তারকাদের দলে ভিড়ানোর প্রতিযোগিতায় আ.লীগ-বিএনপি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলো। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনেকে সামনে রেখে তাদের দলকে ঢেলে সাজাতে শুরু করেছেন। অপরদিকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে কারাগারে থাকলেও নিরবে দল গোছাচ্ছে বিএনপিও। তবে এবার তরুণ এবং তারকাদের প্রাধান্য দিচ্ছে দু’দলই। ইতোমধ্যে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তারকাদের যুক্ত হওয়া নতুন কিছু নয়। সারাবিশ্বের রাজনীতির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সেসব দেশেও অভিনয় শিল্পী, গায়ক খেলোয়ারসহ বিভিন্ন তারকারা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। আমাদের দেশের তারকারাও নিজেদের পছন্দের দলের সঙ্গে রাজনীতি করছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে তারকাদের মনোনয়নের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

অপরদিকে হা করে বসে নেই বিএনপিও। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও এবার আর সে ভুল করছে না দলটি। আওয়ামী লীগের সাথে তালমিলেয়ে ভোটের রাজনীতির সমীকরণ মেলাতে তারকাদের দলে ভিড়ানোর কাজ করছেন বিএনপিও। তবে তাদের অভিযোগ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা বিরোধী দলগুলোর জন্য অনুকূল নয়। ফলে তারকারা সরাসরি বিএনপির ব্যানারে এসে নিরবে কাজ করছেন, সময় হলেই চমক দেখা যাবে।

গত মঙ্গলবার একনেক বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং টেস্ট ও টি-২০ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এসময় তাদের ভোট দেয়ারও আহ্বান জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। অবশ্য মাশরাফি জানিয়েছেন তিনি পরিকল্পনামন্ত্রীর এ ঘোষণা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কিন্তু মাশরাফির বাবার মতে, প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের প্রস্তাব দিলে তাদের পক্ষে না করা সম্ভব হবে না। এদিকে ভারত সফর নিয়ে গত বুধবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, পৃথিবীর সবদেশেই তারকারা নির্বাচনে নমিনেশন পান, এটা নতুন কিছু না। তাদের আকাঙ্ক্ষা হলে নির্বাচন করতে পারেন।তবে এখন পর্যন্ত মাশরাফি ও সাকিব আসন্ন নির্বাচনে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেননি।

ক্ষমতাসীন দলটির নীতি-নির্ধারকও বলছেন, মাশরাফী-সাকিবরা বেশ জনপ্রিয়। নির্বাচনে এলে ভালো করবেন।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মাশরাফী-সাকিবদের বিষয়ে এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য না করলেও তিনি জানিয়েছেন, সাকিবের সঙ্গে তাঁর আমার কথা হয়েছে। বিশ্বকাপের আগে সাকিব নির্বাচন কিংবা রাজনীতি নিয়ে কোনো চিন্তা করছেন না।’

তবে প্রার্থী মনোনয়নে এবার কিছু চমক থাকবে বলে আভাস দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট অনেকের আবেদন আছে, আগ্রহ আছে। এসব নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এবং এদের সবার নামের তালিকা প্রধামন্ত্রীর কাছে রয়েছে।

অপরদিকে বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগ দুইবার টানা ক্ষমতায় তারা বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ফলে তারা সহজেই তারকাদের ভোটের মাঠে আনার ঘোষণা দিতে পারছেন। তাদের মতে, খেলোয়াড়রা জাতির সম্পদ, তারা চাইলে যে কোনো দল করতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই।

খেলোয়ারদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমদের নেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান চান না খেলাধুলা করছেন এমন কেউ রাজনীতিতে আসুক। তারা চান, খেলাধুলা শেষ করে চাইলে যে কেউই রাজনীতি করতে পারেন। তাদের জন্য বিএনপির দরজা সব সময় উন্মুক্ত।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গেও অনেক তারকা ক্রিকেটার, ফুটবলার ও সেলিব্রেটি যোগাযোগ করেছেন। আমরা তাদের ধৈর্য ধরতে বলেছি। কারণ, আমাদের জন্য এখন রাজনীতির বৈরি পরিবেশ চলছে। তারা চাইলেও রাজনীতিতে মনোযোগী হতে পারবেন না। তবে তারা একেবারে বসে নেই, বিএনপির নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করছেন। সময় হলেই চমক দেখানো হবে।’

বিগত সময়ে বিএনপির রাজনীতিতে সেলেব্রেটি অনেককেই দেখা গেছে। সত্তর দশকের তারকা ফুটবলার ছিলেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। মেজর হাফিজ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে এমপি ছাড়াও মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন। এছাড়া জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, মনির খান ও আসিফ আকবর এখনো বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। তবে মাঝে তারকা ফুটবলার সাব্বির, কাননসহ বেশ কয়েকজনকে বিএনপিতে দেখা গেলেও তারা রাজনীতিতে খুব বেশি সক্রিয় হতে পারেননি।

এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নেত্রকোনা থেকে নির্বাচিত হন তারকা ফুটবলার আরিফ খান জয়। তিনি বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া মানিকগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হন টেস্ট ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়, জনপ্রিয় ফোকশিল্পী মমতাজ বেগম। তার পূর্বে নবম জাতীয় সংসদে নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হন এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। একই সংসদে সদস্য ছিলেন অভিনেত্রী তারানা হালিম, তিনি বর্তমানে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

তথ্যসূত্র: পরিবর্তন

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর