সরু সেতুতে চাপা ৩৫-৪০টি গ্রামের মানুষের স্বপ্ন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ‘কালিয়াকৈর-বাঁশতলী সড়ক’টির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। প্রথমবারের মতো কার্পেটিং করা (পাকা) সড়ক পেয়ে ৩৫-৪০টি গ্রামের মানুষের স্বপ্নপূরণ হতে যাচ্ছে। কিন্তু গ্রামবাসীর বহু বছরের সেই স্বপ্ন চাপা পড়েছে কালিয়াকৈর বাজার এলাকার একটি সরু সেতুতে। সরু সেতুর কারণে সড়কটিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে না। সড়ক অনেকটা অব্যবহৃতই থেকে যাবে। অতি দ্রুত সেখানে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।

এলাকাবাসী ও উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কালিয়াকৈর-বাঁশতলী আঞ্চলিক সড়কটি অনেক পুরনো। শুকনো মৌসুমে এ সড়ক দিয়ে হেঁটে চলাচল করা গেলেও বর্ষায় কোথাও কোথাও নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হতো। মানুষের চলাচলের সমস্যা দূর করতে ২০০০ সালে সড়কের কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় ঘাটাখালি নদীর ওপর ৬৬ ফুট দীর্ঘ একটি সরু সেতু (একসঙ্গে একটি রিকশা চলার উপযোগী) নির্মাণ করা হয়। এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. রহমত আলী। অবশেষে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৪ ফুট প্রশস্তের প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের উন্নয়নকাজ শুরু হয়।

কাজের টেন্ডার পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট শুরু হওয়া কাজ এখন প্রায় শেষ। এখানে ২৫টি ক্রসড্রেন, চারটি বক্স কালভার্ট ও ২০ মিটারের দুটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। সড়কটি দিয়ে গাজীপুরের ভাওয়াল মির্জাপুর, কালিয়াকৈর উপজেলার নয়ানগর, জামালপুর, হাঁটুরিয়া চালা, বড়ইবাড়ী, বোয়ালী, গোলিয়া, মজুদপাড়া, আষাড়িয়াবাড়ী, গোপিনপুর, কালিয়াদহ, গর্জনখালী, তালতলী, বাঁশতলী, দীঘিবাড়ী, রাজাবাড়ী, সাহেবাবাদ, গাবতলী, বৈরাগীচালা, জানেরচালা, কুরালটেকি, বানেরটেক, লালটেকি, সৈয়দপুর, কালিয়াকৈরসহ ৩০-৪০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চলাচল করবে। আগে এসব গ্রামের লোকজনকে প্রায় ৯ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যেতে হতো। সড়কটি চালু হলে অল্প সময়ে উপজেলা সদরে যেতে পারবে লোকজন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কটির গার্ডার ব্রিজগুলোতে এখন রঙের কাজ চলছে। ভাঙন রোধে সড়কের দুই পাশে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির চারাগাছ। সড়কটি নির্মাণের ফলে ৩০-৪০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের মধ্যে আশার আলো ফুটে উঠছে। কিন্তু একটি জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ সরু সেতুই তাদের স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুটি দিয়ে কোনো গাড়ি চলাচল করতে না পারায় নতুন সড়কটি ধান মাড়াই ও খড় শুকানোর স্থানে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

স্থানীয় শ্রীফলতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি বিপুল রায়হান বলেন, ‘গত বর্ষায় বালুবাহী একটি ট্রলারের ধাক্কায় ফুটব্রিজটির (সরু সেতু) মাঝখানে প্রায় এক ফুট ফেটে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এই ক্ষতিগ্রস্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের কারণে কালিয়াকৈর-বাঁশতলী নতুন সড়ক তেমন কাজে আসবে না। ব্রিজটিতে একসঙ্গে দুটি রিকশা চলতে পারে না, অন্য পাশে একটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তাহলে গাড়ি কিভাবে যাবে?’

বড়ইবাড়ী এলাকার বাসিন্দা এ কে এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কালিয়াকৈর-বাঁশতলী সড়ক পাকাকরণের ফলে আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। এখন অল্প সময়ে ও কম খরচে সহজেই উপজেলা সদরে যাওয়া যাবে। আগে নদীপথে নৌকাযোগে দীর্ঘসময় নিয়ে, সাত-আট কিলোমিটার ঘুরে সফিপুর হয়ে উপজেলা সদরে যেতে হতো। সময় বেশি লাগায় অনেক কাজ করা যেত না।’

বড়ইবাড়ী একেইউ ইনস্টিটিউশন ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. সোলায়মান সিকদার বলেন, সড়কটি পাকা করাতে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। এখন শিক্ষার্থীরা অল্প সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারবে। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হলে এলাকার শিক্ষার মানও ভালো হয়। সড়কটি পাকা করার ফলে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন হবে।

ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডের নির্মাণ প্রজেক্টের ম্যানেজার প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, গুণগত মানসম্পন্ন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও সিডিউল অনুযায়ী লেয়ার থিকনেস দেওয়া হয়েছে। সড়কটির দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির চারাগাছ লাগানো হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী সরকার মো. সাজ্জাদ কবীর বলেন, অন্যান্য প্রকল্পের রাস্তায় ডাব্লিবিএম ব্যবহার করা হলেও এই প্রকল্পে ডাব্লিউএমএম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী এ রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। নানা জটিলতার কারণে এই প্রকল্পে কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় নতুন সেতু নির্মাণ করা যায়নি। তবে পরে আরটিআইপি ফ্লাইট প্রজেক্টে সেতুটি দেওয়া হবে।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর