মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সুলতানপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মণি বেগম (১৬) জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেবে। ২১ সেপ্টেম্বর থেকে এ অধিবেশন শুরু হচ্ছে। অধিবেশনে বাল্যবিবাহ রোধ এবং মা ও শিশুস্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে মণি বক্তব্য উপস্থাপন করবে।
বাংলাদেশ থেকে একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে মণি এ সুযোগ পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের ‘এভরি ওয়ান ক্যাম্পেইন’ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের পক্ষ থেকে শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যায়। এর ফলে অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ, মা ও শিশুমৃত্যু, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
মণি জাতিসংঘের অধিবেশনে তার বক্তব্যে সহজে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি ও শিশু নির্যাতন বিষয়ে কথা বলবে। তার স্লোগান হচ্ছে, ‘তাকে বড় হতে দাও’। মণি ইতিমধ্যে ঢাকার বেশ কিছু বিদ্যালয় পরিদর্শন করে জাতিসংঘে তার বক্তব্যের মূল বিষয় নিয়ে কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলেছে।
মণি আজ শনিবার নিউইয়র্কের পথে রওনা হচ্ছে। সেখানে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সে অবস্থান করবে। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মণি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নেওয়া ১৯ জন শিশুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।
মণি সুলতানপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়ছে। সে স্থানীয় পৃথিমপাশা ইউনিয়নের গড়গাঁও গ্রামের দিনমজুর মহরম আলী ও হাওয়া বেগমের মেয়ে। মণি গতকাল মুঠোফোনে জানায়, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা করার সুযোগ পাওয়ায় সে খুবই খুশি। দেশের প্রতিটি কন্যাশিশু সমান সুযোগ পেয়ে বড় হয়ে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে কাজ করবে বলে সে আশাবাদী।
সুলতানপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু জাবেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মণি জাতিসংঘে বক্তৃতা করার সুযোগ পেয়েছে—এটা কত যে খুশির খবর, তা বোঝাতে পারব না।’
‘এভরি ওয়ান ক্যাম্পেইন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ঢাকার আহ্ছানিয়া মিশন। ওই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মুঠোফোনে জানান, মা ও শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি জরিপ অনুযায়ী, গত বছরের (২০১৪) মে মাস থেকে তাঁরা চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বরিশালের মুলাদী ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচার শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে ১৮০ জন শিশুকে নির্বাচিত করা হয়। তাদের মধ্যে মণিকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়।
সেভ দ্য চিলড্রেনের বাংলাদেশ কার্যালয়ের পরিচালক (স্বাস্থ্য ও পুষ্টি) ইশতিয়াক মান্নান বলেন, ‘মণি বাংলাদেশের সব শিশুর পক্ষ থেকে জাতিসংঘে প্রতিনিধিত্ব করছে। শিশুদের বড় হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হোক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’