ঢাকা ০৮:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নদীভাঙনের গড়ার জীবন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৯:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জুন ২০১৮
  • ২৮২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুুরমা নদীর পাড় ঘেঁষে বাড়ি আব্দুল মতিনের। নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। ঝুঁকি জেনেও ঘরের ভেতরে ছিলেন হতদরিদ্র মতিন। হঠাৎ হুড়মড়িয়ে বাড়িটি নদীতে চলে যায়। ঘরের সঙ্গে তিনিও নদীতে পড়ে যান। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করেন। তবে মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে কয়েকদিন শয্যাশায়ী ছিলেন রায়খাইল গ্রামের বাসিন্দা মতিন। রায়খাইল বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে।

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাস এ গ্রামে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আফতাব উদ্দিন বলেন, আব্দুল মতিনসহ গত এক সপ্তাহে গ্রামের সাতজনের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অন্য ছয়জন হলেন আব্দুল সাত্তার, আব্দুল আহাদ, আব্দুল বাছেত, আমজাদ হোসেন, পারভেজ আহমদ, খলিল উদ্দিন ও জসিম উদ্দিন। গত ১৪ই মে সরজমিন দেখা যায়, রায়খাইল গ্রামের পাশ দিয়েই অনেকের আধভাঙা বসতঘর। গ্রামে রয়েছে প্রায় ২৫০টি বসতঘর। এর মধ্যে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো প্রায় ২০টি বাড়ি।

নদীভাঙন নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে। নদীভাঙনের শিকার আব্দুল সাত্তার বলেন, ‘প্রতিনিয়ত ভাঙছে নদীর পাড়। ভাঙনে আমার বাড়ির আসবাবসহ প্রায় ৪-৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’ নদীভাঙনের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরেই এখানে সুরমার পাড়ে ভাঙন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করেছেন গ্রামবাসী।

কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। নদীভাঙনে বাড়িঘর ভেসে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সেখান থেকে সরে গিয়ে অন্য জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করেন। এভাবেই ভাঙা-গড়ার মধ্যেই জীবন চলছে। গ্রামের বাসিন্দা হামিদুর রহমান সুরমা নদীর একটি অংশ দেখিয়ে বলেন, আগে ওই স্থানে গ্রামের মসজিদ ছিল। নদীর ভাঙনে সেটিও বিলীন হয়ে গেছে। পরে নতুন করে একটি মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে রায়খাইল গ্রামের নদী ভাঙন রোধ করতে এবং এর থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।

রায়খাইল গ্রামের মূল সড়ক ঘেঁষে বয়ে গেছে সুরমা নদী। গ্রামবাসী বলছেন, বর্ষা মৌমুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সড়কে উঠে যায়। মূল সড়কটিও যদি ভাঙনের মুখে পড়ে, তাহলে পুরো গ্রাম তলিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ফসল। সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের অনেকেই অবহিত করেছেন। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকল্প তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে কবে নাগাদ প্রকল্প নেয়া হবে কিংবা অনুমোদন হবে, সেটি বলা যাচ্ছে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নদীভাঙনের গড়ার জীবন

আপডেট টাইম : ১১:২৯:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জুন ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুুরমা নদীর পাড় ঘেঁষে বাড়ি আব্দুল মতিনের। নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। ঝুঁকি জেনেও ঘরের ভেতরে ছিলেন হতদরিদ্র মতিন। হঠাৎ হুড়মড়িয়ে বাড়িটি নদীতে চলে যায়। ঘরের সঙ্গে তিনিও নদীতে পড়ে যান। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করেন। তবে মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে কয়েকদিন শয্যাশায়ী ছিলেন রায়খাইল গ্রামের বাসিন্দা মতিন। রায়খাইল বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে।

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাস এ গ্রামে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আফতাব উদ্দিন বলেন, আব্দুল মতিনসহ গত এক সপ্তাহে গ্রামের সাতজনের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অন্য ছয়জন হলেন আব্দুল সাত্তার, আব্দুল আহাদ, আব্দুল বাছেত, আমজাদ হোসেন, পারভেজ আহমদ, খলিল উদ্দিন ও জসিম উদ্দিন। গত ১৪ই মে সরজমিন দেখা যায়, রায়খাইল গ্রামের পাশ দিয়েই অনেকের আধভাঙা বসতঘর। গ্রামে রয়েছে প্রায় ২৫০টি বসতঘর। এর মধ্যে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো প্রায় ২০টি বাড়ি।

নদীভাঙন নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে। নদীভাঙনের শিকার আব্দুল সাত্তার বলেন, ‘প্রতিনিয়ত ভাঙছে নদীর পাড়। ভাঙনে আমার বাড়ির আসবাবসহ প্রায় ৪-৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’ নদীভাঙনের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরেই এখানে সুরমার পাড়ে ভাঙন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করেছেন গ্রামবাসী।

কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। নদীভাঙনে বাড়িঘর ভেসে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সেখান থেকে সরে গিয়ে অন্য জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করেন। এভাবেই ভাঙা-গড়ার মধ্যেই জীবন চলছে। গ্রামের বাসিন্দা হামিদুর রহমান সুরমা নদীর একটি অংশ দেখিয়ে বলেন, আগে ওই স্থানে গ্রামের মসজিদ ছিল। নদীর ভাঙনে সেটিও বিলীন হয়ে গেছে। পরে নতুন করে একটি মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে রায়খাইল গ্রামের নদী ভাঙন রোধ করতে এবং এর থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।

রায়খাইল গ্রামের মূল সড়ক ঘেঁষে বয়ে গেছে সুরমা নদী। গ্রামবাসী বলছেন, বর্ষা মৌমুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সড়কে উঠে যায়। মূল সড়কটিও যদি ভাঙনের মুখে পড়ে, তাহলে পুরো গ্রাম তলিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ফসল। সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের অনেকেই অবহিত করেছেন। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকল্প তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে কবে নাগাদ প্রকল্প নেয়া হবে কিংবা অনুমোদন হবে, সেটি বলা যাচ্ছে না।