রাজনীতির অগ্নিপরীক্ষা

সামনে রাজনীতির অগ্নিপরীক্ষা। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আগামী বছরের শেষ লগ্নে তা করার একটি মানসিক প্রস্তুতি চলছে রাজনীতির অন্দরমহলে। শাসক জোটের নেতা-মন্ত্রীরা যতই বলুন ২০১৯ সালের মেয়াদ পূর্তির একদিন আগেও নির্বাচন নয়, হয় তারা জানেন না, না হয় না জানার ভাব করেন মাত্র। রাজনৈতিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে যারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন তারা মনে করেন এ খবর দুই নেত্রীর পর যিনি জানেন তিনি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দুনিয়ার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে যেমন সরকার ভাবছে তেমনি ৫ই জানুয়ারির নৈতিক দায়মুক্তি নিতে চায় মানুষের কাছ থেকে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমান দণ্ডিত হলেই মাইনাস ফর্মুলায় বিএনপিকে ভাঙনের মুখে পতিত করে ভোটযুদ্ধে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। রাজনীতির দাবার চালে খালেদা জিয়াও জামায়াতকে ছেড়ে দিয়ে, জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিনের কেক কাটা উৎসব না করার অঙ্গীকার করে চ্যালেঞ্জ নেয়ার কথা ভাবছেন। এ ক্ষেত্রে আগামী দিনের ভোটের রাজনীতিতে অন্যান্য শরিকদের সঙ্গে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব

, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমদের নেতৃত্বাধীন ছোট ছোট রাজনৈতিক শরিককে লাইমলাইটে নিয়ে জোটবদ্ধ হতে পারেন। ১৯৮৯ সালে জামায়াত যেমন আইডিয়ালে যুক্ত হয়েছিল তেমনি আবার তার কিছু লোকজনকে ছোট দলের ব্যানারে জোটের প্রার্থী করে দিতে পারে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন যাবার আগে নেতাদের সঙ্গে যে বৈঠক করেছেন সেখানে তিনি তার সত্য মনোভাবই প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেছেন, মনে হয়েছে লন্ডনে নির্বাসিত পুত্র তারেক রহমান ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদই করছেন না রাজনৈতিক বোঝাপড়া করতে যাচ্ছেন। ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনে নেমে আসা এ মহাদুর্যোগকালীন সময়ে দলকে ক্ষমতার রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে খালেদা জিয়া একাই ড্রাইভ করতে চান। একদিকে দলের হঠকারী সিদ্ধান্ত অন্যদিকে সরকারের সীমাহীন নির্যাতনে বিএনপির কার্যক্রম মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এটি যেমন নেতারা বুঝছেন, তেমনি তারা জানেন জনগণের মধ্যে সরকারের বিরোধী অসন্তোষ প্রবল। তবে খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনও শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নয় নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবিতে অনঢ় থাকবেন। অনেক পর্যবেক্ষকের ধারণা, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহোজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করলেও বামপন্থি শরিকরা মুখ খোলেননি। আওয়ামী লীগের নেতারাও ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের নেতাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন সংসদ থেকে ওয়াকআউট করার। পর্যবেক্ষকদের মতে, আগামী ডিসেম্বর থেকেই রাজনীতিতে নতুন হাওয়া বইতে শুরু করবে। একই সঙ্গে নয়া মেরুকরণের আভাস মিলবে। দেশের কার্যক্রমে আওয়ামী লীগ সরকারের কর্তৃত্ব থাকলেও রাজনীতিতে সেই কতৃত্ব নেই সে ব্যাপারে অনেকেই একমত। এমনকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটবিরোধী উত্তাল ছাত্রবিক্ষোভকে অনেকে সরকারবিরোধী, বন্ধ্যা রাজনীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের বিস্ফোরণ বলেই চিহ্নিত করছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যেমন এই দুঃসময় থেকে বেরিয়ে এসে ক্ষমতার বসন্ত উপভোগ করতে চান তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কুড়িবারের বেশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতিতে হেঁটেছেন। ২০০৮ এর পরও তার বিরুদ্ধে প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। দুই নেত্রী সামনে ক্ষমতার রাজনীতির জন্য যে পথ হাঁটা শুরু করতে যাচ্ছেন সেখানে সমঝোতা না সংলাপ সেই প্রশ্ন যেমন আসছে তেমনি রাজনীতি যে অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে তার আলামতও দেখা যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। সৌজন‌্যে: মানবজমিন

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর