ঝড়-বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের সোনার ফসল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাঙ্গাইলে মাঠজুড়ে এখন পাকা-আধাপাকা বোরো ধান। জেলায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হলেও প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে কৃষকরা মাঠের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। বৈশাখী ঝড় ও টানা বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি কৃষকের স্বপ্ন কেড়ে নিচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার মাঠে মাঠে দিগন্তজোড়া ধানের সমারোহ। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফলানো সোনার ফসল আর কয়েকদিন পরই কৃষকের ঘরে উঠার কথা। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ কৃষকের স্বপ্নকে ভেঙে দিয়েছে। ভারি বর্ষণ আর বৈশাখী ঝড়ে পাকা ধান মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। এ সময় এমন ভারি বর্ষণ কৃষক আগে কখনো দেখেনি। বোনা স্বপ্নের এমন অবস্থায় কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে হতাশা।

এ বছর ধানের চারা রোপণের পর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় ফলন অনেক ভালো হয়েছে। কিন্তু কালবৈশাখী ঝড় আর টানা বৃষ্টিতে লাভের বদলে লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কালবৈশাখী ঝড়, ভারি বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টিতে নিচু জমি ও চরাঞ্চলের জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এর মাঝে যেসব কৃষক অধিক শ্রমিক মূল্য দিয়ে ধান কাটছে তারা বৃষ্টির কারণে মাড়াই ও শুকাতে পারছেন না।

Image result for বৃষ্টির পানিতে ধান ক্ষেত তলিয়ের ছবি

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে হাইব্রিড জাতের দুই হাজার ২১৩ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঊফশী জাতের বোরো চাষে এক লাখ ৬৩ হাজার ৮৯৩ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ১১২ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয় জাতের ৭৯১ হেক্টর জমিতে এক হাজার ৫৩৮ মে.টন বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যানে এবার জেলায় মোট ১৬ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮ হেক্টর জমিতে ৬৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৫ মেট্রিকটন বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

নাগরপুর উপজেলার কৃষক রমিজ উদ্দিন, রফিক মিয়াসহ অনেকেই বলেন, এবার ধানের বাম্পার ফলন হলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে শ্রমিকরা জমিতে নামতে সাহস পাচ্ছে না। টানা বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ফলে নিচু জমির ধান তলিয়ে যাচ্ছে।

Image result for বৃষ্টির পানিতে ধান ক্ষেত তলিয়ের ছবি

মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের ছিটমামুদপুর, লতিফপুর ও তরফপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া, তরফপুর ও পাথরঘাটা এলাকার কৃষক বলেন, কোল্ডইনজুরির কারণে বাড়তি খরচ করে পুনরায় চারা (বীজ) কিনে জমিতে পচন ধরা চারার জায়গায় প্রতিস্থাপন করে ফসল ঘরে তোলার আশায় বুক বেঁধেছিলেন তারা। কিন্তু প্রতিকূল প্রকৃতি তাদের সহায় না হওয়ায় ধান ঘরে তোলায় আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে।

ওই এলাকার কৃষক লেহাজ উদ্দিন, জালেকা বেগম, সৈয়দ রুহুল আমিনসহ অনেকেই বলেন, ওই এলাকায় প্রতি একর জমির ধান বুনতে হালচাষ, সার, শ্রমিক মজুরি ও ধানের চারা কিনতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা কৃষকরা ব্যয় করেছেন। অতিরিক্ত টাকা খরচ করেও তারা চাষ করেছিলেন। জমিতে ফসলও ভালো হয়েছে। কিন্তু ঝড় ও বর্ষণে জমির ধান নুইয়ে পড়েছে। বজ্রপাতের আশঙ্কায় শ্রমিকরা ধান কাটতে জমিতে নামছে না।

নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিএম রাশেদুল আলম বলেন, তিনি উপজেলার ভাদ্রা, সহবতপুর ও ভারড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শন করে কৃষকদের সান্ত্বনা ছাড়া কিছুই দিতে পারেননি। যদি সামনে আর শিলা বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড় না হয় তাহলে কৃষকরা কাঙ্খিত ফলন পাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

Image result for বৃষ্টির পানিতে ধান ক্ষেত তলিয়ের ছবি

মির্জাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, উপজেলায় ঠান্ডার প্রভাব বেশি থাকায় কিছু এলাকার ধানের চারা মরে যায়। কৃষি কর্মকর্তারা দ্রুত যথাযথ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় উপজেলায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান ঘরে উঠানোর প্রাক্কালে প্রকৃতি প্রতিকূল থাকায় কৃষকরা কিছুটা হতাশায় ভুগছে।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আবাদের শুরুতে কোনো কোনো এলাকায় সমস্যা দেখা দিলেও তা বোরো আবাদে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।

জেলায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো-২৮ জাতের ধান চাষ হয়। তবে বোরো-২৮ জাতের ধানে কোনো কোনো এলাকায় ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়।

কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় কৃষকদের পাশে থেকেছে। প্রকৃতিগত কারণে ধান ঘরে তুলতে কৃষকদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে- এটা সাময়িক। দ্রুত এ অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে তিনি আশা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর