বুলবুলি পাখির ছোট্ট বাসা গাছের পাতার আড়ালে। তাতে তিনটি ছানা। এখনো তাদের চোখ পৃথিবীর আলো দেখেনি। এমন সময় দু’টি হাঁড়িচাচা চিৎকার করতে করতে আচমকা আক্রমণ চালালো সেই বুলবুলির বাসার উপর। ছোঁ মেরে ছানাগুলোকে ধরে নিয়ে গেলো চলে।
বহুদিন আগে এক অপরাহ্নে এমন দৃশ্য আমার চোখে ধরা পড়েছিলো। কিছুটা কষ্ট পেয়েছিলাম বটে, তবে সেই কষ্ট প্রসারিত হলো না বেশিদূর। কারণ এটি প্রকৃতির এক জীবনচক্র। মেনে নিতেই হবে- প্রকৃতির সবাই কারো না কারো খাদ্য।
পাখিদের মধ্যেও রয়েছে হাইজ্যাকার! যারা জোরপূর্বক খাবার ছিনিয়ে নিজের দখলে নেয়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে শুরু হয়ে যায় আক্রমণ। তারপর একপর্যায়ে খাবার ছিনিয়ে নেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি পায় সফলতা।
এমন ছিনতাইকারী পাখির নাম হাঁড়িচাচা। আমাদের দেশে দুই প্রজাতির হাঁড়িচাচা রয়েছে। এক প্রজাতির নাম খয়রা হাঁড়িচাচা এবং অপরটি মেটে হাঁড়িচাচা । প্রথমটি আমাদের দেশের সুলভ আবাসিক পাখি। অর্থাৎ, সারাদেশেই পাওয়া যায়। আর দ্বিতীয়টি দুর্লভ আবাসিক পাখি। অর্থাৎ, কম দেখা মেলে।
প্রখ্যাত বন্যপ্রাণি গবেষক ও লেখক শরীফ খান পাখিটির বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, হাঁড়িচাচা কাক গোত্রের পাখি। দেখতে অনেকটা পাঁতিকাকের মতো। এরা দুঃসাহসী ও দক্ষ শিকারি। গ্রামাঞ্চলে এরা তেড়ে নামে পরিচিত। মজার ব্যাপার হলো– কোকিল সুযোগ পেলেই এদের বাসায় ডিম পাড়ে। আর এরা বোকার মতো কোকিলছানাদের খাওয়ায় এবং লালন-পালন করে।
আঞ্চলিক নাম ও শিকার সম্পর্কে তিনি বলেন, তাল গাছের তাড়ি খায় বলে হাঁড়িচাচাকে আমাদের গ্রামাঞ্চলে ‘তাড়ে’ বা ‘তেড়ে’ নামে ডাকা হয়। ঢাকাসহ সারাদেশেই তাদের দেখা যায়। কোনো কোনো ঈগল ও চিল অনেক সময় মাছ বা কোনো পাখির ছানা ধরে নিলে দু’টি হাঁড়িচাচা একত্রিত হয়ে সেই ঈগল বা চিলের উপর হামলা চালায়।
পাখিটি আকার-আকৃতি ও শারীরিক বর্ণনায় তিনি বলেন, হাঁড়িচাচার দৈর্ঘ্য ৫০ সেমি এবং ওজন প্রায় ১১৫ গ্রাম। বড় লেজটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ সেমি। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। এদের শরীর অনেকটা জলপাই বাদামি। লেজের আগার দিক কালো এবং লেজের উপরিভাগ ছাই-ধূসর। ডানার উপরিভাগটা সাদাটে ছাইরঙা। কালচে ধূসর গলা, মাথা ও ঘাড়। পিঠ বাদামি। বুক ও পেট হালকা হলুদ রঙা।
তিনি আরও বলেন, ওদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে– ফল, ফুলের মধু, পোকা, অমেরুণ্ডী প্রাণী, ছোট সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর, পাখির ছানা প্রভৃতি। ওরা যখন ওড়ার জন্য ডানা মেলে তখন নিচ থেকে ওদের দেখতে দারুণ লাগে। শরীরের ছোট-বড় পালকগুলোর বিন্যাস অতি চমৎকারভাবে ধরা পড়ে তখন।