ঢাকা ১১:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রবল বর্ষণ ও ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে রাজশাহীতে কৃষকের মাথায় বাজ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মে ২০১৮
  • ৪৪১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কয়েক দিনের ঝড়, প্রবল বর্ষণ আর শিলাবৃষ্টিতে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকের মাথায় যেন বাজ পড়েছে। পাকা ধান ঘরে তোলার আগেই সর্বনাশা শিলাবৃষ্টিতে সেসব ধান ঝরে গেছে। এ ছাড়া প্রবল বর্ষণে অনেক জমির ধান পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। অনেক কৃষক ধান কাটলেও দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে মাড়াইয়ের কাজ করতে পারছেন না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় এ বছর ৬৬ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে চাষ হয়েছে আরও তিন হাজার হেক্টর বেশি জমিতে। এসব জমি থেকে চার লাখ ১১ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

চাষিরা বলছেন, অতিরিক্ত জমিতে ধান চাষ হলেও উৎপাদনে ভাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত ৫ ও ১২ এপ্রিল ধানের শীষ ফোটার সময় দুই দফা শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এরপর গত সোমবার সকালে ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় পাকা ধান শীষ থেকে ঝরে যায়। বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসের তীব্রতায় আধাপাকা ও পাকা ধান গাছসহ জমিতে নুইয়ে গেছে। অনেক জমির ধান পানিতে ডুবে যায়। এরপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে গত বুধবার দুপুরেও শুরু হয় তুমুল বর্ষণ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টির ফলে তানোর উপজেলার শিবনদী ও বিলকুমারী বিলের পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে কয়েকশ’ হেক্টর বোরো ধানের জমি। শিবনদী সংলগ্ন চৌবাড়িয়া, কামারগাঁ, তালন্দ, গোকুল, শিতলীপাড়া, কুঠিপাড়া, আমশো, বুরুজ, কালীগঞ্জ ও চাঁন্দুড়িয়া এলাকার অনেক ধান ক্ষেত এখন পানির নিচে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বিলের কৃষকরা।

তানোর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল ইসলাম জানান, পানিতে বোরো ধান তলিয়ে যাচ্ছে। তারপরও কৃষকরা সেসব ধান কাটার চেষ্টা করছেন। বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ ফলন হচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে ২০ থেকে ২২ মণ ফলন হতো। তানোরের কুঠিপাড়া গ্রামের চাষি ইদ্রিস আলী জানান, চার বিঘা জমিতে তিনি জিরাশাইল ধান চাষ করেছিলেন। দুই বিঘা জমির ধান কাটতে পেরেছেন। অবশিষ্ট দুই বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে।

জেলার গোদাগাড়ী, পুঠিয়া, দুর্গাপুর ও বাগমারা উপজেলার চাষিরা জানান, গত দুই বছর ধরে তারা অসময়ের বন্যা আর বৃষ্টির কারণে ঠিকমতো ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না।

তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, গত সোমবার শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিবনদীতে বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। চাষিরা চেষ্টা করছেন তলিয়ে যাওয়া ধান কেটে ঘরে তুলতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেবদুলাল ঢালি বলেন, শুধু রাজশাহী জেলা নয়, বরেন্দ্র অঞ্চলের নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জেও বৃষ্টি হয়েছে। এতে ফলন পাঁচ থেকে ১০ ভাগ কমতে পারে। তবে এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো ঘাটতি থাকবে না। খড়ের আশা ছেড়ে দিয়ে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রবল বর্ষণ ও ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে রাজশাহীতে কৃষকের মাথায় বাজ

আপডেট টাইম : ১০:০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মে ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কয়েক দিনের ঝড়, প্রবল বর্ষণ আর শিলাবৃষ্টিতে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকের মাথায় যেন বাজ পড়েছে। পাকা ধান ঘরে তোলার আগেই সর্বনাশা শিলাবৃষ্টিতে সেসব ধান ঝরে গেছে। এ ছাড়া প্রবল বর্ষণে অনেক জমির ধান পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। অনেক কৃষক ধান কাটলেও দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে মাড়াইয়ের কাজ করতে পারছেন না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় এ বছর ৬৬ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে চাষ হয়েছে আরও তিন হাজার হেক্টর বেশি জমিতে। এসব জমি থেকে চার লাখ ১১ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

চাষিরা বলছেন, অতিরিক্ত জমিতে ধান চাষ হলেও উৎপাদনে ভাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত ৫ ও ১২ এপ্রিল ধানের শীষ ফোটার সময় দুই দফা শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এরপর গত সোমবার সকালে ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় পাকা ধান শীষ থেকে ঝরে যায়। বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসের তীব্রতায় আধাপাকা ও পাকা ধান গাছসহ জমিতে নুইয়ে গেছে। অনেক জমির ধান পানিতে ডুবে যায়। এরপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে গত বুধবার দুপুরেও শুরু হয় তুমুল বর্ষণ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টির ফলে তানোর উপজেলার শিবনদী ও বিলকুমারী বিলের পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে কয়েকশ’ হেক্টর বোরো ধানের জমি। শিবনদী সংলগ্ন চৌবাড়িয়া, কামারগাঁ, তালন্দ, গোকুল, শিতলীপাড়া, কুঠিপাড়া, আমশো, বুরুজ, কালীগঞ্জ ও চাঁন্দুড়িয়া এলাকার অনেক ধান ক্ষেত এখন পানির নিচে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বিলের কৃষকরা।

তানোর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল ইসলাম জানান, পানিতে বোরো ধান তলিয়ে যাচ্ছে। তারপরও কৃষকরা সেসব ধান কাটার চেষ্টা করছেন। বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ ফলন হচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে ২০ থেকে ২২ মণ ফলন হতো। তানোরের কুঠিপাড়া গ্রামের চাষি ইদ্রিস আলী জানান, চার বিঘা জমিতে তিনি জিরাশাইল ধান চাষ করেছিলেন। দুই বিঘা জমির ধান কাটতে পেরেছেন। অবশিষ্ট দুই বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে।

জেলার গোদাগাড়ী, পুঠিয়া, দুর্গাপুর ও বাগমারা উপজেলার চাষিরা জানান, গত দুই বছর ধরে তারা অসময়ের বন্যা আর বৃষ্টির কারণে ঠিকমতো ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না।

তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, গত সোমবার শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিবনদীতে বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। চাষিরা চেষ্টা করছেন তলিয়ে যাওয়া ধান কেটে ঘরে তুলতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেবদুলাল ঢালি বলেন, শুধু রাজশাহী জেলা নয়, বরেন্দ্র অঞ্চলের নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জেও বৃষ্টি হয়েছে। এতে ফলন পাঁচ থেকে ১০ ভাগ কমতে পারে। তবে এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো ঘাটতি থাকবে না। খড়ের আশা ছেড়ে দিয়ে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেন তিনি।