ঢাকা ১০:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প স্থায়ী জলাবদ্ধতা ভুগছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৫:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জুন ২০১৮
  • ৩১৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা স্থায়ী জলাবদ্ধতায় ভুগছে। কোথাও জমেছে হাঁটু, কোথাও কোমর, আবার কোথাও অথৈ পানি। অনেকে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই হাজার ৩০০ হেক্টর জমি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প-১ তৈরি হয়। ১৯৯৩ সালে ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর কয়েক বছরের মধ্যে এ প্রকল্পের ভেতরে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দুর্ভোগ। এবারের দুর্ভোগটা যে আগের চেয়ে দ্বিগুণ হবে তা সম্প্রতি বৃষ্টিতে অগ্রণীবাসী খুব ভালোভাবে টের পাচ্ছে। বর্ষাকালে কী হবে—এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে অগ্রণীবাসী।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানায়, অপরিকল্পিতভাবে মিল-কারখানা গড়ে উঠে অগ্রণী পরিণত হয় আবাসিক ও শিল্প এলাকায়। সেই থেকে দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে। বসতি ও কারখানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জলাবদ্ধতা। শিল্প মালিক ও এক শ্রেণির দখলবাজদের কবলে চলে যায় ফসলি জমি ও খালগুলো। বিভিন্ন এলাকার খাল বালু দিয়ে ভরাট করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নির্মাণ করেছে পাকা স্থাপনা।

বর্তমানে কৃষি জমিতে সেচের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। কারণ কৃষি জমিতে ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এখন প্রকল্প দুটিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা দ্রুত করা দরকার। সেচ প্রকল্পের যাত্রামুড়া পাম্প হাউস থেকে বরপা সেতু হয়ে একটি মূল খাল সেচ প্রকল্পের বানিয়াদী এলাকা দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে সংযোগ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই খাল দখল করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীরা বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে।

এ ছাড়া খালের অনেক স্থানে বালু দিয়ে ভরাট করে ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে। সেচ প্রকল্প দুটির দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে খাল দখল করা হয়েছে। ফলে খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ক্রমে বন্যায় রূপ নিচ্ছে। কর্মকর্তারা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ব্যাপারে সেচ প্রকল্প দুটির কার্যালয়ে গিয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের অফিসগুলো বেশির ভাগ সময়ে থাকে তালাবদ্ধ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেচ প্রকল্পের মাসাব, বরপা বাগানবাড়ি, শান্তিনগর, সুতালড়া, আড়িয়াবো, তেতলাব, কর্ণগোপ, মৈকুলী, মিয়াবাড়ী, ভায়েলা, পাঁচাইখা, মোগড়াকুল, পবনকুল, বরাব, খাদুন, গোলাকান্দাইল, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, ৫ নম্বর ক্যানেল, কাহিনা, রূপসী, গন্ধর্বপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছরে সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারা খালগুলো ভরাট করে মার্কেট, ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এতে সামান্য বর্ষণ হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না বলে দাবি করে স্থানীয়রা। অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও পানি ফেলার  কারণে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। যার কারণে দুটি প্রকল্পের জনগণের পিছু ছাড়ছে না জলাবদ্ধতা।

গোলাকান্দাইলের রিপন, বাতেন, মনিরুল ইসলাম, উত্তম হাওলাদার, দেলোয়ার, খোরশেদ, রুহুল আমিন, জহির শহিদ অভিযোগ করেন, সামান্য বৃষ্টি হলে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে কোমর পর্যন্ত পানি জমে। এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের এই পানি ভেঙে স্কুলে যেতে হয়। পানিবাহিত রোগেও আক্রান্ত হয়েছে অনেকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষোভ দেখিয়ে একজন বলেন, ‘সরকারিভাবে খালখননের জন্য যে বরাদ্দ আসে তা ঠিকমতো কাজে লাগানো হয় না। বরাদ্দ টাকা স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিরা ভাগ-ভাটোয়ারা করেন।’

ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা সিরিয়া বেগম ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘বড় মিল মালিকরা খালগুলা দহল করছে। হেরলেইগ্গা আমাগো পানির তলে থাহোন লাগে।’

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু ফাতেহ মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অগ্রণী সেচ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সামছুল আলম বলেন, ‘যাত্রামুড়া পাম্প হাউস চালু রয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প স্থায়ী জলাবদ্ধতা ভুগছে

আপডেট টাইম : ১০:৫৫:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জুন ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা স্থায়ী জলাবদ্ধতায় ভুগছে। কোথাও জমেছে হাঁটু, কোথাও কোমর, আবার কোথাও অথৈ পানি। অনেকে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই হাজার ৩০০ হেক্টর জমি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প-১ তৈরি হয়। ১৯৯৩ সালে ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর কয়েক বছরের মধ্যে এ প্রকল্পের ভেতরে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দুর্ভোগ। এবারের দুর্ভোগটা যে আগের চেয়ে দ্বিগুণ হবে তা সম্প্রতি বৃষ্টিতে অগ্রণীবাসী খুব ভালোভাবে টের পাচ্ছে। বর্ষাকালে কী হবে—এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে অগ্রণীবাসী।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানায়, অপরিকল্পিতভাবে মিল-কারখানা গড়ে উঠে অগ্রণী পরিণত হয় আবাসিক ও শিল্প এলাকায়। সেই থেকে দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে। বসতি ও কারখানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জলাবদ্ধতা। শিল্প মালিক ও এক শ্রেণির দখলবাজদের কবলে চলে যায় ফসলি জমি ও খালগুলো। বিভিন্ন এলাকার খাল বালু দিয়ে ভরাট করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নির্মাণ করেছে পাকা স্থাপনা।

বর্তমানে কৃষি জমিতে সেচের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। কারণ কৃষি জমিতে ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এখন প্রকল্প দুটিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা দ্রুত করা দরকার। সেচ প্রকল্পের যাত্রামুড়া পাম্প হাউস থেকে বরপা সেতু হয়ে একটি মূল খাল সেচ প্রকল্পের বানিয়াদী এলাকা দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে সংযোগ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই খাল দখল করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীরা বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে।

এ ছাড়া খালের অনেক স্থানে বালু দিয়ে ভরাট করে ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে। সেচ প্রকল্প দুটির দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে খাল দখল করা হয়েছে। ফলে খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ক্রমে বন্যায় রূপ নিচ্ছে। কর্মকর্তারা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ব্যাপারে সেচ প্রকল্প দুটির কার্যালয়ে গিয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের অফিসগুলো বেশির ভাগ সময়ে থাকে তালাবদ্ধ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেচ প্রকল্পের মাসাব, বরপা বাগানবাড়ি, শান্তিনগর, সুতালড়া, আড়িয়াবো, তেতলাব, কর্ণগোপ, মৈকুলী, মিয়াবাড়ী, ভায়েলা, পাঁচাইখা, মোগড়াকুল, পবনকুল, বরাব, খাদুন, গোলাকান্দাইল, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, ৫ নম্বর ক্যানেল, কাহিনা, রূপসী, গন্ধর্বপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছরে সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারা খালগুলো ভরাট করে মার্কেট, ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এতে সামান্য বর্ষণ হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না বলে দাবি করে স্থানীয়রা। অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও পানি ফেলার  কারণে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। যার কারণে দুটি প্রকল্পের জনগণের পিছু ছাড়ছে না জলাবদ্ধতা।

গোলাকান্দাইলের রিপন, বাতেন, মনিরুল ইসলাম, উত্তম হাওলাদার, দেলোয়ার, খোরশেদ, রুহুল আমিন, জহির শহিদ অভিযোগ করেন, সামান্য বৃষ্টি হলে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে কোমর পর্যন্ত পানি জমে। এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের এই পানি ভেঙে স্কুলে যেতে হয়। পানিবাহিত রোগেও আক্রান্ত হয়েছে অনেকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষোভ দেখিয়ে একজন বলেন, ‘সরকারিভাবে খালখননের জন্য যে বরাদ্দ আসে তা ঠিকমতো কাজে লাগানো হয় না। বরাদ্দ টাকা স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিরা ভাগ-ভাটোয়ারা করেন।’

ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা সিরিয়া বেগম ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘বড় মিল মালিকরা খালগুলা দহল করছে। হেরলেইগ্গা আমাগো পানির তলে থাহোন লাগে।’

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু ফাতেহ মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অগ্রণী সেচ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সামছুল আলম বলেন, ‘যাত্রামুড়া পাম্প হাউস চালু রয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা হবে।