হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ শুক্রবার, পবিত্র মাহে রমজানের ২২তম দিন। আর নাজাতের সময়ের দ্বিতীয় দিন। আমরা একে একে রমজানের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছি। রহমত ও মাগফিরাতের দশক অতিবাহিত হয়েছে। নাজাতের দশকও অতিবাহিত করছি। আর ৭ বা ৮ দিন পরে রমজানও আমাদের থেকে বিদায় নেবে। জিবরাইল (আ.) দোয়া করেছেন যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও নিজের গুনাহসমূহ মাফ করাতে পারল না সে ধ্বংস হোক রাসুল (সা.) বলেছেন, আমিন। বোঝা গেল যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও গুনাহ মাফ করাতে পারবে না তার ধ্বংস অনিবার্য। এ জন্য রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতে বলেছেন, উপরন্তু তিনি নিজেও এতেকাফ করেছেন। কারণ এতেকাফকারী নির্জনে বেশি বেশি ইবাদত করার সুযোগ পায়। আল্লাহর দরবারে অশ্রু ঝরিয়ে কান্নাকাটি করে নিজের সমস্ত গুনাহের জন্য একান্তে ক্ষমাপ্রার্থনা করার সুযোগ পায়।
আর আল্লাহ তায়ালা তো বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব (সুরা মু’মিন, আয়াত- ৬০)। এ আয়াত দ্বারা আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ অবশ্যই দোয়া কবুল করবেন। গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। এ জন্য রমজানের বাকি দিনগুলোতে আল্লাহর কাছে নিজের কৃতকর্মের ক্ষমা চাইতে হবে।
এতেকাফ অবস্থায় যে সমস্ত করা যাবে না সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এতেকাফে যেসব কাজ বর্জনীয়-কিছু কাজ আছে যা করা সর্বাবস্থায় হারাম। তবে এতেকাফ অবস্থায় করা আরো মারাত্মক যেমন :
১. গীবত : অর্থাৎ পরনিন্দা বা অন্যের দোষ চর্চা করা, অন্যের সমালোচনা করা।
২. চোগলখুরি করা অর্থাৎ একজনের কথা অন্যজনের কানে লাগানো।
৩. মিথ্যা কথা বলা।
৪. ঝগড়াঝাটি করা।
৫. কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া, অন্যের কষ্টের কারণ হওয়া।
৬. কাউকে লাঞ্ছিত-অপমানিত করা।
৭. অহংকার করা।
৮. কারো প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করা। এসব কাজ পরিপূর্ণভাবে পরিহার করতে হবে।
আর কিছু কাজ আছে যা সর্বাবস্থায় হারাম না হলেও এতেকাফ অবস্থায় করা একেবারেই অনুচিত-
১. নিরর্থক, অপ্রয়োজনীয় কথা বলা ও কাজ করবে না। কেননা এতেকাফকারীর জন্য কোনো প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ডেকে দ্বীনি কথাবার্তা ছাড়া সাধারণ কথাবার্তা বলাও মাকরূহ।
২. দুনিয়াবি কোনো কথা বলবে না। মনে রাখতে হবে যে, মসজিদে বিনা প্রয়োজনে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলার দ্বারা নেকি নষ্ট হয়ে যায়।
৩. একবারে চুপচাপ বসে থাকবে না। বরং বসে বসে কুরআন তিলাওয়াত বা জিকির-আসকার করবে।
৪. বসে বসে আড্ডা দিবে না, বাজে গল্প বলবে না বা শোনবেও না। কারণ মসজিদে আড্ডার মজলিস জমানো নাজায়েজ।
৫. মসজিদে অবস্থানরত অন্যদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করবে না।
৬. এতেকাফ অবস্থায় নোবেল-নাটক, গল্প-উপন্যাস এবং নোংরা বই-পুস্তক পড়বে না। বরং দ্বীনি বই-পুস্তক পড়বে। কুরআনের তাফসীর, হাদীস অধ্যয়ন করবে।
৭. মোবাইলে প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত কথাবলা ও গল্প-গুজব করা থেকে বিরত থাকবে।
৮. মোবাইলে ইন্টারনেটে গুনাহের উপকরণসমূহ থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকবে। এতেকাফ ইবাদতের জন্য। ইবাদত বিনষ্টের জন্য নয়।
৯. মসজিদের ভেতরে বিনিময় নিয়ে কোনো কাজ করা জায়েজ হবে না। চাই এটা দ্বীনি কাজ হোক বা দুনিয়ার কাজ হোক।
১০. মালামাল উপস্থিত করে মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা করতে পারবে না। হ্যাঁ, প্রয়োজনে মালামাল উপস্থিত না করে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে।
যেসব কাজ করলে এতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে-
১. মসজিদ থেকে, নারীদের এতেকাফের নির্ধারিত স্থান থেকে বিনাপ্রয়োজনে বের হলে।
২. ইসলাম ত্যাগ করলে।
৩. অজ্ঞান, পাগল বা মাতাল হলে।
৪. নারীদের নিয়মিত ঋতুস্রাব দেখা দিলে।
৫. সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে বা গর্ভপাত হলে।
৬. স্ত্রী-সহবাস করলে।
৭. বীর্যপাত হলে কিন্তু স্বপ্নদোষ হলে নষ্ট হবে না।
৮. এতেকাফকারীকে জোরপূর্বক মসজিদ বা এতেকাফের স্থান থেকে বের করে দিলে।
৯. শরিয়ত অনুমোদিত কোনো কাজে বাইরে গেলে যদি কেউ আটকে রাখে বা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে ফলে এতেকাফ স্থানে যেতে দেরি হয় তবে এতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রমজানের বাকি দিনগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগী করে নিজের গুনাহসমূহ মাফ করিয়ে নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।