হাওর বার্তা ডেস্কঃ আকাশে মেঘের গর্জন, গুড় গুড় শব্দ বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামলেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে ফসলের মাঠ। কাজ করতে করতে হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দ শুনে কৃষি শ্রমিকরা দৌড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। প্রতিদিন বজ্রপাতে কোনো না কোনো অঞ্চলে মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত থাকা এবং এসব খবর জেনে যাওয়ায় সারাদেশে কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বগুড়ার চরপাড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক আকিমুদ্দিন শেখ সাংবাদিকদের বলেন, এমনিতেই ধানকাটা শ্রমিকের মজুরি এখন প্রায় দ্বিগুণ। তার ওপর দিনের অবস্থা খারাপ এবং প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির কারণে দিন মজুররা ষোল আনা কাজ করতে পারছে না। একবার মেঘের গর্জন শুনলে দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। মেঘ কেটে গেলে ফিরছে ফসলের মাঠে। এতে শ্রম ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কৃষি শ্রমিকের মজুরি ষোল আনাই বুঝে দিতে হচ্ছে।
ফলে জমির মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ চিত্র শুধু বগুড়ার নয়, পুরো উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেরও। জয়পুরহাট সদরের পুরানপুল গ্রামের কৃষক আফতাব উদ্দিন জানান, ধানের বাজার ভালো। তবে ধান কাটা এবং মাড়াইয়ে যে খরচ তাতে পোষাতে পারছি না। এ ছাড়া বজ্রপাত আতঙ্কে অনেকে কাজ করতে চায় না। সকালে বৃষ্টির আনাগোনা দেখলেই কৃষি শ্রমিকরা আর কাজ করতে আসে না। উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁ, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও নওগাঁতে কথা বলে একই তথ্য জানা গেছে।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ফেরাজিপাড়া এলাকার ধান চাষি ওয়াহাব মিয়া জানান, দুই বিঘা জমির ধানের ওপর নির্ভরশীল তার পরিবার। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে চলমান বৃষ্টিতে পাকা ধানের বেশ ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে জমি থেকে এখনও সব ধান তুলতে না পারায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ওয়াহাব মিয়া। এ ছাড়া বজ্রপাতের আতঙ্কে কৃষি শ্রমিক না পাওয়ায় তার দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে।
একই উপজেলার ধানকোড়া এলাকার ধান চাষি আব্দুস সালাম মিয়া জানান, জমি থেকে ধান সংগ্রহের জন্যে চারজন শ্রমিক দৈনিক ভিত্তিতে কাজ শুরু করেন। প্রতিদিন জনপ্রতি সাড়ে ছয়শ টাকা করে গুণতে হচ্ছে। তবে টানা বৃষ্টির কারণে অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ছে। বৃষ্টি শুরু হলেই বজ্রপাতের ভয়ে শ্রমিকরা জমি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ায় ধান সংগ্রহে দেরি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বৈশাখ থেকেই ঝড়, বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি শুরু হওয়ায় ধানের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া এখন ধানকাটার পুরো মৌসুমে প্রতিদিন বৃষ্টি। ফলে অনেক ধানের জমিতে পানি জমেছে, আবার অনেক নিচু জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে। এসব ধান মাঠ থেকে কেটে বাড়ি পর্যন্ত আনতে ধানের শীষ থেকেও অনেক ধান ঝরে পড়ছে। আবার রোদ না থাকায় ভেজা ধান অঙ্কুরিত হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ধান গাছ শুকিয়ে কৃষক পশু খাদ্য খড় তৈরি করে। এবার অধিকাংশ খড় পচে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। কৃষক এবারও আশঙ্কা করছে যে খড় সংরক্ষণ না করতে পারায় আগামীতেও তীব্র পশু খাদ্য সংকট দেখা দিবে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশে আকাশ মেঘলাসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।