ঢাকা ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারি চাকরিজীবীদের লিয়েনে ছুটির শর্ত কঠোর হচ্ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ মে ২০১৮
  • ৭৫৯ বার
হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিদেশি সংস্থায় চাকরির জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লিয়েনে ছুটি নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। আবার লিয়েনে গিয়ে কর্মকর্তাদের চাকরিতে না ফেরার ঘটনাও ঘটছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার লিয়েনে ছুটির শর্ত কঠোর করছে। একনাগাড়ে বা বিচ্ছিন্নভাবে কোনো সরকারি চাকরিজীবী সর্বোচ্চ চার বছরের বেশি লিয়েনে ছুটি নিতে পারবেন না। এর বেশি লিয়েনে থাকলে চার বছর পূর্তির দিন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হবেন।
লিয়েন ছুটি শেষে কোনো কর্মকর্তা এক বছর সরকারি চাকরি না করে দ্বিতীয়বার এ ছুটিতে যেতে পারবেন না। এমন বিধান যুক্ত করে বিদ্যমান ‘বৈদেশিক চাকরিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়োগ সম্পর্কিত নীতি ও পদ্ধতি’ সংশোধন করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আগামী প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে এ নীতি উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদনের পর নীতিমালাটি কার্যকর হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠনসহ যে কোনো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থায় চাকরির জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক দফায় পাঁচ বছর পর্যন্ত লিয়েন নিতে পারেন। লিয়েনের মেয়াদ শেষে দেশে এসে কিছুকাল চাকরি করার পর আবারও লিয়েনে যেতে পারেন। এ ছাড়া সরকার বিশেষ বিবেচনায় লিয়েনের মেয়াদ পাঁচ বছরের বেশিও করতে পারে।

এ নীতিমালার সুযোগে অনেক কর্মকর্তা বারবার লিয়েনে ছুটি নেন। আবার ছুটি মঞ্জুর হওয়ার আগেই বিদেশি সংস্থায় যোগ দিয়ে পরে ছুটির আবেদন করেন। অনেকে লিয়েন শেষ হওয়ার পরও চাকরিতে ফিরতে দেরি করেন। এসব কারণে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

লিয়েনে থাকার সময়ে একদিকে সরকারের সব সুবিধা ভোগ করেন, অন্যদিকে তারা বিদেশি যে সংস্থায় চাকরি করেন সেখান থেকে মোটা অঙ্কের সম্মানী নেন। এমন সুবিধা ভোগ করতেই সম্প্রতি সরকারি চাকরিজীবীদের লিয়েনে যাওয়া নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।

এ প্রবণতা কমাতেই লিয়েনে ছুটির শর্ত কঠোর হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ-সংক্রান্ত কমিটি বিদ্যমান নীতিমালার শিরোনাম সংশোধন করে ‘বৈদেশিক চাকরিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়োগ এবং গণকর্মচারীদের বৈদেশিক নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্ব পদে লিয়েন সংরক্ষণ-সম্পর্কিত নীতি ও পদ্ধতি’ প্রস্তাব করেছে।

কমিটির সুপারিশে বলা হয়, গণকর্মচারীরা সমগ্র চাকরি জীবনে বিচ্ছিন্নভাবে অথবা একনাগাড়ে সর্বোচ্চ চার বছর পর্যন্ত লিয়েন সংরক্ষণ করতে পারবেন। এই চার বছর শুধু চাকরির জ্যেষ্ঠতা, বেতন বৃদ্ধি ও অবসর গ্রহণের জন্য বিবেচনা করা হবে। এ সময় তিনি পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। অবশ্য পদোন্নতির বিষয়টি আগের নীতিমালায়ও ছিল।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, একবার লিয়েন থেকে আসার পর দ্বিতীয়বার লিয়েনে যেতে হলে কমপক্ষে এক বছর সরকারি চাকরি করতে হবে। তবে কোনোভাবেই মোট লিয়েন চার বছরের বেশি হতে পারবে না। লিয়েনের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার আগে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিতে অনুপস্থিত বা বৈদেশিক চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন না। পেছনের তারিখ দিয়ে লিয়েন মঞ্জুর বা বাড়ানোর আবেদন করা যাবে না।

এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান  বলেন, বিদ্যমান নীতিমালার কিছু জায়গা অস্পষ্ট ছিল। আর এ সুযোগে সরকারি কর্মকর্তাদের লিয়েন ছুটি নেওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়। এতে সরকারি কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। তাই বিদ্যমান নীতিমালার অস্পষ্টতা দূর করে নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। খুব শিগগির নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে উপস্থাপন করা হবে। কমিটির অনুমোদনের পর তা কার্যকর হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সরকারি চাকরিজীবীদের লিয়েনে ছুটির শর্ত কঠোর হচ্ছে

আপডেট টাইম : ১২:০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ মে ২০১৮
হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিদেশি সংস্থায় চাকরির জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লিয়েনে ছুটি নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। আবার লিয়েনে গিয়ে কর্মকর্তাদের চাকরিতে না ফেরার ঘটনাও ঘটছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার লিয়েনে ছুটির শর্ত কঠোর করছে। একনাগাড়ে বা বিচ্ছিন্নভাবে কোনো সরকারি চাকরিজীবী সর্বোচ্চ চার বছরের বেশি লিয়েনে ছুটি নিতে পারবেন না। এর বেশি লিয়েনে থাকলে চার বছর পূর্তির দিন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হবেন।
লিয়েন ছুটি শেষে কোনো কর্মকর্তা এক বছর সরকারি চাকরি না করে দ্বিতীয়বার এ ছুটিতে যেতে পারবেন না। এমন বিধান যুক্ত করে বিদ্যমান ‘বৈদেশিক চাকরিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়োগ সম্পর্কিত নীতি ও পদ্ধতি’ সংশোধন করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আগামী প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে এ নীতি উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদনের পর নীতিমালাটি কার্যকর হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠনসহ যে কোনো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থায় চাকরির জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক দফায় পাঁচ বছর পর্যন্ত লিয়েন নিতে পারেন। লিয়েনের মেয়াদ শেষে দেশে এসে কিছুকাল চাকরি করার পর আবারও লিয়েনে যেতে পারেন। এ ছাড়া সরকার বিশেষ বিবেচনায় লিয়েনের মেয়াদ পাঁচ বছরের বেশিও করতে পারে।

এ নীতিমালার সুযোগে অনেক কর্মকর্তা বারবার লিয়েনে ছুটি নেন। আবার ছুটি মঞ্জুর হওয়ার আগেই বিদেশি সংস্থায় যোগ দিয়ে পরে ছুটির আবেদন করেন। অনেকে লিয়েন শেষ হওয়ার পরও চাকরিতে ফিরতে দেরি করেন। এসব কারণে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

লিয়েনে থাকার সময়ে একদিকে সরকারের সব সুবিধা ভোগ করেন, অন্যদিকে তারা বিদেশি যে সংস্থায় চাকরি করেন সেখান থেকে মোটা অঙ্কের সম্মানী নেন। এমন সুবিধা ভোগ করতেই সম্প্রতি সরকারি চাকরিজীবীদের লিয়েনে যাওয়া নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।

এ প্রবণতা কমাতেই লিয়েনে ছুটির শর্ত কঠোর হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ-সংক্রান্ত কমিটি বিদ্যমান নীতিমালার শিরোনাম সংশোধন করে ‘বৈদেশিক চাকরিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়োগ এবং গণকর্মচারীদের বৈদেশিক নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্ব পদে লিয়েন সংরক্ষণ-সম্পর্কিত নীতি ও পদ্ধতি’ প্রস্তাব করেছে।

কমিটির সুপারিশে বলা হয়, গণকর্মচারীরা সমগ্র চাকরি জীবনে বিচ্ছিন্নভাবে অথবা একনাগাড়ে সর্বোচ্চ চার বছর পর্যন্ত লিয়েন সংরক্ষণ করতে পারবেন। এই চার বছর শুধু চাকরির জ্যেষ্ঠতা, বেতন বৃদ্ধি ও অবসর গ্রহণের জন্য বিবেচনা করা হবে। এ সময় তিনি পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। অবশ্য পদোন্নতির বিষয়টি আগের নীতিমালায়ও ছিল।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, একবার লিয়েন থেকে আসার পর দ্বিতীয়বার লিয়েনে যেতে হলে কমপক্ষে এক বছর সরকারি চাকরি করতে হবে। তবে কোনোভাবেই মোট লিয়েন চার বছরের বেশি হতে পারবে না। লিয়েনের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার আগে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিতে অনুপস্থিত বা বৈদেশিক চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন না। পেছনের তারিখ দিয়ে লিয়েন মঞ্জুর বা বাড়ানোর আবেদন করা যাবে না।

এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান  বলেন, বিদ্যমান নীতিমালার কিছু জায়গা অস্পষ্ট ছিল। আর এ সুযোগে সরকারি কর্মকর্তাদের লিয়েন ছুটি নেওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়। এতে সরকারি কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। তাই বিদ্যমান নীতিমালার অস্পষ্টতা দূর করে নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। খুব শিগগির নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে উপস্থাপন করা হবে। কমিটির অনুমোদনের পর তা কার্যকর হবে।