সোনা’ খ্যাত বাদামের স্বপ্নে ভাঙন ধরেছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পদ্মা-মধুমতি-কুমার নদী বিধৌত ফরিদপুরের চরাঞ্চলে হাসি ফোটাতো বাদাম। কিন্তু এ বছর চরের ‘সোনা’ খ্যাত বাদামের স্বপ্নে ভাঙন ধরেছে। নদ-নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলে আবাদকৃত বাদাম খেতে পানি ঢুকেছে। ফলে অপরিপক্ক বাদামই তুলে ফেলতে হচ্ছে কৃষকদের।

জেলার অর্ধশতাধিক চরে বসবাসকারী মানুষ এখন বাদাম তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বছরের অধিকাংশ সময় পানির নিচে অবস্থানের পর স্বল্প সময়ের জন্য জেগে ওঠা এসব চরের জমিতে স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক ফসল হিসেবে বাদামকেই বেছে নেন চাষিরা। এক সময় চরের মাটিকে বন্ধা বিবেচনা করে কোনো ফসলের আবাদ করা হতো না। বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার একর জমি পতিত পড়ে থাকতো। কিন্তু এখন সময় বদলেছে।

Foridpur-badam-3

জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের এসব জমি জুড়ে সবুজের সমারোহ। জেলা সদর, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা, চরভদ্রাসন, বোয়ালমারী, সদরপুরে প্রায় অর্ধশতাধিক চর জেগে ওঠে। এসব জেগে ওঠা চরে অন্য ফসলের ভালো ফলন না হওয়ায় গত ৭-৮ বছর ধরে চাষাবাদ করা হচ্ছে চিনা বাদাম।

চরাঞ্চলের বসবাসকারীরা জানান, এখানকার মানুষ শুধু শহরের বিভিন্ন ধরনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে বদলে গেছে তাদের জীবনচিত্র। এখন শুধুই চরের নিকটবর্তী শহরের মানুষের দেয়া কাজ আর অনুদানের উপর নির্ভর না করে এসব মানুষ চরের জমিতে বাদামের আবাদ করে ঘুরিয়েছে জীবনের চাকা।

জেলার সদরপুর উপজেলার চরমানাইর ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, তার এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পদ্মা নদীর চর জেগে ওঠায় সেখানে বাদাম চাষ করছে চাষিরা। কৃষি বিভাগের সহায়তায় চর এলাকাগুলোতে বেশ কয়েক বছর ধরে চিনা বাদামের আবাদ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় ৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে। যেটা গত বছর আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে।

সরেজমিনে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চরের কৃষকরা বাদাম তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাড়ির সকল সদস্যদের নিয়ে তারা বাদাম তুলছেন। পানি বাড়ার কারণে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাদাম তুলছেন তারা।

Foridpur-badam-3

ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিন্টু ফকির বলেন, এ বছর বাদাম চাষিদের একটু ক্ষতি হয়েছে। পানির কারণে তাদের আগে থেকেই বাদাম খেত থেকে তুলতে হয়েছে। তবে ফলন কিছুটা ভালো হওয়ায় তেমন সমস্যা হবে না। আগে যারা বাদাম আবাদ করেছিলেন তারা পানি আসার আগেই বাদাম ঘরে তুলতে পেরেছেন।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কার্ত্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, চলতি মৌসুমে জেলার নয় উপজেলার মধ্যে ছয় উপজেলায় চিনা বাদামের আবাদ করা হয়েছে। চরাঞ্চলে এমনিতেই অন্যফসল ভাল হয় না, সেই বিবেচনায় আমরা তাদের বাদাম আবাদে উৎসাহী করেছি। এখন ফরিদপুরের বিভিন্ন চরে অন্যতম অর্থকারি ফসল বাদাম। এই বাদাম আবাদের মাধ্যমে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, জেলায় বাদামের চাষাবাদ বাড়াতে ৬শ কৃষকের মাঝে প্রনোদনা হিসেবে প্রতি কৃষককে ১০ কেজি করে বাদাম বীজ ও ১৫ কেজি করে বিভিন্ন ধরনের সার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ফলোআপ হিসেবে ৮ হাজার ৪শ কেজি ভালোমানের বীজ বিতরণ ও চাষিদের বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বছর পানির কারণে বাদামের ফলনে কিছুটা বিঘ্ন হলেও চাষিরা তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর