ঢাকা ০২:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবাসিক পাখি নিরীহ স্বভাবের পানটুনি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০৪:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ জুন ২০১৮
  • ৪২৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ছোট পাখি দুটি মহাব্যস্ত। আপন মনে বাসা বুনে চলেছে। বিন্নাবনের ডগার চার-পাঁচটি শক্ত ডাঁটি ঘিরে বাসা বানানোর কাজ শুরু করেছিল চার দিন আগে। আরও দিন তিনেক লাগবে। তখন বাসাটি দেখতে হবে বাতাবি লেবুর মতো গোল। বাসায় ঢোকার ছোট্ট একটা দরজা থাকবে। ঘাস, শিকড়, মস, মাকড়সার জাল, ঘাসের গোড়ার আঁশ, কলাগাছের সুতার মতো আঁশ, পাটের পরিত্যক্ত আঁশ—এসব দিয়ে বাসা বানায় ওরা। বাসার তলদেশ মখমলের মতো আরামদায়ক গদি বানায় শিমুল তুলা, কাশফুল ও ঘাসফুল দিয়ে।

বাসাটি হয়ে গেলে ভালোবাসাবাসির ফুরসত মিলবে তখন। শরীরে যৌবন-প্রেমের রং যখন লাগে, তখন ওদের চোখেও প্রেমের ঝিলিক খেলে যায়। গান-নাচ, ফুর্তি বেড়ে যায়। পুরুষটির বাদামি ঠোঁট কালচে হয়ে আসে। পা ও পায়ের পাতা হলুদাভ-বাদামি রং ধারণ করে। পুরো শরীর ঢেকে যায় ছাই-ধূসর রঙে। লম্বা লেজটির বাইরের পালক সাদা হয়ে যায় তখন। শরীরের পার্শ্বদেশ হালকা খয়েরি রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। সব রং ঝরে যাবে বাসায় ছানা হওয়ার পরে। ডিম হয় দু-চারটি। ডিম ফুটে ছানা হয় ১০-১৩ দিনে। উড়তে শেখার আগেই ছানারা বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। ছানাদের লেজই থাকে না বলতে গেলে। নাদুস-নুদুস আদুরে চেহারার গোলগাল হয় ছানাগুলো। বয়স্ক পাখিদের গলা-বুক-পেট থাকে সাদা, ঠোঁট হলুদ, মাথা-ঘাড়-পিঠ মেটে-ধূসর। এদের কণ্ঠস্বর ধাতব-সুরেলা, ‘ট্রিল ট্রিল, টিলিক টিলিক টিলিক, ঝিলিক ঝিলিক’ ধরনের।

আবাসিক এই পাখিরা মূলত ঝোপঝাড়, ঘাসবন, ধানখেত, আখখেত, নলখাগড়ার বনে ও পানের বরজের ভেতরে থাকে। লম্বাটে লেজের নিরীহ স্বভাবের পাখিটির নাম পানটুনি। বুনোটুনি নামেও পরিচিত। জোড়ায় জোড়ায় বা ছোট দলে চলে এরা। ইংরেজি নাম প্লেইন প্রিনিয়া। বৈজ্ঞানিক নাম prinia inornata. দৈর্ঘ্য ১৩ সেন্টিমিটার। তার ভেতরে লেজটাই হলো ৮ সেন্টিমিটার। মূল খাদ্য পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, ঘাসের ছোট ছোট বীজ ও ফুলের মধুরেণু। ঢাকা শহরের উপকণ্ঠসহ দেশের সব অঞ্চলেই দেখা মেলে। ওজন মাত্র ৭ গ্রাম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

আবাসিক পাখি নিরীহ স্বভাবের পানটুনি

আপডেট টাইম : ০৩:০৪:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ জুন ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ছোট পাখি দুটি মহাব্যস্ত। আপন মনে বাসা বুনে চলেছে। বিন্নাবনের ডগার চার-পাঁচটি শক্ত ডাঁটি ঘিরে বাসা বানানোর কাজ শুরু করেছিল চার দিন আগে। আরও দিন তিনেক লাগবে। তখন বাসাটি দেখতে হবে বাতাবি লেবুর মতো গোল। বাসায় ঢোকার ছোট্ট একটা দরজা থাকবে। ঘাস, শিকড়, মস, মাকড়সার জাল, ঘাসের গোড়ার আঁশ, কলাগাছের সুতার মতো আঁশ, পাটের পরিত্যক্ত আঁশ—এসব দিয়ে বাসা বানায় ওরা। বাসার তলদেশ মখমলের মতো আরামদায়ক গদি বানায় শিমুল তুলা, কাশফুল ও ঘাসফুল দিয়ে।

বাসাটি হয়ে গেলে ভালোবাসাবাসির ফুরসত মিলবে তখন। শরীরে যৌবন-প্রেমের রং যখন লাগে, তখন ওদের চোখেও প্রেমের ঝিলিক খেলে যায়। গান-নাচ, ফুর্তি বেড়ে যায়। পুরুষটির বাদামি ঠোঁট কালচে হয়ে আসে। পা ও পায়ের পাতা হলুদাভ-বাদামি রং ধারণ করে। পুরো শরীর ঢেকে যায় ছাই-ধূসর রঙে। লম্বা লেজটির বাইরের পালক সাদা হয়ে যায় তখন। শরীরের পার্শ্বদেশ হালকা খয়েরি রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। সব রং ঝরে যাবে বাসায় ছানা হওয়ার পরে। ডিম হয় দু-চারটি। ডিম ফুটে ছানা হয় ১০-১৩ দিনে। উড়তে শেখার আগেই ছানারা বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। ছানাদের লেজই থাকে না বলতে গেলে। নাদুস-নুদুস আদুরে চেহারার গোলগাল হয় ছানাগুলো। বয়স্ক পাখিদের গলা-বুক-পেট থাকে সাদা, ঠোঁট হলুদ, মাথা-ঘাড়-পিঠ মেটে-ধূসর। এদের কণ্ঠস্বর ধাতব-সুরেলা, ‘ট্রিল ট্রিল, টিলিক টিলিক টিলিক, ঝিলিক ঝিলিক’ ধরনের।

আবাসিক এই পাখিরা মূলত ঝোপঝাড়, ঘাসবন, ধানখেত, আখখেত, নলখাগড়ার বনে ও পানের বরজের ভেতরে থাকে। লম্বাটে লেজের নিরীহ স্বভাবের পাখিটির নাম পানটুনি। বুনোটুনি নামেও পরিচিত। জোড়ায় জোড়ায় বা ছোট দলে চলে এরা। ইংরেজি নাম প্লেইন প্রিনিয়া। বৈজ্ঞানিক নাম prinia inornata. দৈর্ঘ্য ১৩ সেন্টিমিটার। তার ভেতরে লেজটাই হলো ৮ সেন্টিমিটার। মূল খাদ্য পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, ঘাসের ছোট ছোট বীজ ও ফুলের মধুরেণু। ঢাকা শহরের উপকণ্ঠসহ দেশের সব অঞ্চলেই দেখা মেলে। ওজন মাত্র ৭ গ্রাম।