে কোল্ডক্রিমের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের বলি রেখা দূর হয়। কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে গিমোগ্লোবিন থাকায় শরীরের রক্ত স্বল্পতা দূর হয়। উচ্চরক্ত চাপ, রাতকানা, আলসার, টেনশন, অতিরিক্ত ওৎন, রক্ত আমাশয়, ম্যালেরিয়া, সর্দি, জ্বর এবং কাশির জন্য উপকারি। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে অস্টেওপরোসিস নামের হাড়ের রোগ প্রতিরোধ করে এবং এর গঠনকে সুদৃড় করে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় ফল কাঁঠাল: উন্নয়নে এসেছে বিদেশি আঠাবিহীন রঙিন জাত

আপডেট টাইম : ০২:৪১:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ জুন ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যত দোষ আঠার। খেতে গেলে জড়িয়ে যায়, লাগলে সহজে ছাড়েনা। তাই পছন্দের হলেও অনেকে খেতে চান না, এদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। অথচ এ ফলের অতি উন্নত জাত সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রপ্তানীর প্রচুর সুযোগ থাকলেও প্রকিয়াজাতকরণ এবং ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতি বছর উৎপাদিত জাতীয় ফল কাঁঠালের প্রায় ৪০ ভাগ পঁচে নষ্ট হয়।

এদিকে বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতায় সঠিক দাম না পাওয়ায় দেশে কমছে কাঁঠাল চাষের জমি, কমছে কাঁঠাল গাছ। দেশে কাঁঠালের এই বেহাল দশায় ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের পুরো বাজার দখল করেছে ভারতীয় কাঁঠাল। দেশে এসেছে ভিয়েতনামি আঠাবিহীন রঙ্গিন কাঁঠাল। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চেীধুরী চলতি বছরের তৃতীয় জাতীয় সবজি মেলার উদ্বোধনী দিনের সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আক্ষেপের সুরে বলেন, মধ্যপ্রাচ্য দখল করেছে ভারতীয় কাঁঠাল। ফ্রেশ ফুড হিসেবে ছাড়াও ভেজিটেবল মিট বানিয়ে খাওয়া এবং রপ্তানী করা যায় কাঁঠাল।

জাতীয় পরামর্শক এম এনামুল হক বলেন, কাঁঠাল অতি পুষ্টিকর। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে দেশ বিদেশে কদর আছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম কাঁঠালের বেশকিছু সংখ্যক উন্নত জাত অবমুক্ত করেছে। এসব জাতের কাঁঠালে আঠা, ভোঁতা বা ছোবড়াও নেই। এসব কাঁঠাল কেবল কোয়া বা কোষে ঠাসা। ফল অতি সুস্বাদু, মিষ্টি এবং রং-বেরঙের (গোলাপী, লাল)। সাধারণ মানের কাঁঠালের চেয়ে দাম তিন থেকে চারগুণ বেশি। কিছু প্রতিষ্ঠান এসব জাতের কলম এনে এ দেশে বিপনন করছে। এর অন্যতম সুবিধা হলো এই জাতের কাঁঠালের বাগানে খরচ কম লাভ বেশি। এর একটা বারোমাসি জাতও আছে। তা লাগানো হলে বারোমাস ধরে অসময়ে প্রচুর ফল বেশি দামে বিপনন সুবিধা নিশ্চিত হতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইং সূত্রে জানা যায়, কাঁঠালের জমি ক্রমান্বয়ে কমে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২৯৫ হেক্টর। এসময় দেশে কাঁঠাল উৎপন্ন হয় ১৭লাখ ৫১ হাজার ৫৪৯ মেট্রিক টন। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৭৯হাজার ১২ হেক্টর জমিতে ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ২০৯ মেট্রিক টন, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ৭৯ হাজার ৯৪৭ হেক্টরে ১৬লাখ ৬৬ হাজার ৮৬৯ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়। প্রতিনিয়ত নানা কারণে নিধন হলেও নতুন করে কাঁঠাল গাছ লাগানো হচ্ছে কম।

মৌসুমে উৎপাদিত কাঁঠালের দাম না পাওয়া এবং এর কাঁঠের ব্যবহারও আগের চেয়ে কমে যাওয়ায় এই বিরুপ পরিস্থিতির মুখে পড়ছে দেশ। বছরব্যপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরুল ইসলাম বলেন, মৌসুমে রাজধানী ঢাকায় মোটামুটি বড় সাইজের একটি কাঁঠাল বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। দাম না পাওয়া, প্রকিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকা এবং ব্যবস্থাপনার দূর্বলতায় সম্ভাবনাময় জাতীয় ফল কাঁঠালকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছেনা। ইতিপূর্বে কাঁঠাল নিয়ে তেমন কাজ না হলেও বর্তমানে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা হচ্ছে।

আগে সমস্যা থাকলেও এখন কাঁঠালের বহু জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আঠাবিহীন এবং অন্যান্য জাতের কাঁঠালের চারা আনা হয়েছে। থাইল্যান্ড থেকে আনা আঠাবিহীন কাঁঠালের গাছে ইতিমধ্যে ফলও ধরেছে। কাঁঠালের বহুমুখি ব্যবহার নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগের কথা ভাবা হচ্ছে। প্রতিকুল অবস্থায়ও বাংলাদেশ কাঁঠাল উৎপাদন কারি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ভারত রয়েছে প্রথম স্থানে। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং নেপালের অবস্থান ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের টেশনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট নাহিদ বিন রফিক বলেন, আকারের দিক থেকে সম্ভবত কাঁঠালই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফল। পুষ্টিও স্বাদে কাঁঠালের তুলনা নেই। বিশাল এ ফলটির কোনো কিছুই ফেলনা নয়। অন্য ফলের চেয়ে এটি দামে বেশ সস্তা। তাইতো কাঁঠালকে বলা হয় গরীবের ফল। কাঁঠালে আছে অনেক ঔষধিগুণ। ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো ভয়াবহ অসুকের ঝুঁকি কমায়। এর বিচি শিলপাটায় পিশে কোল্ডক্রিমের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের বলি রেখা দূর হয়। কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে গিমোগ্লোবিন থাকায় শরীরের রক্ত স্বল্পতা দূর হয়। উচ্চরক্ত চাপ, রাতকানা, আলসার, টেনশন, অতিরিক্ত ওৎন, রক্ত আমাশয়, ম্যালেরিয়া, সর্দি, জ্বর এবং কাশির জন্য উপকারি। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে অস্টেওপরোসিস নামের হাড়ের রোগ প্রতিরোধ করে এবং এর গঠনকে সুদৃড় করে।