ঢাকা ০২:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদের পর জামায়াত ছাড়ছে বিএনপি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জুন ২০১৮
  • ৩৫০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জামায়াত ছাড়লেই ক্ষমতা মিলবে। পাওয়া যাবে ভারতসহ অন্যান্য দেশের সহানুভূতি। কাজে লাগানো যাবে অন্য কোনো শক্তিও! পাশে থাকবে বামপন্থি বুদ্ধিজীবীরাও। আদর্শিক দলীয় কর্মীরাও উজ্জীবিত হবেন। সরকার পতনের আন্দোলনে সাধারণ জনগণও সম্পৃক্ত হবেন। লন্ডনে তারেক জিয়ার সাথে বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েই দেশে ফিরছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির বিশ্বস্ত সাংবাদিককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে দলের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, এই সিদ্ধন্তের সাথে বেগম খালেদা জিয়া একমত নয়। দলীয় চাপে জামায়াত ছাড়ার সিদ্ধান্ত বহুবার উড়িয়ে দিয়েছেন কারাগারে থাকা বিএনপিপ্রধান। এখন দল যেহেতু তারেকের নির্দেশেই চলছে তাই দ্রুতই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথেই হাঁটছেন তারেক-ফখরুল।

ঈদের পর মাসখানেক নীরব থেকে আন্দোলন ঘোষণার আগ মুহূর্তেই বিএনপির পক্ষ থেকে কৌশলে জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা আসতে পারে। তবে বহির্বিশ্বকে দেখানোর জন্য জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ভিন্ন কৌশলে জামায়াতকে নির্বাচনের আগে মাঠে ব্যবহার করার চেষ্টা বিএনপির পক্ষ থেকে ঠিকই থাকবে বলে সূত্রের মত।বিএনপি বুদ্ধিজীবীদের মত, বিএনপি এতদিন সভা-সেমিনারে ভারত বিরোধিতার কথা বললেও রাজনৈতিক সংকট সমাধানে ভারতের দিকেই তাকিয়ে আছেন। ভারতের কাছেই এখনো সমাধান চায় বিএনপি। আন্দোলন এবং নির্বাচনের পাশাপাশি বিএনপি প্রথমে চাচ্ছে ভারতের সঙ্গে একটি সমঝোতা করতে। কারণ ভারত না চাইলে কিছুই হবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ের আগে ভারতের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসতে চাইছে বহুদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এ দলটি।

তাই ভারতের সাথে ধারাবাহিক যোযোযোগ অব্যাহত রাখছেন। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিএনপি প্রতিনিধি দল সাত দিনের ভারত সফর করেছেন। এছাড়া ঢাকাতেও বিএনপির শীর্ষ নেতা ড. মঈন খান এবং সাবিহ উদ্দিন আহমেদ একাধিকবার ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অন্যদিকে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক জিয়াও ভারতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এখন ভারত এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য দলের শরীক দল জামায়াতের সঙ্গ ছাড়াই বিএনপির জন্য প্রযোজ্য হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। খালেদা জিয়া কারাগারে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনও দেশের বাইরে। শরীকদল জামায়াতকে নিয়ে আগামী নির্বাচনের আগে কী হবে এ নিয়ে সুরাহা করতে লন্ডনে দলের মহাসচিবের সফর বলেও ধারণা করছেন দলের একটি অংশ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করে আসার পর পরই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির দিল্লিতে এক সপ্তাহ সফর করে এসেছেন।

যারা দিল্লির ‘থিংক ট্যাংক’ হিসেবে পরিচিত এমন শীর্ষ নেতাদের সাথেও সাক্ষাৎ হয় বিএনপির এই নেতাদের সাথে। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন (আরজিএফ), অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ), বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন (ভিআইএফ) ও ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ (আইডিএসএ)। ভারত সফর করে আসা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তারা ভারতের ‘দৃষ্টিভঙ্গির’ পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন। এ নিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের যে সংকট তা তারা অনুধাবন করছে এবং এটা থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়োজন আজ তারা মনে করছে। এটা একটা ইতিবাচক পরিবর্তন।

বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন দেখতে চাইছে ভারত। অন্যদিকে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, তাদের সাথে আলোচনা করে আমাদের মনে হয়েছে যে, ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি খুব পরিষ্কার। উনারা চাচ্ছেন, এবারে বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন হোক।বৈঠকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিজেপি এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভারতের আস্থা অর্জন করতে হলে বিএনপিকে অবশ্যই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়তে হবে। যে দাবি দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও করে আসছে। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বাংলাদেশের তিন নেতাকে সাফ জানিয়ে দেন, বর্তমানে জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে নির্বাচনি ঐক্য গড়লে বিজেপির পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

বিজিবির পক্ষে সম্ভব হবে না এমন কোনো দলের সাথে সম্পৃক্ত রাখা, যারা জামায়াতের মতো দলের সাথে ঐক্য গঠন করে। জামায়াতের সকল কর্মকা-ই ভারতের কাছে আছে। বিএনপি যদি জামায়াতমুক্ত হতে পারে তাহলে অবশ্যই বিএনপি ভারতের বড় একটি অংশের সমর্থন পাবেন। জানা যায়, ভারতের এই বার্তা তাৎক্ষণিক পাঠানো হয় তারেক জিয়ার কাছেও। এছাড়াও বহুদিন ধরে ভারতের সাথে বিএনপির সময়ও ভালো যাচ্ছে না। গত নির্বাচনে যখন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফর করেন তখন বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে একত্রিত হয়ে যৌথ হরতাল ডাকেন। তখন হরতালের অজুহাতে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি খালেদা। এই দৃষ্টান্ত ভারতের গায়ে লেগেছে। ভারতীয়দের মত, এটি তাদের কোনো সরকারই ভুলবেন না। ভারতের দেশপ্রেম অনেক মজবুত। ভারত সব সময় হিসাব কষে। হিসাবে না মিললে শিক্ষাও যে দিতে পারেন, তা বিগত বছরে বিএনপিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সবকিছু ভুলে বিএনপি ফের ভারতকে পাশে পেতে চাইছে।

ভারত থেকে বিএনপির প্রতিনিধি দল আসার পর পরই লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে যান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ৩ জুন চিকিৎসার জন্য প্রথমে তিনি ব্যাংকক যান। এরপর ৮ জুন লন্ডনে তারেকের সাক্ষাতের জন্য চলে যান বিএনপির এই নীতিনির্ধারক। তারেক রহমানের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেন তিনি। বৈঠককালে দেশের চলমান পরিস্থিতি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন মহাসচিব। তবে বৈঠকে ভারতের চাহিদা অনুযায়ী জামায়াত ছাড়ার নানান কৌশল নিয়েও আলোচনা হয় বলে বেশকিছু দলীয় সূত্রের দাবি। এছাড়াও নির্বাচনের আগে অন্য একটি কৌশল অবলম্বন হতে পারে বলে লন্ডনের একটি সাংবাদিককে বলেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দলের নতুন চেয়ারপারসন হতে পারেন। ডা. জোবাইদা রহমান। যেহেতু তার স্বচ্ছতা নিয়ে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একটি অনুষ্ঠানে প্রশংসা করেন।

রাজনীতিতে তাকে নিয়ে খুব একটা বিতর্কও নেই। এ পজেটিভ দিকটিও বিএপি হয়তো হাতছাড়া করবেন না। সব কৌশলই ব্যবহার হতে পারে ক্ষমতাসীন সরকারকের হটাতে। এদিকে ১০ দিনের সফর শেষ করে গতকাল বুধবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে একটি ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে ফখরুল বলেন, এই ক্ষমতাসীন ‘দানব সরকার’। ‘বর্তমান ভোটারবিহনী অবৈধ এই দানব সরকারকে সরিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে, গণতন্ত্রের মাতাকে মুক্ত করতে হবে। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন। বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া এ দেশে কোনো কিছুই সম্ভব নয়। আমরা দানব সরকারকে সরিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করবোই।’এই ভয়ঙ্কর দানব সরকারকে সরাতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয়ী হতে হবে। দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।

সোনাবাহিনী মোতায়েন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিতে হবে।’ ভারতে বিএনপির তিন নেতার সফর ও লন্ডনে হঠাৎ করে দলীয় মহাসচিবের সফরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের সাক্ষাৎ এ নিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে বলেন, আসলে নির্বাচনের আগে বিএনপিকে মাঠে নামতেই হবে। আন্দোলন করতেই হবে। তার অংশ হিসেবে সফরগুলো অবশ্যই ভূমিকা পালন করবে। তবে বিএনপি জামায়াত ছাড়ছে এমন একটি কথা নানাভাবে শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিজভী বলেন, একথা সত্য নয়। জামায়াতের অন্য আদর্শ থাকতে পারে তবে জামায়াত আমাদের জোটের শক্তিশালী অংশ। জামায়াত ছাড়ছে বিএনপি এমন তথ্য বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। জামায়াত আমাদের জোটে আছে আগামীতেও থাকবে। তবে আগ বাড়িয়ে এসব তথ্যে কান দেয়া উচিৎ নয় বলে মনে করছেন বিএনপির এই নেতা।

ঈদের পর এবং নির্বাচনের আগে বিএনপি হয়তো জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ছে এমন তথ্য জামায়াতের কাছে আছে কিনা জানতে জামায়াতে ইসলামির নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল আলীমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তার ব্যক্তিগত ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক কর্মপরিষদ সদস্য আমার সংবাদকে বলেন, বিএনপি জামায়াত ছাড়বে এটি সংগঠনের জন্য বড় ইস্যু। জোটের ইস্যু। আমার পক্ষে এ নিয়ে মন্তব্য করা এত দ্রুত সম্ভব নয়। আমাদের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরাই এ বিষয়ে কথা বলবেন। এ নিয়ে আমাদের আরও ভাবতে হবে। তবেই মন্তব্য করতে হবে। এটা ঠিক যে জামায়াতে ইসলামের দেশপ্রেম আছে। আমরা ভারতের সঙ্গে কখনো গোপনে সমঝোতা করিনি, করব না। আগে দেশের স্বার্থ তারপর সমঝোতা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ঈদের পর জামায়াত ছাড়ছে বিএনপি

আপডেট টাইম : ১১:০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জুন ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জামায়াত ছাড়লেই ক্ষমতা মিলবে। পাওয়া যাবে ভারতসহ অন্যান্য দেশের সহানুভূতি। কাজে লাগানো যাবে অন্য কোনো শক্তিও! পাশে থাকবে বামপন্থি বুদ্ধিজীবীরাও। আদর্শিক দলীয় কর্মীরাও উজ্জীবিত হবেন। সরকার পতনের আন্দোলনে সাধারণ জনগণও সম্পৃক্ত হবেন। লন্ডনে তারেক জিয়ার সাথে বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েই দেশে ফিরছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির বিশ্বস্ত সাংবাদিককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে দলের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, এই সিদ্ধন্তের সাথে বেগম খালেদা জিয়া একমত নয়। দলীয় চাপে জামায়াত ছাড়ার সিদ্ধান্ত বহুবার উড়িয়ে দিয়েছেন কারাগারে থাকা বিএনপিপ্রধান। এখন দল যেহেতু তারেকের নির্দেশেই চলছে তাই দ্রুতই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথেই হাঁটছেন তারেক-ফখরুল।

ঈদের পর মাসখানেক নীরব থেকে আন্দোলন ঘোষণার আগ মুহূর্তেই বিএনপির পক্ষ থেকে কৌশলে জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা আসতে পারে। তবে বহির্বিশ্বকে দেখানোর জন্য জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ভিন্ন কৌশলে জামায়াতকে নির্বাচনের আগে মাঠে ব্যবহার করার চেষ্টা বিএনপির পক্ষ থেকে ঠিকই থাকবে বলে সূত্রের মত।বিএনপি বুদ্ধিজীবীদের মত, বিএনপি এতদিন সভা-সেমিনারে ভারত বিরোধিতার কথা বললেও রাজনৈতিক সংকট সমাধানে ভারতের দিকেই তাকিয়ে আছেন। ভারতের কাছেই এখনো সমাধান চায় বিএনপি। আন্দোলন এবং নির্বাচনের পাশাপাশি বিএনপি প্রথমে চাচ্ছে ভারতের সঙ্গে একটি সমঝোতা করতে। কারণ ভারত না চাইলে কিছুই হবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ের আগে ভারতের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসতে চাইছে বহুদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এ দলটি।

তাই ভারতের সাথে ধারাবাহিক যোযোযোগ অব্যাহত রাখছেন। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিএনপি প্রতিনিধি দল সাত দিনের ভারত সফর করেছেন। এছাড়া ঢাকাতেও বিএনপির শীর্ষ নেতা ড. মঈন খান এবং সাবিহ উদ্দিন আহমেদ একাধিকবার ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অন্যদিকে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক জিয়াও ভারতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এখন ভারত এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য দলের শরীক দল জামায়াতের সঙ্গ ছাড়াই বিএনপির জন্য প্রযোজ্য হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। খালেদা জিয়া কারাগারে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনও দেশের বাইরে। শরীকদল জামায়াতকে নিয়ে আগামী নির্বাচনের আগে কী হবে এ নিয়ে সুরাহা করতে লন্ডনে দলের মহাসচিবের সফর বলেও ধারণা করছেন দলের একটি অংশ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করে আসার পর পরই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির দিল্লিতে এক সপ্তাহ সফর করে এসেছেন।

যারা দিল্লির ‘থিংক ট্যাংক’ হিসেবে পরিচিত এমন শীর্ষ নেতাদের সাথেও সাক্ষাৎ হয় বিএনপির এই নেতাদের সাথে। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন (আরজিএফ), অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ), বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন (ভিআইএফ) ও ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ (আইডিএসএ)। ভারত সফর করে আসা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তারা ভারতের ‘দৃষ্টিভঙ্গির’ পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন। এ নিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের যে সংকট তা তারা অনুধাবন করছে এবং এটা থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়োজন আজ তারা মনে করছে। এটা একটা ইতিবাচক পরিবর্তন।

বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন দেখতে চাইছে ভারত। অন্যদিকে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, তাদের সাথে আলোচনা করে আমাদের মনে হয়েছে যে, ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি খুব পরিষ্কার। উনারা চাচ্ছেন, এবারে বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন হোক।বৈঠকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিজেপি এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভারতের আস্থা অর্জন করতে হলে বিএনপিকে অবশ্যই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়তে হবে। যে দাবি দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও করে আসছে। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বাংলাদেশের তিন নেতাকে সাফ জানিয়ে দেন, বর্তমানে জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে নির্বাচনি ঐক্য গড়লে বিজেপির পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

বিজিবির পক্ষে সম্ভব হবে না এমন কোনো দলের সাথে সম্পৃক্ত রাখা, যারা জামায়াতের মতো দলের সাথে ঐক্য গঠন করে। জামায়াতের সকল কর্মকা-ই ভারতের কাছে আছে। বিএনপি যদি জামায়াতমুক্ত হতে পারে তাহলে অবশ্যই বিএনপি ভারতের বড় একটি অংশের সমর্থন পাবেন। জানা যায়, ভারতের এই বার্তা তাৎক্ষণিক পাঠানো হয় তারেক জিয়ার কাছেও। এছাড়াও বহুদিন ধরে ভারতের সাথে বিএনপির সময়ও ভালো যাচ্ছে না। গত নির্বাচনে যখন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফর করেন তখন বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে একত্রিত হয়ে যৌথ হরতাল ডাকেন। তখন হরতালের অজুহাতে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি খালেদা। এই দৃষ্টান্ত ভারতের গায়ে লেগেছে। ভারতীয়দের মত, এটি তাদের কোনো সরকারই ভুলবেন না। ভারতের দেশপ্রেম অনেক মজবুত। ভারত সব সময় হিসাব কষে। হিসাবে না মিললে শিক্ষাও যে দিতে পারেন, তা বিগত বছরে বিএনপিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সবকিছু ভুলে বিএনপি ফের ভারতকে পাশে পেতে চাইছে।

ভারত থেকে বিএনপির প্রতিনিধি দল আসার পর পরই লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে যান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ৩ জুন চিকিৎসার জন্য প্রথমে তিনি ব্যাংকক যান। এরপর ৮ জুন লন্ডনে তারেকের সাক্ষাতের জন্য চলে যান বিএনপির এই নীতিনির্ধারক। তারেক রহমানের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেন তিনি। বৈঠককালে দেশের চলমান পরিস্থিতি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন মহাসচিব। তবে বৈঠকে ভারতের চাহিদা অনুযায়ী জামায়াত ছাড়ার নানান কৌশল নিয়েও আলোচনা হয় বলে বেশকিছু দলীয় সূত্রের দাবি। এছাড়াও নির্বাচনের আগে অন্য একটি কৌশল অবলম্বন হতে পারে বলে লন্ডনের একটি সাংবাদিককে বলেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দলের নতুন চেয়ারপারসন হতে পারেন। ডা. জোবাইদা রহমান। যেহেতু তার স্বচ্ছতা নিয়ে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একটি অনুষ্ঠানে প্রশংসা করেন।

রাজনীতিতে তাকে নিয়ে খুব একটা বিতর্কও নেই। এ পজেটিভ দিকটিও বিএপি হয়তো হাতছাড়া করবেন না। সব কৌশলই ব্যবহার হতে পারে ক্ষমতাসীন সরকারকের হটাতে। এদিকে ১০ দিনের সফর শেষ করে গতকাল বুধবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে একটি ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে ফখরুল বলেন, এই ক্ষমতাসীন ‘দানব সরকার’। ‘বর্তমান ভোটারবিহনী অবৈধ এই দানব সরকারকে সরিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে, গণতন্ত্রের মাতাকে মুক্ত করতে হবে। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন। বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া এ দেশে কোনো কিছুই সম্ভব নয়। আমরা দানব সরকারকে সরিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করবোই।’এই ভয়ঙ্কর দানব সরকারকে সরাতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয়ী হতে হবে। দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।

সোনাবাহিনী মোতায়েন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিতে হবে।’ ভারতে বিএনপির তিন নেতার সফর ও লন্ডনে হঠাৎ করে দলীয় মহাসচিবের সফরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের সাক্ষাৎ এ নিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে বলেন, আসলে নির্বাচনের আগে বিএনপিকে মাঠে নামতেই হবে। আন্দোলন করতেই হবে। তার অংশ হিসেবে সফরগুলো অবশ্যই ভূমিকা পালন করবে। তবে বিএনপি জামায়াত ছাড়ছে এমন একটি কথা নানাভাবে শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিজভী বলেন, একথা সত্য নয়। জামায়াতের অন্য আদর্শ থাকতে পারে তবে জামায়াত আমাদের জোটের শক্তিশালী অংশ। জামায়াত ছাড়ছে বিএনপি এমন তথ্য বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। জামায়াত আমাদের জোটে আছে আগামীতেও থাকবে। তবে আগ বাড়িয়ে এসব তথ্যে কান দেয়া উচিৎ নয় বলে মনে করছেন বিএনপির এই নেতা।

ঈদের পর এবং নির্বাচনের আগে বিএনপি হয়তো জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ছে এমন তথ্য জামায়াতের কাছে আছে কিনা জানতে জামায়াতে ইসলামির নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল আলীমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তার ব্যক্তিগত ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক কর্মপরিষদ সদস্য আমার সংবাদকে বলেন, বিএনপি জামায়াত ছাড়বে এটি সংগঠনের জন্য বড় ইস্যু। জোটের ইস্যু। আমার পক্ষে এ নিয়ে মন্তব্য করা এত দ্রুত সম্ভব নয়। আমাদের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরাই এ বিষয়ে কথা বলবেন। এ নিয়ে আমাদের আরও ভাবতে হবে। তবেই মন্তব্য করতে হবে। এটা ঠিক যে জামায়াতে ইসলামের দেশপ্রেম আছে। আমরা ভারতের সঙ্গে কখনো গোপনে সমঝোতা করিনি, করব না। আগে দেশের স্বার্থ তারপর সমঝোতা।