আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে হবিগঞ্জের হাওরের চিংড়ি। এখানের হাওরসহ বিভিন্ন এলাকায় আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে গলদা চিংড়ির চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন চাষিরা।
হবিগঞ্জের হাওরে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে গলদা চিংড়ি জন্মায়। এ চিংড়ি মাছ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে কিছু পরিমাণে সৌদি আরব, আমেরিকা, লন্ডনেও রপ্তানী হচ্ছে। কারণ এখানের হাওরের স্বাদু পানির উৎপাদিত গলদা চিংড়ি সিলেটী প্রবাসীদের অত্যন্ত প্রিয় খাবার। আর এই চাহিদাকে ঘিরেই বিদেশে যাচ্ছে হাওরের গলদা চিংড়ি। হাওরে যদিও প্রাকৃতিকভাবে গলদা চিংড়ি জন্ম নিচ্ছে। তবে তার সঙ্গে এবার বাণিজ্যিকভাবেও এ চিংড়ির চাষ হচ্ছে।
চাষিরা চিংড়ির পোনাগুলো নরসিন্দী,কক্সবাজার, সাতক্ষিরা,বাগেরহাট থেকে কিনে আনেন, এসব পোনা তারা চাষ করে সফলতা পাচ্ছেন। এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য বিভাগ এ চাষকে আরো এগিয়ে নিতে চাষিদের স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ি চাষের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষিরা গলদা চিংড়ি’র চাষে সফল হতে পারে- এ ব্যাপারে বিস্তারিত কলাকৌশল উপস্থাপন করেন জেলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন আহম্মদ, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ তোফাজ উদ্দিন আহমেদ। এতে সহায়তা করেন জেলা মৎস্য অফিসের মোঃ সিরাজুল আবদাল মামুন, কছির মিয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আলাপকালে চাষি কাছুম আলী, আফরোজ মিয়া, কছির মিয়া জানান, লবনাক্ত পানির পোনা এনে দুই বছর ধরে গলদা চিংড়ির চাষ করছেন। এ ধরণের চাষ করে তাদের ন্যায় অন্যান্য চাষিরাও সফলতা পাচ্ছে। এতে করে হাজার হাজার চাষির নতুন উপার্জনের পথ তৈরি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হবিগঞ্জ জেলার ৫৪টি হাওর এলাকায় সরকারী বিলের সংখ্যা ৬৭৫টি আর বেসরকারী বিল রয়েছে ৫৩৭টি। রয়েছে বরাক, খোয়াই, শুঁটকী, রত্না, সুতাং, ভেড়ামোহনা, বিজনা, কুশিয়ারা,সোনাই, করাঙ্গীসহ অন্যান্য নদীগুলোও। আর খাল রয়েছে ৭৪টি। এ ছাড়া জেলায় রয়েছে পুকুর, ডোবাসহ নানা জলাশয়। এসব জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিচ্ছে গলদা চিংড়িসহ দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ।
এসব মাছের আবাদ বাড়াতে হাওরে গভীর জলাশয়ে বিলে মৎস্য অভয়াশ্রম তৈরি করা প্রয়োজন বলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন আহম্মদ মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি মনে করেন, গভীর বিলে অভয়াশ্রম করলে সফলতা আসবে। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়ে বৃদ্ধি পাবে দেশীয় মাছের আবাদ। তার মতে, সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মাছের আবাদ বৃদ্ধি করতে এ ছাড়া ভাল উপায় নেই। এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষ আমলে নিয়েছে বলেই হাওরে বিল খনন করা হচ্ছে। তবে আরো ব্যাপকভাবে বরাদ্দ দিয়ে জলাশয় খনন করা প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, সরকারী বিলগুলো প্রতিবছরের বৈশাখ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত লিজ দেওয়া হয়। আর লিজ গ্রহীতারা লাভের আশায় অবাধে মাছ শিকার করেন। তাতে করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাঁধা তৈরি হচ্ছে। তারপরও জেলার স্বাদু পানিতে নানা প্রজাতির মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ি জন্ম নিচ্ছে। গলদা চিংড়ি স্বাদু পানিতে ও বাগদা চিংড়ি লবণাক্ত পানিতে জন্ম নিচ্ছে। লবণাক্ত পানিতে বাগদা চিংড়ি জন্ম নেওয়ার পর অনেক সময় নিরাপদে আসতে গিয়ে হাওরের স্বাদু পানিতে চলে আসে। এখানে তাদের বংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, নিয়মমতে বিলগুলো লিজ দেওয়া হচ্ছে। চিংড়িসহ অন্যান্য মাছের আবাদ বাড়াতে আমরা কাজ করছি। আর পূর্বের চেয়ে বর্তমানে মাছের উৎপাদন বাড়ছে। আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে উপযুক্ত পরিবেশে গলদা চিংড়ির চাষ করলে বর্তমানের চেয়ে উৎপাদন চারগুণ বেড়ে যাবে।
জেলা মৎস্য অফিস জানায়, জেলায় মোট জলাশয়ের পরিমাণ ৯৭,১৩৫.১৫ হেক্টর। মাছের উৎপাদন ২৮,৪৭৪ মেট্রিক টন, মাছের চাহিদা ২২,৯০৯ মেট্রিক টন। এ হিসেবে বর্তমানে উদ্বৃত্ত মাছের পরিমাণ ৫,৫৬৫ মেট্রিক টন।